স্বাধীনতা বাংলায় লেখা সাধারণ কোনো শব্দ নয়
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবি || রাইজিংবিডি.কম
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। গতকাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই দিবস আজও তরুণদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। শুধু একটি দিবস হিসেবে নয়, এর বর্ণচ্ছটায় বদলে যায় জীবনের গতিপথ, সাহস যোগায় নতুন শপথ নেওয়ার। এ কারণেই স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য এত বেশি। উত্তাল মার্চ নিয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আর তাদের ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।
স্বাধীনতা রক্ষায় তৎপর হওয়া জরুরি
দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫১ বছর পূর্ণ হয়েছে ২৬ মার্চ। স্বাধীনতা অর্জনের পর জনগণের মনে তৈরি হয় সমাজ নতুনভাবে গড়ে তোলার গভীর আকাঙ্ক্ষা। সেই সময় ভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক চর্চা প্রবর্তনের মাধ্যমে নাগরিকদের মনে সম্পূর্ণ নতুন চেতনা সৃষ্টি করা জরুরি। স্বাধীনতা লাভ করা একটি জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার। তবে স্বাধীনতা রক্ষায় অধিক সতর্ক, সচেতন এবং সৃষ্টিশীল হতে হয়।
স্বাধীনতা অর্জিত হলেই চিরস্থায়ী হয় না। তা যে কোনো সময় হরণ হতে পারে। তাই স্বাধীনতা অর্জনই মূল উদ্দেশ্য নয়। একে সমুন্নত রাখা একটি সার্বক্ষণিক কাজ। স্বাধীনতা অর্জনের পর তার নানামাত্রিক আবেদন ও দাবি ধারণ করতে না পারলে প্রকৃত স্বাধীনতা টিকে থাকে না; বরং স্বাধীনতার নামে একটা মোড়ক শুধু অবশিষ্ট থাকে। ভেতরে ভেতরে রাষ্ট্রের হৃদয় ও আত্মায় পরাধীনতার সব আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের তৎপর হতে হবে।
আঁখি আক্তার বন্যা, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ
স্বাধীনতা রক্ষা করাই হোক উদযাপনের মূলমন্ত্র
স্বাধীনতা মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা শুধু কোনোরকমে বেঁচে থাকার জন্য করা হয়নি। আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম, মুক্তি চেয়েছিলাম, মর্যাদা চেয়েছিলাম, সাম্য চেয়েছিলাম, ন্যায়বিচার চেয়েছিলাম। সেই স্বাধীনতার বয়সও ৫১ বছর!অর্ধ শতাব্দির স্বাধীন হওয়া একটি দেশ হিসেবে আমাদের অর্জন কতটুকু সেই প্রশ্ন ঘুরেফিরেই তো আসে। ১৯৭১ নিয়ে আমাদের গৌরব আছে, আমাদের গল্প আছে, কিন্তু ৭১ পরবর্তী গল্পগুলো খুব বেশি এগোতে পারছে না।
পরাধীন জাতি পশুর চেয়েও অধম। তাই স্বাধীনতা এত আনন্দের, এত গৌরবের। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণের সঞ্চার করুক। স্বাধীনতাকে রক্ষা করার শপথই হোক স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মূলমন্ত্র।
সাকিবুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
স্বাধীনতা মানে অস্তিত্বের অনুভূতি
স্বাধীনতা মানে নিজের অস্তিত্বের অনুভূতি, একই ভূখণ্ডে ভালোবাসার মানুষজনের সাথে পরম মমতায় থাকতে পারা, এদেশের মাটির গন্ধের সাথে নিজের অস্তিত্বকে খুঁজে পাওয়ার সূক্ষ্ম টান অনুভব করা। নিজেকে খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছে থেকেই আমরা লড়াই করে যাই নিজেদের ওপর হয়ে যাওয়া অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে। সরকার ও জনগণের সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা আমাদের সেই অস্তিত্ব গাথা বাংলাকে খুঁজে পাবো, যার জন্য বাংলার বীরত্বের শ্রেষ্ঠ অধ্যায়ের রচনা হয়েছে। তাই তো আমার মতো প্রত্যেকে আজও বারবার খুঁজে ফিরি চিরচেনা সেই আমার বাংলাকে।
নাজমুন নাহার সুপ্তি, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
স্বাধীনতার আহ্বান হোক তারুণ্যের অনুপ্রেরণা
‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন’। হ্যাঁ, সত্যিই আজ আমরা স্বাধীন। এই স্বাধীনতা বাঙালি জাতির বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্নের ফল। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের খুঁটি বোনা হয় ২৬ মার্চ এই মহান দিনে। যে স্বপ্ন নিয়ে আজকের এই দিনে মুক্তির ডাক দেওয়া হয়েছিল, আমরা কি তা উপলব্ধি করতে পেরেছি, নাকি ৫১ বছর পরও আমরা সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে বন্দি হয়ে স্বাধীনতার জয়গান গাই?
স্বাধীনতা রক্ষায় তারুণ্যের জাগরণ অনেক বেশি প্রয়োজন। আমাদের হতে হবে মুক্ত। কারণ স্বাধীনতা মানেই মুক্তি।
সাফা আক্তার নোলক, শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ
স্বাধীনতা বাংলা অক্ষরে লেখা সাধারণ শব্দ নয়
স্বাধীনতা বাংলা অক্ষরে লেখা কোনো সাধারণ শব্দ নয়, বিশ্বের বুকে সতন্ত্র দেশ ও জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় এই স্বাধীনতা শব্দটি। স্বাধীনতা শব্দটি যদিও আমাদের মতো নতুন প্রজন্মের কাছে খুবই গর্বের একটি বিষয় কিন্তু আমরা সহজেই যেই স্বাধীনতার স্বাদ নিচ্ছি, তার পেছনের ইতিহাসটা এত বেশি সহজতর ছিল না, যার ইতিহাসটা ছিল গায়ে কাটা ফোটার মতো, নিঃসঙ্গ বসে অশ্রুপাত করার মতো। বর্তমানে সেই স্বাধীনতার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি সহিংসতার অশুভ ছোবল, যা আমাদের দেশটাকে আরও পিছে নিয়ে যেতে চাইছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সবাই একতাবদ্ধ হয়ে এই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করা উচিত।
তৌছিফুর রহমান মনির, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হোক
স্বাধীনতা মানেই মুক্তি। কারো অধীনস্থ না হয়ে নিজের মতো করে পথচলা। বাংলাদেশের এ মুক্তির ৫১ বছর পূর্ণ, এখনো এক সাগর দুর্নীতি চারদিক। আমরা মধ্য আয়ের স্বীকৃতি পেলেও, এখনো তার প্রতিফলন ভালোভাবে ফলেনি। দেশ আরও সমৃদ্ধ হবে, শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে, সব নাগরিক সুশিক্ষার আওতায় এনে শিক্ষার মান এগিয়ে আসবে, বৈষম্য দূর হবে, দেশের অবকাঠামোর এক আমূল পরিবর্তন আসবে, এই প্রত্যাশা।
আবু সুফিয়ান সরকার শুভ, শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
মানুষের স্বাধীনতার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছর। দীর্ঘ এই সময়ে ইতিহাসের পাতায় আছে পাওয়া না পাওয়ার শত কথা। অতীতের সব দুঃখ কথা ভুলে আগামীর দিনে নতুন প্রত্যাশায় এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। প্রতিবছর গৌরবময় এ দিনটি পালন করতে গিয়ে আমাদের কর্তব্য হয়ে ওঠে স্বাধীনতার স্বপ্ন ও স্বাদ আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, জাতীয় জীবনে আমাদের অর্জন কতটুকু আর বিশ্বসভায় আমাদের অবস্থান কোথায় সেসব মিলিয়ে দেখা।
সাঈমা আক্তার, শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
সব নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত হোক
স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। আমরা বাঙালি জাতি। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হয় অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে। আর সেই কষ্টার্জিত স্বাধীনতার ৫১ অতিক্রম করছি। দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও দেশের সব নাগরিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেনি। অনেক মানুষ এখনো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। বর্তমান সমাজে ধনীরা আরও ধনী হয়ে চলেছে, কিন্তু গরিব, অসহায় মানুষের দারিদ্র্যের হার বেড়ে চলেছে। স্বাধীনতা দিবসে সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত হোক, এটাই কাম্য।
আবদুল্লাহ আল মামুন, শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
স্বাধীনতায় বাঙালির মুক্তি
স্বাধীনতা মানে মুক্তি। স্বাধীনতার ৫১ বছরপূর্তিতে আমি যেই মনের ভাবগুলো স্বাধীনভাবে লিখতে পারছি, এটাও স্বাধীনতারই অবদান। আজ থেকে ৫১ বছর আগেও আমরা পরাধীন ছিলাম, না ছিল অধিকার, না ছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘোষিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। সেই থেকেই শুরু হয় বাঙালির মুক্তির লড়াই, স্বাধীন হওয়ার লড়াই, মহান মুক্তিযুদ্ধ।
আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া। তাদের এই আত্মত্যাগকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও বিশ্বে একটি মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।
ইসরাত জাহান, শিক্ষার্থী, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ
স্বাধীনতার চেতনা হোক প্রতিদিন
স্বাধীনতার মাস যতটা জমকালোভাবে পালন করা হয়, বছরের অন্য সময়টায় ততটা স্বাধীনতার চেতনায় বলীয়ান না। এর মূলে রয়েছে আত্মকেন্দ্রিকতা এবং মূল্যবোধের অভাব। দেশের স্বাধীনতা উপলব্ধির জন্য প্রয়োজন দেশকে মন থেকে ভালোবাসা, দেশকে অনুভব করা। তাই দরকার মানুষের চিন্তাধারার আমূল পরিবর্তন। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে ধারণা দিতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে।
ফারাহ ফাইয়াজ কাজী, শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ
স্বাধীনতার জন্মদিন ২৬ মার্চ
২৬ মার্চ মানে বাঙালির আত্মপরিচয় গাথা ইতিহাস। শত সফলতা ও ব্যর্থতার পরেও স্বাধীনতার ৫১তম জন্মদিনে আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে এবং বুকে প্রগাঢ় দেশপ্রেম লালন করতে হবে। তরুণ প্রজন্মের দেশপ্রেমই পারে আগামীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অবদান রাখতে।
রবিন আহমেদ, শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
বাংলাদেশের গৌরবময় দিন ২৬ মার্চ
বাঙালির কাছে ২৬ মার্চ একটি অন্যতম দিন। অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কারণ এই দিনের জন্য বহু মানুষের ত্যাগ, আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা মিশ্রিত রয়েছে। ভেদাভেদ ভুলে আজকের দিনে এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নেই। যে বাংলায় ঘৃণার কোনো জায়গা থাকবে না, ভালোবাসাই হবে মানুষের একমাত্র ধর্ম।
আবদুল্লাহ মোমিন খান, শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ
/মাহি/