ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

তিশা স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে আমাকে বিয়ে করেছে : খন্দকার মুশতাক

শাহিন শুভ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২০:৩৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
তিশা স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে আমাকে বিয়ে করেছে : খন্দকার মুশতাক

খন্দকার মুশতাকের সঙ্গে তিশা

তিশা-মুশতাক গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত নাম। একুশে বইমেলায় মুশতাক তাদের মধ্যকার প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বইও প্রকাশ করেছেন। মেলা প্রাঙ্গণে এ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখিও হয়েছেন তিশা-মুশতাক। এ দিকে তিশার বাবা সাইফুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, তিশাকে জিম্মি করে বিয়েতে রাজি হতে বাধ্য করেছেন মুশতাক। এ নিয়ে মুগদা থানায় তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। থানায় অভিযোগ করার পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন সাইফুল। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, তাকে হুমকি দিয়েছেন খন্দকার মুশতাক আহমেদ। 

ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় তিশাকে বিয়ে করেন সেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ। তার বয়স বর্তমানে ৬০-এর বেশি। তিশার বাবার অভিযোগ, ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে তার মেয়ে তিশাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় মুশতাকের সহযোগীরা। এ নিয়ে অপহরণের মামলা হয়। তবে  তিশা আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানান, তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে এসেছেন। এরপরই মূলত তিশা মুশতাকের সঙ্গে ঢাকা চলে আসেন। সাইফুল ইসলামের অভিযোগের জবাব পেতে শাহিন শুভ মুখোমুখি হয়েছিলেন খন্দকার মুশতাক আহমেদের।

শুভ : তিশার বাবার দাবি- আপনি ব্ল্যাকমেইল করে তিশাকে আপনার কাছে রাখতে বাধ্য করছেন। এ প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য জানতে চাচ্ছি। 

মুশতাক : যখন তিশাকে বিয়ে করি, তখন তিশার বয়স সার্টিফিকেট অনুযায়ী ১৮ বছর ১ মাস। প্রকৃত বয়স হলো ১৯ বছর ১ মাস; তিশার বাবার ভাষ্যমতে। আর হাইকোর্টের নির্দেশে তার বয়স নির্ধারিত হয়েছে ১৯ বছর। তার মানে সে সম্পূর্ণ সাবালিকা এবং সে হাইকোর্ট ও কনসাল্ট কোর্টে বারিধারায় জবানবন্দি দিয়েছে- সে স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে আমাকে বিয়ে করেছে। কোনো জোর-জবরদস্তি করা হয়নি। 

শুভ : কিন্তু তিনি (তিশার বাবা) দাবি করেছেন, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে, জিম্মি করে কাবিননামাতে তিশার স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি যদি একটু পরিষ্কার করতেন।  

মুশতাক : তিশাকে আমি বিয়ে করেছি ২৫ মার্চ, আজ থেকে ১১ মাস আগে। তিশার বাবা প্রথম মামলা করেছে ২২ জুন। মামলা করার আগে ১৭ জুন, আমরা গুলশান থানায় একটা সাধারণ ডায়েরি করেছি যে, তিশার বাবা একটা মিথ্যা মামলা করতে পারে। হাইকোর্ট থেকে আমরা জামিন নিয়েছে। এরপর বারিধারায় কনসাল্ট কোর্টে তিশার জবানবন্দি নেওয়া হয়। এ ছাড়াও হাইকোর্টে তিশা এ প্রসঙ্গে জবানবন্দি দিয়েছে। তিশার বাবা এখন যে কথাগুলো বলছে, তাতে করে সে হাইকোর্টকে অবমাননা করছে। তিশা সাবালিকা। সে বলেছে, সে স্বেচ্ছায় সব কিছু করেছে। তিশার আব্বু ১১ মাস পরে এ ধরনের কথা কেন বলছে? এ বিষয়ে আমার উকিলের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কারণ বিষয়টি কোর্টে বিচারাধীন। তবে এটুকু আপনাকে আশ্বস্ত করে বলছি, আমরা মুসলিম শরিয়া ও দেশের আইন অনুযায়ী বিয়ে করেছি। 

শুভ : কিছু দিন আগে আপনাদের একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তিশাকে জোর করে কিছু একটা খাওয়ানো হচ্ছে দেখা গেছে। এ বিষয়ে কী বলবেন? 

মুশতাক : এই ভিডিওটা ভাইরাল কিছু দিন আগে হয়নি। ভিডিওটা গত মে মাসে সব পত্রিকাতে গিয়েছিল। ভিডিওটা আজকে সে (তিশার বাবা) নতুন করে সামনে নিয়ে আসছে। ভিডিওটা আমাদের বিয়ের ২ মাস পরের। তখন তো সবাই জানতো না যে আমাদের বিয়ে হয়েছে। ওই ভিডিওটা তিশার বাবা এখন পুঁজি করছে। সেখানে অশ্লীল কিছু নাই। তিশা আমার ওয়াইফ। হাসবেন্ড ওয়াইফের মধ্যে যে কোনো বিষয়ে একটু মনোমালিন্য হয়েছে, সে খেতে চায়নি, আমি খেতে বলেছি, তাকে পড়ালেখার কথা বলেছি- এসব আছে। 

শুভ : কিন্তু তিশার বাবার দাবি আপনি তিশাকে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলেন। 

মুশতাক : তিশার বাবা আমার নামে মামলা করেছে। শুরু থেকেই সে বলছে- তিশার বয়স ১৬ বছর। তিশা মিডিয়াতে এসে বলল, এখানে আইন-কানুন আছে। দেশটা তো আর বাতাসের উপর চলে না। আইন-কানুনের উপর চলে। হাইকোর্ট এবং ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ঢাকায় সে বারবার বলেছে- আমি সেচ্ছায় সজ্ঞানে বিয়ে করেছি। আমি যদি তিশাকে জোর করতাম তাহলে নিশ্চয়ই সে এসব কথা বলতো না। 

শুভ : তাহলে তিশার বাবা এ দাবি করছে কেন? তিনি বলছেন, তাকে আপনার কাছে ভয় দেখিয়ে রেখেছেন। যে কারণে তিশা কোথাও একলা বের হতে ভয় পাচ্ছে। 

মুশতাক : তিশার বাবা অনেক কিছুই বলেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। তিশাকে যদি আমি জোর করে রাখি তাহলে তিশা ৯৯৯-এ ফোন করতো। বাংলাদেশে আমাদের মতো ওপেন আর কেউ নেই। কারণ মিডিয়াতে আমরা এত গিয়েছি। আর মিডিয়াগুলোও আমাদের মাতামাতি করে নিয়ে গেছে। সেখানে তো তিশার কথা শুনেছেন। যদি জোর করে রাখতাম তাহলে সে মিডিয়াতে বলতো। সে তো বিভিন্ন জায়গায় তার বাবার বিরুদ্ধেও কথা বলেছে। 

শুভ : তিশার বাবা এও দাবি করেছে, তিশা খুব ভীতু প্রকৃতির মেয়ে। সামন্য জিনিসেও সে অনেক ভয় পায়। আপনার ভয়ে তিশা নাকি কিছু বলতে পারছে না? 

মুশতাক : তিশা খুব ভীতু আর উনি খুব সাহসী? উনার মেয়ের স্টেটমেন্ট দেখেন। উনার মেয়ে যথেষ্ট বোল্ড। আমি বলে দিচ্ছি, ভবিষ্যতে এগুলোর জবাব আরও সে (তিশা) দেবে। যেহেতু সে ভিক্টিম, সে এগুলো নিয়ে আরও কথা বলবে। তার বয়স ১৯ বছর। সে আমার বৈধ স্ত্রী। উনি (তিশার বাবা) যেটা করছেন সেটা ঠিক করছেন না। উনি এটা করতে পারেন না। উনি আমাদের লাইফ নষ্ট করতে চাচ্ছেন। উনার নামে ৫টা জিডি আছে থানায়। 

শুভ : বিয়ের এত দিন পরে কোন উদ্দেশ্যে তিশার বাবা এসব করছে বলে আপনি মনে করেন?

মুশতাক : সেটার কারণ উনি ভালো বলতে পারবেন। তবে আমাদের কথা হলো, উনি আসলে... আমি এসব কথা এখন বলতে চাই না। দেশে আইন-কানুন আছে। আগে আমি আমার উকিলের সাথে কথা বলি। উনি ১১ মাস পরে কেনো এসব নিয়ে কথা বলছে? উনি বলছে যে, এখন উনি মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করছে। কিন্তু উনিই উনার মেয়ের নামে ৩টা মামলা করেছে। মেয়ের কথা চিন্তা করে কি কেউ রেপ কেস করে? উনার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও। আমি ওখানে গিয়েছি, তিশা নিজ জিম্মায় আমার সাথে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু উনি উনার আত্মীয়স্বজন নিয়ে আমার কাছ থেকে তিশাকে ছিনিয়ে নিতে এসেছিল। তিশা তখন বলেছিল যে, তারা জোর করে তিশাকে নিয়ে যাচ্ছে। তখন ওখানে পুলিশ, সাংবাদিকসহ আরও অনেকেই ছিল। তারা যখন তিশাকে জিজ্ঞাসা করেছিল- তুমি কোথায় যাচ্ছ? তখন তিশা জোর গলায় বলেছে- আমি আমার স্বামীর সাথে যেতে চাই। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোর্টের নির্দেশ নিয়ে বলেছে- আপনারা এদের বাধা দিবেন না। তখন আমি তিশাকে নিয়ে ঢাকা চলে আসি। সব কিছুর ভিডিও আছে। ওর বাবা তো তখন ওখানেই উপস্থিত ছিল। ওর বাবাও তো হাইকোর্টে উপস্থিত ছিল। হাইকোর্টে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে- তাকে অপহরণ করা হয়েছে কিনা? সে কোর্টে সবার সামনে বলেছে- তাকে অপহরণ করা হয়নি। সে সেচ্ছায় বিয়ে করেছে আমাকে। 

শুভ : আপনাদের বিষয়টি তো দিনদিন জটিল হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি থামানোর জন্য আপনি কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন? 

মুশতাক : আমি খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ। তিশার বাবা মানে আমারও বাবা। আমি কোথাও তাকে নিয়ে অশ্লীল ও অশোভন কথা বলিনি। তিনি আমার নামে অনেক অশোভন, অশ্লীল কথা বলছেন। কিন্তু আমি বরাবরই বলে আসছি তিনি আমার শ্রদ্ধেয়। আমি তাকে শ্রদ্ধার আসনে রাখতে চাই। আমি চেষ্টা করেছি উনাদের সাথে বোঝাপড়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে। তিশাও বিভিন্ন জায়গায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে। 

শুভ : সরাসরি তিশার পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বসেছিলেন কিনা? 

মুশতাক : সরাসরি তাদের সঙ্গে আমার বসা হয়নি। তবে বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। আর এ বিষয়ে তারা কি বলেছে এই মুহূর্তে আমি সেটা বলব না। আমি যা বলব তা প্রমাণসহ বলব। প্রমাণ ছাড়া আমি একটি কথাও বলব না। উনার সকল অভিযোগের জবাব আমি একটি একটি করে দেব। উনি মামলা করেছে ১৬ বছর বলে। উনি জন্মসনদ ও এসএসসির সার্টিফিকেট দিয়ে বয়স দিয়েছেন। উনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। উনি স্কুলে বয়স দিয়েছেন ২০০৫। কিন্তু বলছেন ২০০৪। এর মানে উনি বয়স ১ বছর কমিয়েছেন। তিনি অসত্য তথ্য দিয়েছেন। অসত্য তথ্য দিয়ে মামলা করেছেন।

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়