ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সঞ্চয়পত্রে সীমা, বন্ডে মুক্ত বিনিয়োগে বেশি লাভ

নাজমুল ইসলাম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪১, ১২ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ১৮:০১, ১২ জুলাই ২০২৫
সঞ্চয়পত্রে সীমা, বন্ডে মুক্ত বিনিয়োগে বেশি লাভ

নিরাপদ বিনিয়োগ বলতে দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চয়পত্রই ছিল সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমেছে, রয়েছে বিনিয়োগ সীমা ও নানা জটিলতা। তবে সঞ্চয়পত্রে নানা বেড়াজাল থাকলেও সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড।

বিল ও বন্ডে সবার জন্য সীমাহীন এবং একক বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। সঞ্চয়পত্রের চেয়েও রিটার্ন বেশি পাওয়া যাচ্ছে এ খাতে, সেই সঙ্গে রয়েছে নিরাপদ বিনিয়োগ। ফলে বিল ও বন্ড আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরো পড়ুন:

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রে সরকারকে তুলনামূলক বেশি সুদ দিতে হয়। যা বাজেটের ওপর চাপ বাড়ে। এর চেয়ে বাজারভিত্তিক হারে অর্থ সংগ্রহ করতে পারলে সরকারি দায় কমে।এছাড়া বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফও সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ ব্যবস্থাকে আরো বাজারমুখী করার পরামর্শ দিয়ে আসছে।

অন্যদিকে, সঞ্চয়পত্রের টাকা অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় বা অলস খাতে চলে যায়। ট্রেজারি বন্ড ও বিলের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারি বেশি এবং তারল্যও থাকে। যা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য রক্ষা করবে। এসব কারণে সরকার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে বিপরীত দিকে বন্ড ও বিলে বিনিয়োগ করতে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তবে বিল ও বন্ডে মুনাফার হার আরো বাড়ালে এগুলো দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠত বলে মনে করছেন তারা।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, “সঞ্চয়পত্র দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয় হলেও, সঞ্চয়পত্রে সরকারকে তুলনামূলক বেশি সুদ দিতে হয়। অন্যদিকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের রিটার্ন বেশি হলে এগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।”

তার মতে, শেয়ারবাজারের মতো যারা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে চায়, আয় করতে চায় তাদের জন্য সঞ্চয়পত্রের চেয়ে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ভালো বিকল্প হতে পারে।

সঞ্চয়পত্রে সুদ কমেছে
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের পর থেকে ধাপে ধাপে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমিয়ে আনা হয়। বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৮১ থেকে ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ, তিন মাস পর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১০ দশমিক ৬৫ থেকে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ পর্যন্ত, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ৯ দশমিক ৮৪ থেকে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ৯ দশমিক ৭৪ থেকে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। যা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে (সাড়ে ৭ লাখ টাকা) বিনিয়োগকারীদের জন্য। সাড়ে ৭ লাখ টাকার উপরে বিনিয়োগ করলে মুনাহার হার আর কম। গত জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ছিল ১০ দশমিক ১১ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এদিকে, সরকার বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। শেয়ারবাজার থেকেও ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে।

ট্রেজারি বিল ও বন্ড কী?
ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ড হচ্ছে সরকারের ইস্যু করা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র। এগুলোর মাধ্যমে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহ করে। ট্রেজারি বিল সাধারণত ৯১ দিন, ১৮২ দিন ও ৩৬৪ দিনের হয়। ট্রেজারি বন্ড হয় ২, ৫, ১০, ১৫, ২০ বছর মেয়াদি। এই বন্ড ও বিল আগে মূলত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য ছিল।তবে বর্তমানে সাধারণ মানুষও অনলাইনে ট্রেজারি বন্ড ও বিল কিনতে পারেন।

সঞ্চয়পত্র বনাম ট্রেজারি বিল-বন্ডের মুনাফা:
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রের সর্বনিম্ন সুদহার হবে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

গত ৭ জুলাই ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ।১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলে সুদহার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশের বেশি। এছাড়া ২-২০ বছরের ট্রেজারি বন্ডে সুদহার ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ।

এর আগে গত ১৬ জুন ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার দাঁড়ায় ১২ দশমিক ১০ শতাংশ। ১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলে সুদহার ছিল ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ।ওইদিন ট্রেজারি বন্ড ৫-২০ বছর সুদহার ছিল ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুবিধা
সঞ্চয়পত্রের মতো বিনিয়োগের নির্দিষ্ট সীমা নেই। চাইলে এককভাবে কয়েক কোটি টাকাও বিনিয়োগ করা যায়। সরকার নিজেই এগুলোর গ্যারান্টার। ফলে ডিফল্টের সুযোগ নেই। কর রেয়াতের সুবিধা, আবগারি শুল্ক থেকে অব্যাহতির সুযোগ রয়েছে।

ঢাকা/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়