ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সৈকতে ভেসে আসছে টন টন প্লাস্টিক বর্জ্য, মরছে কচ্ছপ

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১০, ১২ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
সৈকতে ভেসে আসছে টন টন প্লাস্টিক বর্জ্য, মরছে কচ্ছপ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসছে প্লাস্টিক বর্জ্য, বোতল ও ছেঁড়া জাল। এ সব বর্জ্যে আটকা পড়ে মারা গেছে ২০টির বেশি সামুদ্রিক কচ্ছপ। আর শতাধিক কচ্ছপকে উদ্ধার করে সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সব বর্জ্য পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার উপকূলে এসেছে। আর বর্জ্যের আঘাতে আহত জলজপ্রাণীগুলোকে বাঁচাতে সরকারের কোনো দপ্তরই এগিয়ে আসেনি বলে জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।

রোববার (১২ জুলাই) সকাল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট। এখানে সাগরের পানিতে ভেসে আসছে নানা প্রকার প্লাস্টিক বর্জ্য, বোতল ও মাছ শিকারের ছেড়া জাল। যা ঢেউয়ের আঘাতে আটকা পড়ছে উপকূলের বালিয়াড়িতে। আর বর্জ্য নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করে দিয়েছে সৈকত এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা গেছে, এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে বস্তায় ভর্তি করছেন। আর বস্তাভর্তি করে তা গাড়ি যোগে নিয়ে যাচ্ছে বাসা-বাড়িতে। পরে তা ভাঙাড়ির দোকানে বিক্রি করবেন।  

একই অবস্থা সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত সৈকতের সর্বত্র। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের আঘাতে মারা পড়ছে সামুদ্রিক কচ্ছপ। পরে যা সৈকতে ভেসে আসছে। আর এগুলো খাবার জন্য সৈকতে অপেক্ষায় রয়েছে কুকুর ও কাকের দল। তবে আহত কচ্ছপকে পুনরায় সাগরে অবমুক্ত করছেন কেউ কেউ।

কলাতলী সৈকতে প্লাস্টিক সংগ্রহকারী নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘‘সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত এসব বর্জ্য উঠে আসছে।’’

কলাতলী আদর্শ গ্রামের যুবক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “শনিবার রাত ১২টা থেকে কক্সবাজার উপকূলে বর্জ্য ভেসে আসতে শুরু করেছে। এখন সকাল থেকে তা স্থানীয়রা সংগ্রহ করছেন।”

সুগন্ধা পয়েন্টের ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, ‘‘আজ সকালে দেখেছি সৈকতে ৫-৬টা কাছিম পড়ে আছে। এরমধ্যে একটি কাছিম মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। সাগরের বড় বড় যেসব জাহাজ আছে, এসব জাহাজ থেকে এই বর্জ্যগুলো ফেলার কারণে তা কক্সবাজার উপকূলে এসে পরিবেশটা নষ্ট করে দিচ্ছে।’’

মেরিন ড্রাইভ সড়কের মোড় এলাকার হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বর্জ্য আর মৃত কাছিমে পুরো এলাকা দুর্গন্ধে পরিণত হয়েছে। সৈকতের এই অবস্থা আমরা আগে কোনো দিন দেখিনি।’’

কলাতলী সৈকতে মাছ শিকার করছেন শহরের বাহারছড়া এলাকার জেলে জসিম উদ্দিন (৫৫)। তিনি বলেন, ‘‘ছোট বেলা থেকে সৈকতে মাছ শিকার করছি। কিন্তু সৈকতে এই ধরণের বিপর্যয় আগে দেখিনি।’’ 

সৈকতে বর্জ্য দেখে ১০ জন শ্রমিক নিয়ে তা পরিষ্কার করছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্লাস্টিক ব্যাংক বাংলাদেশ।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মো. সাকির আলম বলেন, ‘‘বর্জ্যের মধ্যে বিভিন্ন মদের বোতল, বড় বড় প্লাস্টিক রয়েছে। এগুলো দেখে মনে হয়েছে তা বাংলাদেশের নয়। বিশেষ করে আরেকটি তথ্য দিচ্ছি, যে প্লাস্টিকগুলো পাচ্ছি, তা মিয়ানমারের কিছু অংশ থেকে আসা।’’ 

সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী যে দেশগুলো রয়েছে, এই দেশগুলো থেকে প্রতিবছর ২৬ টন বর্জ্য আমাদের সাগরে চলে আসে বলে জানান তিনি।

পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সৈকতে বর্জ্য আসার ব্যাপারে সরকারের সব দপ্তরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেউ আসেননি।

তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকে বার বার চেষ্টা করছিলাম প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে। সৈকতে ভেসে আসা অনেকগুলো কাছিমের পা কেটে গেছে, এগুলো একটু চিকিৎসা দিয়ে সাগরে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কাউকে পাইনি।’’

তিনি জানান, সৈকতে সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত শনিবার (১১ জুলাই) রাত ১২টা থেকে রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেভ দ্যা নেচারের সদস্যরা শতাধিক কচ্ছপকে পুনরায় সাগরে অবমুক্ত করেছেন। এ সময় আহত কমপক্ষে ২০টি কচ্ছপকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

সৈকতের প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে ৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য ভেসে এসেছে বলে ধারণা করছে প্লাস্টিক ব্যাংক বাংলাদেশ সংগঠনটি। 

 

ঢাকা/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়