চট্টগ্রাম বন্দরে অবৈধ পণ্যের চালান আটক করায় কাস্টমস কর্মকর্তাকে হত্যার চেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম
হামলার শিকার রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান ও ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় প্রাইভেট কার থামিয়ে দুই কাস্টমস কর্মকর্তার ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় সন্দেহ তৈরী হয়েছে। অবৈধ পপি বীজ, ঘন চিনি, বিদেশি সিগারেট, প্রসাধন পণ্য খালাসে বাধা দেওয়ার কারণেই এ হামলা হতে পারে বলে ধারণা করছেন কাস্টমস কর্মকর্তা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সম্প্রতি প্রায় ৪০ কোটি টাকার অবৈধ পণ্যের দুটি বড় চালান আটকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন হামলার শিকার কাস্টমস কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। এতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ক্ষুব্ধ হয় তার ওপর। একই ঘটনায় আগেও একাধিকবার ফোনে হুমকি পেয়েছিলেন এই কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. বদরুল আরেফিন ভূঁইয়া। তারা একটি প্রাইভেট কারে ভিন্ন একটি দপ্তরে দাপ্তরিক কাজ শেষ করে নিজেদের কার্যালয়ে ফিরছিলেন। এ সময় তিনজন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে এসে তাদের গাড়ি থামিয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গাড়ির গ্লাস ভেঙে কর্মকর্তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। দুর্বৃত্তরা ‘গুলি কর, গুলি কর’ বলে চিৎকার করেন। তবে, গাড়ির চালক গতি বাড়িয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে সক্ষম হওয়ায় কর্মকর্তারা প্রাণে রক্ষা পান।
হামলার শিকার রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, সম্প্রতি তারা একাধিক রাজস্ব জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটন করেন এবং মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা কোটি কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ অবৈধ পণ্যের চালান আটক করেন। এসব চালান আটকের ঘটনায় একাধিকবার ফোনে হুমকি পেয়েছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা। হুমকি পাওয়ার পর থানায় জিডিও করেছিলেন বলে জানান আসাদুজ্জামান।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মো. তারেক মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি বন্দরে আমদানি নিষিদ্ধ পপি বীজ ও ঘন চিনির বড় চালান আটক করা হয়। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা অবৈধ প্রসাধনীর চালান আটকের পর এসব অবৈধ পণ্যের আমদানির সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের টার্গেট হন কাস্টমস কর্মকর্তারা। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা কাস্টমস কর্মকর্তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।
এদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রায় ১০ কোটি টাকার নিষিদ্ধ পপি বীজ ও ঘন চিনি জব্দ করা হয়। মে মাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকার নিষিদ্ধ সিগারেট আটক হয়। মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা বিপুল প্রসাধনীও আটক হয়। এসব চালান আটক হওয়ার পর কর্মকর্তারা টেলিফোনে হুমকি পান।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদ বলেছেন, আমরা সবগুলো বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করছি। দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
ওসি জানান, পপি বীজ, ঘন চিনি, প্রসাধনী ও সিগারেট আমদানির সাথে যে চক্র জড়িত, তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ, অবৈধ পণ্যের চালান আমদানি-সংক্রান্ত নথি এবং ফোনে দেওয়া হুমকির তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। শিগগির হামলাকারীরা শনাক্ত হবে।
ঢাকা/রেজাউল/রফিক