ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

ছেলেকে বাঁচাতে বাবার আকুতি

জাহিদুল হক চন্দন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২৩:৪২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ছেলেকে বাঁচাতে বাবার আকুতি

আল নাফি

আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি আল নাফির বয়স তিন বছর পূর্ণ হবে। বাবা-মায়ের আশা ঘটা করে একমাত্র ছেলের জন্মদিন পালন করবেন। জন্মদিন পালনের আনন্দে ছেলে বেলুন ফুলিয়ে খেলবে, ছুটে বেড়াবে ঘরময়। কেক কেটে মজা করে খাবে, আদরভরা দুষ্টুমিতে ভরিয়ে দেবে সবার মন।

তবে তাদের এসব আশার আলো ঝড়ো ঝাপটায় নিভিয়ে দিতে চায় ছেলের অসুস্থতা। বিছানায় শুয়ে মৃত‌্যুকে ফাঁকি দিতে লড়াই করে চলেছে ছোট্ট নাফি।

জন্মগতভাবে নাফির হার্টে তিনটি ছিদ্র। রক্তনালীতে ব্লক ও একটি বাল্ব নেই। সম্প্রতি এসব ভয়াবহ রোগ ধরা পড়েছে। অপারেশন ছাড়া ফুলের মতো শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভন না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আল নাফির বাবা মো. মামুন মিয়া ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ করেন। মানিকগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি এলাকায় তার প্রতিষ্ঠান। বাড়ি পশ্চিম দাশড়া মাছ বাজার এলাকায়। ভিডিও এডিটিং করে মানিকগঞ্জ শহরে খুব বেশি উপার্জন করতে পারেন না তিনি। বলতে গেলে কোনোমতে সংসারটাই চলছে। 

তাই ছেলের অপারেশনের জন‌্য ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা জোগাড় করতে নিতান্ত অসহায় হয়ে পড়েছেন হতভাগ‌্য বাবা। আত্মীয় পরিজনের মধ‌্যেও এমন কেউ নেই যে তাকে এত টাকা সহায়তা করতে পারবেন। 

তাই ছোট্ট ছেলেটির শেষ পরিণতি ভেবে দুচোখের কোন ভিজে ওঠে অসহায় বাবার। আত্মসম্মানের ভয় ঝেড়ে ফেলে ছেলেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে হাত পেতেছেন। ছেলের জীবন বাঁচাতে মিনতি জানিয়েছেন।

মো. মামুন মিয়া বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবর মাসের দিকে নাফির ঠান্ডার সমস্যা দেখা দেয়। নভেম্বরের দিকে ডাক্তার দেখানো হয়। সেসময় চিকিৎসক একটি ইকো পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ইকো পরীক্ষার সিরিয়াল দেই। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ইকো পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার হার্টে জন্মগতভাবে তিনটি ছিদ্র, রক্তনালীতে ব্লক ও একটি বাল্ব নেই বলে জানান চিকিৎসকরা।’ 

এ কথা বলার পর নীরবে দুচোখ ছলছল করে ওঠে তার। কণ্ঠ যেনো রুদ্ধ হয়ে আসতে থাকে। কেঁপে ওঠা ঠোঁটে কথা বেরুতে চায় না। একটু সামলে নিয়ে তিনি আবার কথা বলেন।

মামুন বলেন, ‘দুই তিন দিন পরে মেডিনোভা থেকে পরীক্ষা করাই। একই প্রতিবেদন আসে। দ্রুত অপারেশন না করলে নাফিকে বাঁচানো যাবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। অপারেশনের ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ হবে। এতো টাকা কোথায় পাব? বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে অনেক ধার-দেনা করতে হয়েছে।’

আল নাফির মা অরুনী আক্তার প্রিয়া বলেন, ‘আমার ছেলেটার জন্মদিন সামনেই। খুব আশা ছিল জন্মদিন পালন করব। কিন্তু তা আর হবে না! ছেলেটি আমার জীবন-মৃত‌্যুর কঠিন বিষয় কিছুই জানে না। ওর সারা শরীর কেমন যেনো কালো হয়ে গেছে। যে ছেলে সারাদিন ছোটাছুটি করে বাড়ি মাতিয়ে রাখতো, সে এখন বিছানায়। একজন মায়ের জীবনে এর চেয়ে কষ্টের আর কী আছে?

একথা বলার পর নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না নাফির মা। অবরুদ্ধ কষ্টগুলো ফোঁটায় ফোঁটায় দুগাল বেয়ে ঝরে পড়তে থাকে। ছেলেকে হারানোর আশঙ্কায় মায়ের অন্তরের সে হাহাকার প্রকাশের বুঝি আর কোনো ভাষা নেই।

মামুন মিয়ার সহকর্মী রিফাত হোসেন বলেন, ‘মামুন ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ করে কোন রকমে সংসার চালান। তার একমাত্র ছেলেটি রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সে পাগলপ্রায়। অপারেশনের জন‌্য ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার দরকার। এ টাকা যোগান দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। সমাজের হৃদয়বান ব‌্যক্তিরা এগিয়ে এলে হয়তো ফুলের মতো শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হবে।’

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস.এম. ফেরদৌস বলেন, ‘এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ছেলেটির চিকিৎসার জন‌্য আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।’
এদিকে ছেলের চিকিৎসা ব‌্যায় নির্বাহ করতে সমাজের সবার কাছে সাহায‌্য প্রার্থনা করেছেন মামুন মিয়া। কেউ সহযোগীতা করতে চাইলে তার ব‌্যক্তিগত ০১৮৭২৬৪৩৯৭৯ এই নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

মানিকগঞ্জ/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়