ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বর্জ্যে ভুগছে টাঙ্গাইল শহরবাসী

কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ৩ মে ২০২৪  
বর্জ্যে ভুগছে টাঙ্গাইল শহরবাসী

টাঙ্গাইল শহরের প্রবেশপথ টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের রাবনা বাইপাসে ভাগাড়। ছবি: রাইজিংবিডি

টাঙ্গাইল শহরের দুটি প্রবেশ পথ রাবনা বাইপাস ও বেবীস্ট্যান্ড এলাকায় ময়লার ভাগাড়। দীর্ঘদিন ধরে খোলা স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় এলাকার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকিতে রয়েছে। দুর্গন্ধে স্থানীয় মানুষ ও পথচারীরা বিপাকে আছেন। আধুনিকবর্জ্য ব্যবস্থাপনার জোরালো দাবি থাকলেও এখনও তা তৈরি করতে পারেনি পৌরসভা।

১৮৮৭ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় টাঙ্গাইল পৌরসভা। ১৮টি ওয়ার্ডে ২৯ দশমিক ৪৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌরসভায় দুই লাখেরও বেশি লোকের বাস। মোট ভোটার এক লাখ ৪০ হাজার ২৩১ জন। বিশালায়তনের এ পৌরসভায় ১৩৭ বছরেও গড়ে ওঠেনি আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান। নেই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে শহরের রাবনা বাইপাস এলাকায় রাস্তার পাশে ময়লার স্তুপ। শহরের ময়লাগুলো পৌরসভার ভ্যানে করে খোলাভাবে এনে ফেলা হচ্ছে। ফেলে রাখা ময়লার ভাগাড়ের পাশ দিয়ে জেলার উত্তরের ৬ উপজেলার মানুষ শহরে নিয়মিত যাতায়াত করেন। যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা দুর্গন্ধসহ্য করতে না পেরে নাকে কাপড় চেপে যাতায়াত করে থাকেন। পথচারীরা এ এলাকায় এক মিনিটের জন্যও দাঁড়ায় না।

ময়লার ভাগাড়ে পড়ে আছে গরু-শুকরের মরদেহ। দক্ষিণ দিক থেকে শহরের প্রবেশ মুখ বেবীস্ট্যান্ডের পাশে ময়লা ফেলা হচ্ছে। টাঙ্গাইলের নাগরপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ কাগরামীসড়কে যাতায়াত করে থাকেন। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি এমএম আলী কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ পথেই চলাচল করেন।

দুর্গন্ধে আশপাশের বসতি ও দোকানদারদের যাচ্ছে তাই অবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘরে থাকা রান্না ও খাওয়া কিছুই তৃপ্তিসহকারে খেতে পারেন না। পৌর কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানানো হলেও লাভ হয়নি।

স্কুলছাত্র মাহিম, অনিক, খায়রুল, হাশিমসহ অনেকেই জানান, এখান দিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসার সময় দুর্গন্ধে পেট ফুলে যায়। বাতাসে দুর্গন্ধ বাড়িতে চলে আসে। এখানে ময়লা না ফেলার অুনরোধ করেও কোসো সুফল তারা দেখতে পায়নি।

রাবনা বাইপাস এলাকার ব্যবসায়ী সরোয়ার হোসেন জানান, ময়লার ভাগাড় থাকায় দোকানে গ্রাহক আসতে চায় না। ১২ মাসই দোকানের খাবারের মাছি বসে-দুর্গন্ধে দোকানদারি করা খুব কষ্টের। তবুও পেটের দায়ে দুর্গন্ধের সাথে থাকতে হচ্ছে।  

তাপস দাশ নামের অটোরিকশাচালক জানান, তিনি এ সড়কেই গাড়ি চালান। দুর্গন্ধে অবস্থা ভয়াবহ। যাত্রীরা উঠতে চায় না। মজিবর নামের এক যাত্রী জানান, শহরে প্রবেশের মূল রাস্তায় এমন ভাগাড় সত্যি অশোভন। হিরা মিয়া জানান, এ সড়কে চলাচলের সময় তার নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়।

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, টাঙ্গাইল পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। রাবনাবাইপাস এলাকা এবং বেবীস্ট্যান্ড এলাকায় যেভাবে বর্জ্য ডাম্পিং করা হচ্ছে-তাতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শহরের প্রবেশ পথে বর্জ্য ফেলার কারণে জীব বৈচিত্র্যসহ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এসব স্থানে ডাম্পিং না করে পৌরসভার নিজস্ব জায়গায় ডাম্পিং করার দাবি জানান তিনি।

তিনি মনে করেন, পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার্থে আইনি প্রয়োগও দরকার। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করে স্বাস্থ্যবান্ধব করতে পৌরসভাকেই মূল ভূমিকা নিতে হবে।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রফেসর ডক্টর সাইফুল্লাহ বলেন, উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলার কারণে দুর্গন্ধ ও রোগজীবাণু ছড়ায়। ময়লার ভাগাড় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানকার মাটি উর্বরতা হারাচ্ছে। অন্যদিকে প্লাস্টিক বর্জ্য নালায় ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজাউদ্দিন তালুকদার বলেন, খোলা ময়লা-আবর্জনা থেকে রোগজীবাণু বাতাসের মাধ্যমে মানুষ ও পাখ-পাখালির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসের বিভিন্ন জটিল রোগ হতে পারে। বায়ু দূষণের কারণে এলার্জি এবং অ্যাজমার সমস্যা প্রকট হচ্ছে। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। বাতাসে ভারি ধাতু ছড়িয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করছে। ফলে লিভার-কিডনির রোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, খোলা জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে মানুষের অসুবিধা হয়। জায়গা সংকটে দীর্ঘদিনেও শহরে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হয়নি। পৌরসভার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে জায়গা চাওয়া হয়েছে। জায়গা পেলে দ্রুত আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, শহরে একটি আধুনিক কসাইখানা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা খুবই প্রয়োজন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কমপক্ষে এক একর জায়গা দরকার। জায়গাটি নির্ধারণে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিষয়টির সমাধান হবে এবং শহরবাসী একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

/এসবি/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়