ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বিশ্বের ২৫ দেশে যাচ্ছে কুমিল্লার কচু ও লতি

আবদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১১, ১৮ জুন ২০২১   আপডেট: ১২:১২, ১৮ জুন ২০২১
বিশ্বের ২৫ দেশে যাচ্ছে কুমিল্লার কচু ও লতি

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার লতি

দেশ পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে কুমিল্লার বরুড়ায় উৎপাদিত পানি কচু ও কচুর লতি। এখান থেকে প্রতিবছর প্রায় এক হাজার টন পানি কচু ও কচুর লতি রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ২৫টিরও বেশি দেশে।

ইতোমধ্যে কচু আর লতির মাধ্যমে বিদেশে পরিচিত হয়ে উঠেছে বরুড়া উপজেলার নাম। তবে সম্ভাবনাময় এই কচু ও লতিতে এখনো উদাসিন কৃষি বিভাগ। বরুড়া উপজেলার যারা এ দু’টি কৃষি পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করছেন, তাদের সঙ্গে স্থানীয় কৃষি বিভাগের এখনো কোন যোগাযোগই হয়নি।

শুধু তা-ই নয়, কচু ও লতি রপ্তানির তথ্য নিয়ে কৃষি বিভাগ এবং রপ্তানিকারকদের দেওয়া তথ্যে চরম গড়মিল পাওয়া গেছে। কৃষি বিভাগ কচু ও লতি রপ্তানির যে তথ্য দিয়েছে, তার পুরোটাই অনুমান নির্ভর।

কচু ও লতি রপ্তানি প্রসঙ্গে বরুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলার মোট আড়াইশ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কচু ও লতির চাষ হচ্ছে। প্রতি হেষ্টর জমিতে প্রায় ২৫ টন পর্যন্ত লতি উৎপাদিত হয়। বরুড়ায় উৎপাদিত পানি কচু ও লতি সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২টি দেশে যাচ্ছে এসব লতি ও কচু। মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ যাচ্ছে বিদেশে। গত ৩-৪ বছর ধরে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে এই লতি ও কচু রপ্তানি হচ্ছে।

তবে এ বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ অমিল পাওয়া গেছে রপ্তানিকারকদের দেওয়া তথ্যে।  

চিটাগং ফ্রেশ ফ্রুটস এন্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি চিটাগং ফুডস ও ভেজিটেবলের স্বত্বাধিকারী মো.ইসমাইল চৌধুরী হানিফ বলেন, আমরা ১৯৯৫ সাল থেকে বরুড়ার পানি কচু ও লতি রপ্তানি করছি। ২০১০ সালের পর থেকে ব্যাপক হারে রপ্তানি হচ্ছে এবং প্রতি বছরই বিদেশে এ দু’টি সবজির চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে ২৫টির বেশি দেশে যাচ্ছে।  

এই ব্যবসায়ী থেকে পাওয়া গত ৬ বছরের রপ্তানির একটি তালিকা থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বরুড়ায় উৎপাদিত কচু ও লতি রপ্তানি করেছেন ৯৩০ টন। এর মধ্যে পানি কচু ৪৮০ টন এবং লতি ৪৫০ টন। ২০১৬ সালে মোট রপ্তানি হয়েছে ৯৪৫ টন। এর মধ্যে পানি কচু ৪৭০ টন এবং লতি ৪৭৫ টন।  ২০১৭ সালে মোট রপ্তানি হয়েছে ৯৩৫ টন। এর মধ্যে পানি কচু ৪৬৫ টন এবং লতি ৪৭০ টন। ২০১৮ সালে মোট রপ্তানি হয়েছে ৯৪৫ টন। এর মধ্যে পানি কচু ৪৭০ টন এবং লতি ৪৭৫ টন। ২০১৯ সালে মোট রপ্তানি হয়েছে ৯৬৫ টন। এর মধ্যে পানি কচু ৪৮৫ টন এবং লতি ৪৮০ টন এবং সর্বশেষ ২০২০ সালে মোট রপ্তানি হয়েছে ৯৭৫ টন। এর মধ্যে পানি কচু ৪৯০ টন এবং লতি ৪৮৫ টন।

এদিকে, ২০১৫ সালে ৯৩০ টন কচু ও লতি রপ্তানি থেকে পাওয়া গেছে ১৪ লাখ ৮৮ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ৯৪৫ টন কচু ও লতি রপ্তানি থেকে পাওয়া গেছে ১৬ লাখ ৬ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ৯৩৫ টন কচু ও লতি রপ্তানি থেকে পাওয়া গেছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি। ২০১৮ সালে ৯৪৫ টন কচু ও লতি রপ্তানি থেকে পাওয়া গেছে ১৭ লাখ এক হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৪ কোটি ২৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে ৯৬৫ টন কচু ও লতি রপ্তানি থেকে পাওয়া গেছে ১৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৬ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর ২০২০ সালে ৯৭৫ টন কচু ও লতি রপ্তানি থেকে পাওয়া গেছে ১৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।     

ইসমাইল চৌধুরী হানিফ বলেন, অনেক বছর ধরে আমরা এসব সবজি রপ্তানি করলেও কুমিল্লার কৃষি বিভাগ থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমরা চাই বিষমুক্ত ও ভালো মানের সবজি। কৃষি বিভাগ যদি উদ্যোগ নিতে পারে তাহলে আমরা কৃষক পর্যায় থেকে পণ্য কিনতে আগ্রহী। এতে আমাদের কোন সমস্যা নেই।  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা চেষ্টা করছি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে সরাসরি কৃষকদের সম্পর্ক তৈরি করতে। এতে করে রপ্তানিকারকরা যদি কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কিনেন, তাহলে কৃষকরা অনেক বেশি লাভবান হবেন।

কুমিল্লা/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়