ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩১ ১৪৩১

স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে সবজির দাম

নরসিংদী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৯, ৩১ অক্টোবর ২০২১  
স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে সবজির দাম

সবজির উৎপাদনের জন্য খ্যাত নরসিংদী। এখন এ জেলারই বিভিন্ন হাট-বাজারে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে সবজির দাম। ফলে শ্রমজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে সবজি কেনা এখন ‘বিলাসিতার’ মতো হয়ে উঠেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন সবজি এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। বাজারে চাহিদা অনুসারে পর্যাপ্ত সবজির উৎপাদন ও সরবরাহ না থাকায় সবজির দাম কমছে না। 

ভোক্তাদের দাবি, বাজারে শাক-সবজির যেমন চাহিদা তেমন জোগান রয়েছে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা ইচ্ছা অনুযায়ী দাম বাড়াচ্ছেন। 

কৃষকরা জানান, পাইকারি বাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে জিম্মি হওয়ার কারনে বাজারে তারা সবজির সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না। তবে খুচরা বাজারে ভোক্তারা কিন্তু ঠিকই চড়া দামে সবজি কিনছেন। 

নরসিংদীর বাজারে পেঁপে ও পুইশাক ছাড়া অধিকাংশ সবজির দামই এখন ৬০ টাকার বেশি। এখানকার বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। অথচ এক থেকে দেড় মাস আগেও ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে প্রায় সব ধরনের সবজি পাওয়া যেত।

নরসিংদীর সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় শিবপুর, বেলাব, মনোহরদী ও রায়পুরা উপজেলায়। এ সব উপজেলার কৃষকরা তাদের উৎপাদিক মৌসুমী সবজিসহ বেগুন, করলা, শসা, বরবটি, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, মরিচ, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক, ডাঁটাশাক, কচু, আলু, ঢেঁড়স, পেঁপে, মূলা, বাধাকপি, ফুলকপিসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করেন। তারা উৎপাদিত এসব সবজি বেলাব উপজেলার বারৈচা ও নারায়ণপুর, রায়পুরা উপজেলার জঙ্গি শিবপুর, মরজাল, শিবপুর উপজেলার শিবপুর, পালপাড়া, যোশর ও সৃষ্টিগড় কোন্দারপাড়া পাইকারি বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন।

ভরা মৌসুমে পাইকারি ক্রেতারা স্থানীয় বাজার থেকে প্রতিদিন শাক-সবজি কিনে রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানের সরবরাহ করেন।

নরসিংদীর শাক-সবজি এসব জেলার মানুষের চাহিদার প্রায় ৪০ ভাগই পূরণ করে। তবে এখন এ জেলার মানুষ সবজি কিনতে হচ্ছে চড়া মূল্যে। 

সম্প্রতি নরসিংদীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা দেখে, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ টাকা দরে, প্রতি কেজি বেগুণ ৮০ থেকে ৯০ টাকা, প্রতি কেজি টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।

এছাড়া করলা প্রতি কেজি ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায়, কাকরোল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, চাল কুমডা প্রতি পিস ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, লাউ আকার বেধে প্রতি পিস ৫০ থেকে ৮০ টাকা, আকার বেধে মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিস ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচুরছড়া প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 
অন্যদিকে চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, লতি প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচু প্রতি পিস ৩০ থেকে ৫০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লেবু প্রতি হালি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাচাকলা প্রতি হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লালশাক প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও ধনেপাতা প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। 

নরসিংদীর বটতলা বাজারে সবজি কিনতে আসা কাউসার আহম্মেদ নামে এক চাকরিজীবী বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে সবজির দাম বাড়ছে। বিক্রেতারা নানা অজুহাতে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী শাক-সবজির দাম বাড়াচ্ছেন। এতে ক্রেতাদের বেশি টাকা দিয়ে সবজি কিনতে হচ্ছে। এর ফলে স্থির বেতন দিয়ে দ্রব্যমূল্যের বাজারে খরচ মেঠাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

নরসিংদীর ভেলানগর বাজারে সবজি ক্রেতা রিকশা চালক নোয়াব আলী বলেন, ‘সারা দিন রিকশা চালিয়ে যে টাকা পাই তা দিয়ে সবজি কেনাই কষ্টকর হয়ে পড়ছে।’

একই বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, ‘আমি ৫ বছর ধরে এই বাজারে সবজি বিক্রি করছি। কিন্তু এ বছর সবজির সংকট একটু বেশিই। আমরা পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে পরিবহন খরচ যোগকরে কিছুটা লাভ রেখে খুচরা বাজারে ভোক্তাদের কাছে সবজি বিক্রি করছি। তিন হাত বদলে খুচরা বাজারে সবজির দাম একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে।’

রায়পুরা উপজেলার হরিপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা সামসুউদ্দিন বলেন, ‘আমরা খুচরা বিক্রেতা। পাইকারের কাছ থেকে সবজি বেশি দামে কিনলে আমাদেরও বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’

একই উপজেলার হাসনাবাদ বাজারের সবজি ব্যবসায়ী ইদ্রিস মিয়া জানান, ‘চলতি কৃষকরা প্রয়োজনীয় সবজির ফলন ফলাতে পারে নাই। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে সবজির কিছুটা সংকট। আর এ সুযোগ নিচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। এ মুহূর্তে নরসিংদীর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ৫ থেকে ৬টি সবজি ছাড়া সব সবজি আসছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে।’

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইদুর রহমান জানান, ‘চলতি রবি মৌসুমে এ জেলায় ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। তবে শীতের সবজি বাজারে এলেই দাম কিছুটা কমে যাবে।’ 

মাহমুদ/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়