ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

ফরিদপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ২ মে ২০২২  
আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

ফরিদপুরের সালথায় পুলিশের কাছ থেকে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার মামলায় তিন নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোমবার (২ মে) আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

রোববার (১ মে) রাতে উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে রহিমা আক্তার, চাঁদনী বেগম, শারমিন আক্তার এবং সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। সবাই খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। এ সময় সংঘর্ষে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা ১৫ বস্তা ভাঙা ইট এবং ঢাল সড়কিসহ বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।

ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) সুমিনুর রহমান জানিয়েছেন, পুলিশের ওপর হামলার মামলার আসামি তারা মিয়াকে রোববার দুপুরে খারদিয়া থেকে গ্রেপ্তার করেন এসআই মো. নাজমুল ও এএসআই মো. লিয়াকত হোসেন। এ সময় ১৮-২০ জন নারী পুলিশের ওপর হামলা করেন। তারা দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে জাপটে ধরে আলাদা করে ফেলেন। এ সুযোগে পালিয়ে যায় তারা মিয়া। সে চারটি মামলার আসামি। এর মধ্যে একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে।

তিনি বলেন, ‘রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে তিন নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সবাইকে গত ২১ এপ্রিল দায়ের করা পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি দেখিয়ে সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।’

সোমবার সকাল ১০টার দিকে খারদিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খারদিয়ার ছয়আনি পাড়ায় শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। কোনো বাড়িতে কেউ নেই। ছয়আনি পাড়ার সব বাড়িতেই তালা ঝুলছে। পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে এ পাড়ার লোকজন ঘর বাড়িতে তালা দিয়ে পালিয়ে আছে বলে জানিয়েছেন আশাপাশের মহল্লার নারীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নারী জানান, যদুনন্দী ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়ার মধ্যে কয়েক বছর ধরে বিরোধ চলছে। রফিকুল ইসলামকে মদদ দেন খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের শ্যালক ইলিয়াস কাজী, যদুনন্দী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হুমাইন খা, মৃত সাত্তার মিয়ার দুই ছেলে টুলু মিয়া ও জাহিদ মিয়া। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর মিয়াকে মদদ দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুজ্জামান ওরফে টুকু ঠাকুর। এই দুই পক্ষের বিরোধের কারণে উত্তপ্ত হয়ে আছে যদুনন্দী ইউনিয়ন। তবে, সবচেয়ে বেশি অশান্ত হয়ে পড়েছে খারদিয়া এলাকা। তাদের ইন্ধনেই মূলত খারদিয়ায় মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষ হয়। এসব সংঘর্ষের কারণে হয়রানির শিকার হন গ্রামের সাধারণ মানুষ।

ইউপি চেয়ারম্যানকে আসামি করে হত্যা মামলা:
এদিকে, গত বুধবার সালথার যদুনন্দী ও বোয়ালমারী রূপপাত ইউনিয়ন সীমান্তে কুমার নদের সেতুর ওপর দুই পক্ষের সংঘর্ষে নান্নু ফকির (৬৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় তার ছেলে মাহফুজ ফকির বাদী হয়ে মামলা করেছেন। রোববার (১ মে) রাতে সালথা থানায় এ হত্যা মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৫০-৬০ জনকে। প্রধান আসামি করা হয়েছে পাশের বোয়ালমারী উপজেলার রূপপাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ওরফে সোনা মিয়াকে।

প্রসঙ্গত, যদুনন্দী এলাকার বাসিন্দা কামরুজ্জামান ওরফে কাইয়ুম মোল্লা সম্প্রতি রূপপাত বামন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। অন্য উপজেলার এক ব্যক্তি তার ইউনিয়নের একটি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হওয়ায় তা সুনজরে দেখেননি রূপপাতের ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। এই বিরোধের জেরে সংঘর্ষে নিহত হন কামরুজ্জমানের সমর্থক যদুনন্দী গ্রামের নান্নু ফকির। কামরুজ্জামান যদুনন্দী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সমর্থক। 

উজ্জ্বল/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়