ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

একসঙ্গে ৪ জনকে হারিয়ে শোকাচ্ছন্ন পরিবার

পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৪:১৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
একসঙ্গে ৪ জনকে হারিয়ে শোকাচ্ছন্ন পরিবার

মারা যাওয়া লিপী রানীর পরিবারে চলছে শোকের মাতম

সামনেই শারদীয় দুর্গোৎসব। আর কদিন পরেই আনন্দে মেতে উঠবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। আর এই আনন্দের মাত্র শুরু হয় মহালয়ার মধ্য দিয়ে। গত রোববার পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে তাই মহালয়া উপলক্ষে আয়োজিত ধর্মসভায় যোগ দিতে রওনা হন লিপী রানী (৩০)। আউলিয়া ঘাট থেকে একটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় নৌকাটি হঠাৎ দুলতে শুরু করে। শুরু হয় চিৎকার–চেঁচামেচি আর আর্তনাদ।  দেখতে দেখতে ডুবে যায় নৌকাটি। এতে নৌকায় থাকা যাত্রীদের অনেকেই সাঁতরে পাড়ে উঠে এলেও মৃত্যু হয় ৩৫ জনের।  এর মধ্যে লিপি রানীর পরিবারের রয়েছেন চারজন।

মারা যাওয়া লিপি রানীর বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙা ইউনিয়নের ছত্রশিকারপুর এলাকায়। পরিবারের মারা যাওয়া অন্যরা হলেন- লিপী রানীর ৪ বছর বয়সী ছেলে বিষ্ণু বর্মন,  কার্তিক বর্মনের স্ত্রী লক্ষী রানী (২৫) এবং রবিনের ভাতিজা তিন বছর বয়সী শিশু দীপঙ্কর বর্মন।
এদিকে একই পরিবারের চার জনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে লিপী রানীর পরিবারে। স্ত্রী-সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক রবিন। ছেলেকে হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন রবিনের ছোট ভাই বাবুল বর্মন।

বাবুল বর্মন বলেন, ‘আমার তিনবছর বয়সী ছেলে দীপঙ্কর বৌদিদের সঙ্গে মন্দিরে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কে জানতো সে লাশ হয়ে ফিরবে।’

নিহত লিপী রানীর স্বামী রবিন বর্মন বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানকে পাঠিয়েছিলাম মহালয়া অনুষ্ঠানে। কিন্তু নৌকাডুবিতে আমার সব শেষ হয়ে গেলো। আমি এখন একা হয়ে গেলাম।

রোববার দুপুরে শতাধিক যাত্রী নিয়ে করতোয় নদীতে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করে প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজন। সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে পুণরায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আরও ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এতে উদ্ধার হওয়া লাশের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫টি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপরপাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। রোববার দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা নৌকা যোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণ ক্ষমতার নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতার জানায় তীরে আসতে পারলেও নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়। মনে করা হচ্ছে স্রোতের কারণে অনেক মরদেহ পানিতে ভেসে যেতে পারে।

এদিকে, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

আবু নাঈম/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়