ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও বাবলা বন বধ্যভূমির ফটকে তালা

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৭, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২  
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও বাবলা বন বধ্যভূমির ফটকে তালা

বাবলা বন বধ্যভূমি।

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের দিনও বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজশাহীর বাবলা বন বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের ফটক তালাবদ্ধ ছিল। পরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাওয়া লোকজন প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন । 

এর আগে গত ২৫ নভেম্বর বাবলা বন গণহত্যা দিবসেও এখানে তালা লাগানো ছিল। সেদিন দেওয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন শহীদের স্বজন এবং বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা।

আরো পড়ুন:

আরো পড়ুন: এক রশিতে বাধা ছিল ১৭ শহিদের লাশ

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর ৩০ ডিসেম্বর রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে এই বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে একই রশিতে বাধা পাওয়া যায় ১৭ শহিদের লাশ। এই স্থানটি বাবলা বন বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত। 

মুক্তিযুদ্ধের গবেষকদের তথ্যমতে, পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিজয়ের আগে ২৫ নভেম্বর রাজশাহীর শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের গণকবর দেওয়া হয় বাবলা বনে। এই বধ্যভূমিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মীর আব্দুল কাইয়ুম, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নাজমুল হক সরকার, সরকারি কর্মকর্তা আবদুল হক সরকার, ব্যবসায়ী আজিজুল হক চৌধুরী, শামসুল ইসলাম ঝাটু, অ্যাডভোকেট সুরেশ, বীরেন সরকার, মকবুল হক চৌধুরী, নওরোজ দৌল্লাহ খান, আমিনুল হক, তৈয়ব আলী, আলাউদ্দিন চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহম্মদ মুক্তাসহ মোট ১৭ জনের লাশ পাওয়া যায়।

বধ্যভূমিটি দীর্ঘ দিন অনাদরেই পড়ে ছিল। ১৯৯৫ সালের ২৫ নভেম্বর শহিদদের স্মরণে একটি স্মৃতিফলক বসানো হয়। এর উদ্বোধন করেন শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী অধ্যাপক মাসতুরা খানম। সেদিন অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য এখানকার মাটি সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ওই স্মৃতিফলক স্থাপনের পরও কেটে যায় অনেক দিন। ২০২০ সালে বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ‘মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় বধ্যভূমি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। 
বধ্যভূমির জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ হলেও এখন কেউ সেটির দেখভাল করে না।

বুধবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও স্মৃতিসৌধের তালা খোলা হয়নি। সকালে জনমানব উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা প্রধান ফটকটি তালাবদ্ধ দেখেন। এসময় তারা এটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে কে আছে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। ফোন করা হয় সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকেও। কিন্তু তিনিও কিছু জানাতে পারেননি। পরে কাউন্সিলরের পরামর্শে প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ফেলা হয়। এরপর ভেতরে ঢুকে তারা শ্রদ্ধা জানান। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনও এই স্মৃতিসৌধে গিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

জনমানব উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও বধ্যভূমির ফটকে তালাবদ্ধ থাকাটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। এই লজ্জা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যারা এটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও ফটকে তালা থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডির রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহা. নাশির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শুধু নির্মাণ কাজটা করেছিলাম। তারপর এটি জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।’

কথা বলতে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরীও ফোন ধরেননি। তাই এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শিরিন সুলতানা/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়