ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

পাকুন্দিয়ায় শতবর্ষ পুরোনো শ্রমিকের হাট, মজুরি নিয়ে হতাশা

রুমন চক্রবর্তী, কিশোরগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ১২ মার্চ ২০২৩  
পাকুন্দিয়ায় শতবর্ষ পুরোনো শ্রমিকের হাট, মজুরি নিয়ে হতাশা

পাকুন্দিয়া উপজেলার সিনেমা হল মোড়ে প্রতিদিনই বসে শ্রমিকের হাট

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জড়ো হতে থাকে নানা বয়সী মানুষ। শুরু হয় সারা দিনের জন্য নিজেদের শ্রম বিক্রির অপেক্ষা। কাজ পেলে পরিবারের মুখে খাবার জোটে, না হলে অনাহার-অর্ধাহার। কিশোরগঞ্জে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পেশাহীন এ জনগোষ্ঠীর দেখা মিলবে বিভিন্ন বাজার কিংবা রাস্তার মোড়ে। দিনমজুররা যেখানে জড়ো হন, স্থানীয়ভাবে সে স্থানকে বলা হয় ‘কামলার হাট’বা ‘শ্রমিকের হাট।’

তবে শতবর্ষ পুরোনো এই হাটে এখন যেন হতাশা। বাড়তি শ্রম দিয়েও মিলছে না কাঙ্খিত পারিশ্রমিক। চাল-ডাল সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও বাড়েনি নিম্ন আয়ের মানুষের শ্রমের মূল্য। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে শ্রম বিক্রি করতে আসা মানুষগুলো সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতি মুহূর্তে।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সিনেমা হল মোড়ে প্রতিদিনই বসে শ্রমিকের হাট। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু হয় হাক-ডাক। ফজরের আযানের পরপরই শ্রমিকরা তাদের শ্রম বিক্রি করতে সেখানে জড়ো হন। প্রতিদিন শতশত শ্রমিক কিশোরগঞ্জ জেলা ছাড়াও নরসিংদী, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, শেরপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে শ্রম বিক্রি করতে আসেন। এসব শ্রমিকরা ধান রোপণ ও কাটা থেকে শুরু করে ক্ষেত-খামার এবং গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজ করে থাকেন।

পাকুন্দিয়া উপজেলায় আলু, সরিষা, ধান, ভুট্টা, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। তাই লোকজন দৈনিক চুক্তিতে এখান থেকে শ্রমিক নিয়ে যান।

শতবর্ষ পুরোনো শ্রমিকের এ হাটে বিভিন্ন কাজের ওপর নির্ভর করে শ্রমিক পাওয়া যায়। দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরিতে ভাড়ায় গিয়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা। বিভিন্ন কাজের ওপর নির্ভর করে শ্রমিক নির্বাচন করে তাদের সঙ্গে চুক্তি করেন শ্রমিক ভাড়াটিয়ারা। তবে হাটে আসা সব শ্রমিকই তাদের শ্রম বিক্রি করতে পারেন না। যারা পারেন না তারা তখন পরবর্তী দিনের অপেক্ষায় থাকেন।

হাট থেকে ভাড়া করে আনা শ্রমিকরা কাজ করছেন কৃষি মাঠে

ভোর থেকেই এই হাটে শ্রমিক ভাড়া করতে ঘুরছিলেন মো. ইমান আলী। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার পূর্বপুরুষরাও এ হাট থেকে শ্রমিক ভাড়া করে জমিতে চাষাবাদ করাতেন। আমার ২০ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করছি, সেখানে কাজ করার জন্য দুই জন শ্রমিক এখান থেকে নিতে এসেছি। প্রতিদিনই এ হাটটি ভোর থেকে শুরু হয়ে সকাল ৮টার মধ্যে শেষ হয়।’

এদিকে, বর্তমানে শ্রম বিক্রি করে নিজের চাহিদামত মূল্য না পেয়ে কষ্টে দিন কাটছে হাটে আসা শ্রমিকদের। তাদের দাবি, বর্তমানে যে হারে প্রতিটি দ্রব্যের দাম বাড়ছে সেই অনুপাতে শ্রমের মূল্য পাচ্ছেন না তারা। কাজের বিনিময়ে আগেও যা পেতেন এখনো তাই পাচ্ছেন। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে চলা খুব মুশকিল হয়ে পড়েছে।

মালেক, কাসেম, সিদ্দিক নামের কয়েকজ শ্রমিক বলেন, আমরা বছরের পর বছর ধরে এই হাটে আসি। বেশ ভালো বায়নাতেই আমরা প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করতাম। কিন্তু বর্তমান প্রতিটি পণ্যের যা দাম সে অনুযায়ী আমরা শ্রমের মজুরি পাই না। পরিবার নিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

হাটে শ্রম বিক্রি করতে আসা মো. কাসেমের বাড়ি নরসিংদী জেলার শিবপুরে। তিনি জানান, প্রতিদিনই ভোরে হাটে আসি। সারাদিন পাকুন্দিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যাই। যা আয় হয়, তা দিয়েই কোনো রকম সংসার চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ‘এতদিন তো টাইনা সংসার চালাইছি। কিন্তু অহন কি করবাম, সারাদিনে কাম কইরা পাই ৪০০ থেকে ৫০০ টেহা। খাইবাইম কি, আর রাখবাইম বা কি?’ 

এ বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক শাহ মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, ‘হাটে যারা যান তারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক। তাই তাদের জন্য সরকার নির্ধারিত কোনো মজুরি গেজেট নেই। তবে যদি কোনো শ্রমিক বা তার পরিবারের চিকিৎসাসহ সন্তানের লেখাপড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তাহলে আবেদনের প্রেক্ষিতে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে সহযোগিতা করা হবে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়