ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

ডায়েরিতে নিজের পরিচয় লিখেছেন ওই নারী সাংবাদিক

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৪, ৩ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৮:০৫, ৩ মার্চ ২০২৪
ডায়েরিতে নিজের পরিচয় লিখেছেন ওই নারী সাংবাদিক

অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুন

রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিনকজি কটেজ বহুতল ভবনে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৫ জনের মধ্যে নারী সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুনের লাশ এখনও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে তার নাম জানা যায় ‘বৃষ্টি খাতুন’।

অন্যদিকে, তিনি তার নাম ব্যবহার করতেন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। তার সহকর্মীরা এ নামে চিনতেন। নামের এই জটিলতার কারণে তার পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। এখন ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করা হবে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের মর্গে তার মরদেহ আছে।

ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। আহতদের চিকিৎসায় ১৭ সদস্যের যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে, ডা. শারফুদ্দিন তার একজন সদস্য।

আগুনে পুড়ে মেয়ের নিহতের খবর পেয়ে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় ছুটে আসেন বাবা শাবলুল আলম সবুজ শেখ। কিন্তু হাসপাতালে সহকর্মীদের শনাক্ত করা নাম ও বাবা সবুজের দাবি করা নামের মধ্যে মিল পাওয়া যায়নি। আবার বৃষ্টি খাতুন ও অভিশ্রুতি শাস্ত্রী দুটি নাম দুটি ধর্মের হয়ে যায়। এতে জটিলতার সৃষ্টি হয়।

ওই নারী সাংবাদিক কাজ করতেন অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে’। সম্প্রতি তিনি অন্য একটি নিউজপোর্টালে যোগ দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এবং তার চাকরি ক্ষেত্রে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে পরিচিত ছিলেন।

শনিবার (২ মার্চ) বৃষ্টির মা বিউটি বেগম তার মেয়ের ৭ম শ্রেণিতে পড়াকালে নিজ হাতে ডায়েরিতে লেখা জীবনবৃত্তান্ত উল্লেখ রয়েছে সেটি বের করে দেখান। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিকে আমি গর্ভে ধারণ করেছি। বৃষ্টি, ঝর্ণা ও বর্ষা তিনজনই আমার সন্তান।’

বৃষ্টি বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইসএসসি পাস করেন। পরে ইডেন মহিলা কলেজে ভর্তি হন। বিউটি বেগম মেয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন, প্রবেশপত্র সব বের করে সামনে দিলে দেখা যায়, প্রতিটিতে বৃষ্টি খাতুন, পিতা শাবলুল আলম সবুজ শেখ ও মাতা বিউটি বেগম লেখা আছে।

বৃষ্টি খাতুনের ডায়েরিতে লেখা আছে, ‘আমার নাম বৃষ্টি। আমি ৭ম শ্রেণীতে পড়ি। আমরা তিন বোন। আমি সবার বড়। আমার বয়স ১১ বছর। আমার অন্য দুটি বোনোর নাম ঝর্ণা, বর্ষা। আমার বাবার নাম শাবরুল আলম সবুজ। আমার মায়ের নাম শাহনাজ পারভীন (বিউটি খাতুন)। আমার স্কুলের নাম বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়। আমার বাড়ি বনগ্রাম। জেলা কুষ্টিয়া। থানা খোকসা। আমার স্কুলে ২০০ ছাত্র-ছাত্রী। এর মধ্যে আমাদের ক্লাসে ছাত্রী বেশি। আমাদের স্কুলে সুকুমার স্যঅর আমাকে খুব ভালোবাসেন।’

বিউটি বেগম বলেন, ‘মোবাইলে বৃষ্টির সঙ্গে তার শেষ কথা হয় (২৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে। বৃষ্টি জানায়, মিটিং শেষ করেছে এবং তার আরও কিছু কাজ বাকি আছে, বাসায় ফিরে কথা বলবে। এরপর তার ফোন আর আসেনি। পরের দিন আমার ননদের ছেলে রেজোয়ানকে মোবাইল ফোনে বৃষ্টির খোঁজ নিতে বলি এবং খোঁজ নিলে বৃষ্টির মৃত্যুর খবর পাই।’

বৃষ্টির খালাত বোন জানান, চার মাস আগে বৃষ্টি বাড়িতে আসলে নামাজ পড়াসহ সব কিছু স্বাভাবিক ছিল। বৃষ্টির বান্ধবী শারমিন আক্তার জানান, তিনি বৃষ্টির সঙ্গে ১০ বছর পড়ালেখা করেছেন। ইতোপূর্বে নামাজ-রোজা উভয়ই একসঙ্গে করেছেন।

গ্রামের ব্র্যাক স্কুলের শিক্ষিকা মিনা পারভিন জানান, বৃষ্টির মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকে খারাপ লাগছে। বৃষ্টি মেধাবী ছাত্রী ছিল। ছোটবেলা থেকে মেয়েটি শান্ত স্বভাবের ছিল।

বৃষ্টির বাড়ির সামনে পুলিশের চৌকি বসানো হয়েছে। সেখানে দায়িত্বরত খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আননুর যায়েদ বলেন, ‘এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বৃষ্টির লাশ আসলে পরিবার সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করব।’

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘বৃষ্টির মৃত্যু নিয়ে সাম্প্রদায়িক ঝামেলা হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ, বৃষ্টি এখানে জন্ম নিয়েছে। পরিবারসহ এলাকার লোকজন তার লাশের জন্য অপেক্ষা করছে। মরদেহ আসলে তার দাফন করা হবে।’

আর পড়ুন: সার্টিফিকেটে ‘বৃষ্টি খাতুন’, বায়োডাটায় ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ 

কাঞ্চন/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ