ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

ঈদবাজার

প্রচণ্ড ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই খুলনার বিপণিবিতানে 

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৭, ৭ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৬:৫৩, ৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রচণ্ড ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই খুলনার বিপণিবিতানে 

খুলনার ডাকবাংলো’র নিক্সন মার্কেট

আর মাত্র কয়েকদিন পর ঈদুল ফিতর। যে কারণে খুলনার ঈদের বাজার এখন সরগরম। চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। সাপ্তাহিক ছুটি শনিবার এবং রোববার (৭ এপ্রিল) লাইলাতুল কদরের ছুটির কারণে ভিড় দেখা গেছে খুলনার মধ্যবিত্তের বাজার হিসেবে পরিচিত ডাকবাংলো’র নিক্সন মার্কেটে। পছন্দের পোশাক কিনতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। তবে, এবার উচ্চবিত্তদের নিউমার্কেট এবং দামি শপিংমলগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের প্রতিটি মার্কেট ও বিপণিবিতানে ঈদের আমেজ। সবখানেই ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি। মার্কেটগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শহরের মানুষদের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চল থেকে ক্রেতারা আসছেন মার্কেটে। ইফতারের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে দোকানগুলোতে। বিশেষ করে কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বেশি। পাশাপাশি জুতা, কসমেটিকস, পাঞ্জাবি, প্যান্টের দোকানসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকানেও রয়েছে আলাদা ভিড়।

দোকানিরা জানান, এবারের ঈদে পাকিস্তানি ও ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের থ্রিপিস বেশি বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি থ্রিপিস সাড়ে ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা, ভারতীয় ব্র্যান্ড ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং ভারতীয় বুটিকসের পোশাক ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানি আগানূর থ্রিপিস, সাদাবাহার, মারিয়াবী ও ভারতের আলিয়া কাট, নায়রা কুর্তি ইত্যাদি।

খুলনা বিপণি কেন্দ্র দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মাসুম ও খুলনা শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান বলেন, এ বছর দেরিতে মার্কেট জমেছে। ভালো কেনাবেচার প্রত্যাশা করছেন তারা।

নগরীর ডাকবাংলো মোড় থেকে ভৈরব নদ, রেলস্টেশন থেকে সদর থানা পর্যন্ত এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় রয়েছে ১৭টি মার্কেট। দোকান রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। পুরো ডাকবাংলো এলাকাই মধ্যবিত্তের বাজার হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয় ডাকবাংলো নিক্সন মার্কেটে।

ডাকবাংলো এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। ফুটপাত ও সড়ক দখল করে নতুন দোকান বসানো হয়েছে। ফলে হাঁটার পথ সংকুচিত হয়ে গেছে। হেঁটে মার্কেটে প্রবেশ করতেই বেগ পেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। প্রতিটি দোকানই ক্রেতায় ঠাঁসা। ক্রেতা সামলাতে ব্যস্ত দোকানিরা কথা বলার ফুরসত পাচ্ছেন না।

পাঞ্জাবি বিতানের কর্মচারী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর ১২-১৫ রোজার পর থেকেই কেনাকাটা জমে ওঠে। কিন্তু এ বছর ২০-২২ রমজান পর্যন্ত তেমন ক্রেতা ছিল না। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ক্রেতা আসতে শুরু করেছে। চাঁদরাত পর্যন্ত বিক্রি হবে। বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছি।

বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা সুলতান হোসেন বাড়ির ছোটদের জন্য কাপড় কিনতে এসেছেন। ভিড় ও গরমে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। এ বছর পোশাকের দাম বাড়তি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ডাকবাংলো মোড়ের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখা গেছে উচ্চবিত্তের নিউমার্কেটে। সেখানে অধিকাংশ দোকান দেখা গেছে ক্রেতাশূন্য। নগরীর শিববাড়ি মোড়ের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমেও ক্রেতার উপস্থিতি ছিল কিছুটা কম।

নিউমার্কেটের খুলনা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সেলিম তারিক বলেন, গরমের কারণে দিনের বেলা ক্রেতা কম থাকে। রাতে ভিড় বাড়ে। তবে অন্যান্য বছর এ সময় ভিড় বেশি হলেও এ বছর ক্রেতা কিছুটা কম।

খুলনার নিউ মার্কেটে পোশাক কিনতে আসা নেসাউন নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বলেন, ঈদে সবাই পাকিস্তানি আগানূর থ্রিপিস বেশি নিচ্ছে। যেগুলোর দাম ২ হাজার, ৩ হাজার, ৪ হাজার টাকা। এর থেকে বেশি দামেও রয়েছে।

ফাতেমা’স ওয়ার্ল্ডের স্বত্বাধিকারী ফাতেমা আফরোজ বলেন, এবারের ঈদে মেয়েদের পাকিস্তানি আগানূর থ্রিপিসের প্রতি ঝোঁক একটু বেশি। এছাড়া, দেশি কিছু ব্র্যান্ড আছে যেগুলো ভালো চলছে। এবারের ঈদে বিক্রি ভালোই হচ্ছে। দিনের তুলনায় রাতে বিক্রি বেশি হয়। মধ্যরাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।

গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে আরামদায়ক পোশাকে নজর রাখছেন পুরুষরা। বিক্রেতারাও নিয়ে এসেছেন আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক। এক্ষেত্রে এবারের ঈদেও পুরুষের পছন্দ সুতির পাঞ্জাবি।

রেলওয়ে বিপণি কেন্দ্রের সানোয়ার পাঞ্জাবি ঘরের মালিক মোহাম্মদ শওকত আলী সানোয়ার বলেন, সুতির পাঞ্জাবি বেশি চলছে এবারের ঈদে। ইফতারির পর মার্কেটে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়।

বিএল কলেজ শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার আগেই খুলনা থেকে কেনাকাটা সেরে নিলাম। মার্কেটগুলোতে প্রচুর ভিড়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠছে। এজন্য দুপুরের সময় ভিড় কম থাকায় মার্কেটে গিয়েছিলাম। আমার নিজেরসহ পরিবারের জন্য কিছু কেনাকাটা করলাম। তুলনামূলক পোশাকের দাম এবারের ঈদে একটু বেশি। তবে ব্র্যান্ডের জুতাগুলোয় দাম ওইভাবে বাড়েনি।

হেলাল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়ে দোকানদারদের অমানবিক আচরণের স্বীকার হলাম। একটা পাঞ্জাবির কাপড় ১৮০০ টাকা দাম চাইলো, ৮০০ টাকা বলার পর বলে এমন দামে হবে না, চলে আসার সময় সেই ৮০০ টাকায় দিলো। তারা কাস্টমারকে জিম্মি করে ব্যবসা করছে। ভোক্তা অধিকারের উচিত বাজারে মোবাইল টিম রাখা।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়