ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

যাত্রীদের ‘গলা কাটছে’ মহাসড়কের পাশের রেস্তোরাঁগুলো

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ৫ মে ২০২৪   আপডেট: ১৯:৫৯, ৫ মে ২০২৪
যাত্রীদের ‘গলা কাটছে’ মহাসড়কের পাশের রেস্তোরাঁগুলো

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার ১০৫ কিলোমিটার অংশে নামে-বেনামে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁ।

বিভিন্ন সময়ে জরিমানা করার পরও অধিকাংশ রেস্তোরাঁ যাত্রীদের কাছে খাদ্যপণ্য বিক্রি করছে চড়া দামে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি ও পরিবেশনের অভিযোগ থাকলেও নেই কোনো প্রতিকার। আবার এসব হোটেল-রেস্তোরাঁর অধিকাংশের নেই পরিবেশ ছাড়পত্র।

এদিকে মহাসড়কের পাশে হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্য অবাধে বিভিন্ন স্থানে ফেলার কারণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে দুর্ভোগ। অর্ধশতাধিক গাড়ির চালক, যাত্রী ও পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

যাত্রী ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ রেস্তোরাঁর তুলনায় এখানে খাবারের দাম কয়েকগুণ বেশি হয়ে থাকে। মহাসড়কের পাশে অধিকাংশ রেস্তোরাঁতে কিছু অসাধু অতি মুনাফালোভী হোটেল ব্যবসায়ী যাত্রীদের কাছে বেশি দামে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি করছে। যদিও তারা গলা কাটা দাম নেওয়ার পরও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি ও পরিবেশনের অভিযোগ উঠেছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অর্ধশতাধিক রেস্তোরাঁয় বাস ও অন্যান্য পরিবহন যাত্রাবিরতি করে। যাত্রাবিরতির অধিকাংশ রেস্তোরাঁয় ১০ টাকার পরোটা ৩০ আর ১০ টাকার চা ৩০ টাকায় বিক্রি করা হয়। যদিও ভোক্তারা বলছেন, বেশি দামে খাবার বিক্রি ও নোংরা পরিবেশের জন্য একাধিক রেস্তোরাঁ মালিককে জরিমানা করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কাপ্তাই, সেন্টমার্টিন ও টেকনাফে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যাতায়াতকারী বিলাসবহুল বাস, প্রাইভেট গাড়ি ও মালবাহী ট্রাক কুমিল্লা হয়ে চলাচল করে। এসব বাহনের চালক ও যাত্রীরা দীর্ঘ পথের ক্লান্তি মেটাতে সামান্য বিশ্রাম ও খাবারের জন্য মহাসড়কের এ জেলার দাউদকান্দি, চান্দিনা, বুড়িচং, আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা হোটেল-রেস্তোরাঁয় স্বল্প সময়ের যাত্রাবিরতি করে থাকেন।

দূরপাল্লার এসব পরিবহন, বাস মালিক ও চালকদের সঙ্গে এসব রেস্তোরাঁয় যাত্রা বিরতির চুক্তি থাকে। বিরতিকালে চালক, সুপার ভাইজার ও হেলপারের খাবার ফ্রি দেওয়া হয়। থাকে তাদের কমিশনও। কমিশনের টাকা তুলতে চড়া দাম দিতে হয় যাত্রীদের।

তিশা পরিবহনের যাত্রী রাফি আহমেদ বলেন, যাত্রা বিরতির সময় অনেক রেস্তোরাঁয় বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করে। একটা পানির বোতল সঠিক মূল্য ২০ টাকা; অথচ তারা রাখে ৩০ টাকা, আবার অনেক পণ্যের মূল্য তালিকাও করে রাখে। অনেকে মূল্য তালিকা না দেখেই খাবার খায়। পরে বাধ্য হয়ে বেশি দাম দিতে হয়। কথা বললে তারা খারাপ আচরণ করেন। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা কোথায় অভিযোগ করবো?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা হোটেল মালিক সমিতির নেতা মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমি একটু ব্যস্ত আছি, পরে এ বিষয়ে কথা হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আছাদুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগ পেলে ও তদারকি করে নোংরা পরিবেশ ও মূল্য তালিকা না থাকার বিষয়ে জরিমানা করি। হাইওয়ের রেস্তোরাঁগুলো আমাদের নজরদারিতে রয়েছে।

কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, হোটেল-রেস্তোরাঁর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। কারও বিরুদ্ধে ছাড়পত্র না নিয়ে কিংবা নবায়ন না করে কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, হাইওয়ের পাশে যে রেস্টুরেন্টগুলো রয়েছে, সেগুলোতে নিম্নমানের খাবার বিক্রি হয়। আমরা এগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কাজ করবো। ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

রুবেল/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়