জাবিতে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া ভবনের কাজ শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বাধা
জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ছাড়া পুনরায় গাছ কেটে ভবনের নির্মাণ কাজ শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে চারুকলা বিভাগ।
এ লক্ষ্যে শনিবার (১৮ মে) সকালে নির্ধারিত জায়গার চারপাশে টিন দিয়ে ঘিরতে শুরু করলে প্রতিবাদ জানিয়ে কাজে বাধা দেন একদল শিক্ষার্থী। এসময় তারা ভবন নির্মাণের নির্ধারিত স্থান ঘিরে রাখার জন্য লাগানো টিনগুলো খুলে ফেলেন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ যখন উদ্যোগ নিয়েছে, ঠিক তখনই ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হলে তা প্রণয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কতটুকু জায়গা জুড়ে ভবন নির্মাণ হবে প্রকল্প পরিচালক তার কোনো হিসাব দিতে পারেননি। প্রথমদিকে বাস্কেটবল কোর্টের একটু অংশ ভবনের মধ্যে পড়বে বললেও লেকের ধার পর্যন্ত ভবন নির্মাণের জন্য ঘিরে ফেলা হচ্ছে। ফলে নির্ধারিত জায়গার বাইরে থাকা ঘন জঙ্গল ও গাছপালাগুলো কাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া নির্ধারিত স্থানের পাশেই রয়েছে একটি লেক। প্রতি বছর শীতে দেশ-বিদেশ থেকে অন্যান্য লেকের মতো এতেও অতিথি পাখি আসে। ওই স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবন নির্মাণ কাজের ব্যারিকেড দেওয়ার জন্য উত্তর পাশের পুরো খালি জায়গাটিতে লোহার খুঁটি স্থাপন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পূর্ব পাশ থেকে একটি অংশে টিন দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। তবে শনিবার সকালে শিক্ষার্থীরা টিনের বেড়াগুলো খুলে ফেলেছে। খুলে ফেলা টিনগুলো খুঁটির পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া পূর্ব পাশের টিন ও খুঁটি স্থাপনের জন্য যে স্থানটি পরিষ্কার করা হয়েছে তা একেবারেই লেক ঘেঁষে। এছাড়া ঘোর মধ্যে ঘন গাছপালা সমৃদ্ধ একটি জঙ্গলও রয়েছে।
কাজে বাধা দেয়ার সময় উপস্থিত নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগি সামিয়া বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই মাস্টারপ্ল্যানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। প্রকল্পের পরিচালককে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছি। কিন্তু তিনি তা করেননি। তাই আমরাও কাজে বাধা দিয়েছি। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না।’
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘আল-বেরুনী হলের এক্সটেনশনে এর আগেও প্রশাসন হল করার পাঁয়তারা করেছিল। আমরা তা রুখে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যত্রতত্র অপরিকল্পিত ভবন হওয়ায় গত তিন দশকে ২৮ শতাংশ জলাশয় এবং স্থলভূমি নাই হয়ে গেছে। এই জায়গায় প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ আছে। পাশের যে লেক আছে ,বড় ভবন হলে তা পরিযায়ী পাখির জন্য অনিরাপদ হবে। নতুন কলার এক্সটেনশন হলে এবং লেকচার থিয়েটার হলের কাজ শেষ হলে শ্রেণী কক্ষ সংকটের সুযোগ নেই। তাই মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া আমরা ভবন হতে দিবো না।’
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ময়েজউদ্দীন বলেন, ‘আমি শুনেছি শিক্ষার্থীরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো। আমাদের কাজ চলমান থাকবে।’
/আহসান/মেহেদী/