হাসনাত আবদুল্লাহ
আ.লীগের অর্থ কাঠামো ধ্বংস ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে
কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

হাসনাত আব্দুল্লাহ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, “কুমিল্লার অনেক উপজেলায় বিএনপিসহ অন্য দল চলে আওয়ামী লীগের টাকায়। এখনই সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আওয়ামী লীগের অর্থ কাঠামো ধ্বংস করে দিতে হবে। দলটির সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।”
শুক্রবার (১৬ মে) বিকেলে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত ‘জুলাই সমাবেশ’-এ সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ‘জুলাই ২৪ বিপ্লব’ স্মরণে আয়োজিত এ সমাবেশে রাজনৈতিক অনিয়ম, বিচারহীনতা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা, নির্বাচন ও সংস্কারসহ নানা ইস্যুতে বক্তব্য দেন তিনি।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠনের কথা থাকলেও মে মাস শেষের পথে-এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। কেন হয়নি, আমরা জানতে চাই। ড. আসিফ নজরুল স্যারের কাছে জবাব চাই। ছাত্ররা আপনাকে ভরসা করে, দয়া করে তাদের আস্থার প্রতিফলন ঘটান।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমরা চাই খুনিদের বিচার নিশ্চিত করেই নির্বাচন হোক। বিচার না হলে নির্বাচন অর্থহীন। আওয়ামী লীগ এমন একটি নির্বাচনী মাঠ তৈরি করেছে, যেখানে অন্য কেউ খেলতেই পারে না। এই মাঠ সংস্কার করতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব এসেছিল, প্রার্থীদের স্বশরীরে কাগজ জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করার। অথচ সেই প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছে। কেন? এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।”
সমাবেশের শেষ দিকে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় আসে, তারা কুমিল্লাকে আলাদা রাজ্যে রূপান্তর করবে। এটা তাদের বহুদিনের পুরোনো পরিকল্পনা। শেখ হাসিনা ও তার বাবার দীর্ঘদিনের দুঃস্বপ্ন ছিল কুমিল্লা।”
তিনি বলেন, “কুমিল্লা নামেই বিভাগ ঘোষণা করতে হবে। এই দাবিতে আমরা রাজপথে ছিলাম, থাকব।”
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমাদের ঐক্যে যদি ফাটল ধরে, তাহলে লাভবান হবে দুর্বৃত্তরা। কুমিল্লার স্বার্থে সব দলকে একসঙ্গে আসতে হবে।”
হাসনাত আব্দুল্লাহ আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, “আগামী ২৬ কর্মদিবসের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দিতে হবে, যেখানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকবে। না হলে আবার রাজপথে নামতে হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ব্যানার ব্যবহার করে তদবির বাণিজ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- এভাবে সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করলে আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করে তাদের চিহ্নিত করব।”
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন ‘ফেস দ্য পিপল’-এর সম্পাদক ও ‘জুলাইয়ের কণ্ঠস্বর’ সাইফুর সাগর। তিনি বলেন, “কুমিল্লায় এয়ারপোর্ট আছে, কিন্তু প্লেন নেই, রেললাইন আছে, ট্রেন নেই, উপদেষ্টা আছে, উন্নয়ন নেই।”
তিনি প্রশ্ন করেন, “যেসব শহীদরা জীবন দিলেন, তাদের পরিবার কেন আজও কাঁদছে? কেন বিচারের আশায় পথে পথে ঘুরছেন তারা?”
সমাবেশে ৩৮ জন শহীদের পরিবার এবং ৩০ জন আহত পরিবারের সদস্যকে সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বক্তব্য রাখেন শহীদদের স্বজন, রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং স্থানীয় সাংবাদিকরাও। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/রুবেল/মাসুদ