ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রতিটি দিন হোক নারীর জন্য নিরাপদ

হাসান মাহমুদ শুভ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৭, ৮ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১২:৫৩, ৮ মার্চ ২০২২
প্রতিটি দিন হোক নারীর জন্য নিরাপদ

আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীদের ওপর বৈষম্য, নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাদের জাগ্রত করাই নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে দেশের সরকারি-বেসরকারি সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের জয়জয়কার।

সর্ব ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে সমভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষাসহ সব সেক্টরে নারীদের অবদান ঈর্ষণীয়। তারপর ও কোথায় যেন ফাঁকফোকর থেকেই যাচ্ছে। প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নারী সমাজ। নারীদের সার্বিক চাওয়া-পাওয়া নিয়ে নারী শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছেন ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ শুভ। 

প্রতিটি দিন হোক নারীর জন্য নিরাপদ

৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দীর্ঘ ইতিহাস। ১৯১১ সাল থেকে এই দিনটি নারীর সমঅধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসলেও ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ এটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেন। 

আমাদের দেশেও বেশ ঘটা করে এই দিবসটি পালিত হয়। কিন্তু এই দিবসে যেভাবে নারীদের সম্মান ও মর্যাদার কথা বলা হয়, সেভাবে যদি সারাবছর তার প্রয়োগ ঘটতো, তবে  সমাজচিত্রটা হতো ভিন্ন। নারীদের প্রতি পদে পদে অসম্মান, অবমাননা ও বৈষম্যের শিকার হতে হতো না। দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে নারীরা এগিয়ে গেলেও আমাদের সমাজ এখনো পর্যন্ত এগোতে পারেনি। শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত সমাজ সর্বত্রই নারীর প্রতি সহিংসতা এখনো বিরাজমান। সমাজ তথা দেশের উন্নতি করতে চাইলে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও অংশগ্রহণ জরুরি। কারণ, নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের একক অংশগ্রহণে উন্নয়নের কথা কল্পনা করা যায় না। 

সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। নারীকে শুধু নারী নয়, মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে। বছরের একদিন নয় বরং বছরের সব দিন নারীকে মানুষ হিসেবে সম্মান প্রদর্শন করা উচিৎ। সচেতনতা গড়ে উঠুক পরিবার থেকেই। 

নিশাত তাসনিম রিফা, শিক্ষার্থী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 

সব ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

কবির ভাষায়, ‌‌‌‌‘‘নারী তুমি জয়ন্তীর জয়, তুমি চির অক্ষয়, তুমি বাংলার স্বাধীনতা, তুমি নও উদ্বাস্তু, তুমি লেখকের বিষয়বস্তু, তুমি প্রেমময়ী কবির কবিতার খাতা।’’রণক্ষেত্র থেকে প্রেম ক্ষেত্র, ইতিহাস থেকে সাহিত্য, মাতৃত্ব থেকে নেতৃত্ব, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অবদান মহিমান্বিত। কিন্তু পুঁজিবাদী সমাজে পরিবার থেকে সমাজ, শিক্ষা থেকে কর্মক্ষেত্র সর্বত্র নারীরা অবহেলিত, অবদমিত। নারীর বিশেষত্ব, নারীর ক্ষমতায়ন, বিশ্বজুড়ে নারীর লিঙ্গ সাম্যের উদ্দ্যেশে, জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ১৯৭৪ সালে।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কাছে হার মেনে অবদমনের বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে শ্বাসকষ্টে ভোগে নারীর নিরাপত্তা, নারীর অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর শিক্ষার হারের উন্নতি থাকলেও পারিবারিক, সামাজিক বাধা বিপত্তির মুখে কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে নারীরা। কর্মক্ষেত্রে উচ্চ পদস্থ পুরুষের দ্বারা যৌন হয়রানি, ধর্ষণের মতো হীন ঘটনা, মজুরির অসমতা, পরিবারের নারীকে ঘরমুখী করার প্রবণতা নারীর পায়ে পরিয়েছে লোহার শেকল। করেছে ঘরবন্দি। এসব কিছু থেকে উত্তরণের জন্য নারীকে অধিকার সচেতন, আত্মবিশ্বাসী, আত্মনির্ভরশীল এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া জরুরি। তার ক্ষমতার নেতৃত্ব, কর্মপ্রচেষ্টা দিয়ে সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া উচিত সমাজের জন্য একজন নারী ঠিক কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নারী একটা পরিবারের স্তম্ভ, একটা সমাজের ভিত্তি এবং একটি দেশের শক্তি।

শাহনাজ আক্তার, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা 

প্রজন্ম হোক সমতার

নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এবং নিরন্তর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সূচনা হয়েছিল নারী দিবসের। সেই থেকেই নারী সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় নিয়ে প্রতি বছর পালিত হচ্ছে বিশ্ব নারী দিবস।
গুহাবাসী মানবজীবন থেকেই সমাজ সভ্যতার চাকা পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নারী।এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের নারীরাও ঘরের গণ্ডি পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আপন মহিমায়। রাষ্ট্রপরিচালনা, প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান, বিনোদন সব মিলিয়ে এই অগ্রযাত্রায় নারীর অবিচ্ছেদ্য ভূমিকার রোল মডেল যেনো বাংলাদেশ।

একথাও সত্য যে, আজও নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আজও তারা প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতার, কর্ম ক্ষেত্রে বৈষম্যের, নির্মম ধর্ষণের। তবে, শত বাধা এবং ভয় উপেক্ষা করে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহসের সাথে কাজ করে যাচ্ছে বাংলার নারী সমাজ।

ফাতেমা জান্নাত শশি, এমবিবিএস, তৃতীয় বর্ষ, আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজ, নোয়াখালী 

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক 

জাতিসংঘ ১৯৮৪ সালে সব সদস্য রাষ্ট্রকে ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস পালনের আহ্বান জানালে বাংলাদেশ সরকারও সেই আহ্বানে সাড়া দেয়। সেই সময় থেকে বাংলাদেশেও আমরা প্রতিবছর দিবসটি উদযাপন করি। নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন চলে, সংবাদমাধ্যমে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়। কিন্তু উন্নত বিশ্ব ও বাংলাদেশের নারীর অবস্থার মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। এ দেশে নারীসমাজ আজও সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। ‘ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন সার্ভে ২০১১’ নামে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপের তথ্য হলো, দেশের ৮৭ শতাংশ বিবাহিত নারী আপন গৃহেই নির্যাতনের শিকার। 

৬৫ শতাংশ স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতন, ৩৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন, ৮২ শতাংশ মানসিক এবং ৫৩ শতাংশ স্বামীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অথচ সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক-মনস্তাত্ত্বিক বৈষম্য ও নিরাপত্তাহীনতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। আমাদের দেশের নারীরাও এ ব্যাপারে সচেতনতার মাধ্যমে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন-সুফিয়া কামালের স্বপ্ন সফল করবে, এটাই হোক সব নারীর অঙ্গীকার।

জান্নাতুল ফেরদৌস আঁখি, লোক প্রশাসন বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বৈষম্যের শিকল ভেঙে এগিয়ে চলছে নারী

নারী তুমি অনন্যা। তুমি শক্তি, তুমি বিজয়ী। এলিয়নর রুজভেল্ট বলেছিলেন, ‘নারী হচ্ছে টি ব্যাগের মতো। গরম জলে দেওয়ার আগে তুমি বুঝতে পারবে না সে কতটা শক্তিশালী।’

বৈষম্যেও শিকল ভেঙে এগিয়ে চলছে নারী অবিরত। সমাজের চিরায়ত প্রথার অবসান ঘটিয়ে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বমঞ্চে। একুশ শতকের আলোড়ন সৃষ্টিকারী অন্যতম শব্দ নারীর ক্ষমতায়ন। অনেকেই নারীর ক্ষমতায়ন শব্দটি শুনলেই আঁতকে ওঠে, কেউবা ভ্রু কুচকে নেয়। কিন্তু আদৌ কি তাই? বিষয়টি এমনও নয় যে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে অফিসের ব্যাগটি কাঁধে নিয়ে স্বামী সন্তান রেখে অফিসে চলে গেলো আর যাওয়ার সময় বলে গেলো এসে যেন সব ঠিকমতো পাই। নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে শিক্ষার মাধ্যমে মনুষত্ব জাগ্রত করে বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে পরিবার, সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা।

বিথী হোসাইন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

চুপ থাকতে নয়, কথা বলতে চাই

নারী-পুরুষের সমতার দিক থেকে বিশ্বের ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৫তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে। অনেকটাই এগিয়েছি আমরা। ‘নারীর অধিকার’ এখন একটা টপিক। এটাই কি যথেষ্ট? তবুও কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। 

নারী কি নিজের যোগ্যতায় মর্যাদা পাচ্ছেন?নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে? সম্পূর্ণ বাক্-স্বাধীনতা কি পাচ্ছেন?নারীর জন্য প্রতিটি স্থান, প্রতিটি সময়, প্রতিটি মুহূর্তকে নিরাপদ চাই। সর্বক্ষেত্রে যোগ্য মর্যাদা চাই। চুপ থাকতে নয়, কথা বলতে চাই।

আইনান ছালছাবিলা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়