ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

যবিপ্রবি চাকরিপ্রার্থীদের অপহরণের ঘটনায় মামলা

যবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৫:০১, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
যবিপ্রবি চাকরিপ্রার্থীদের অপহরণের ঘটনায় মামলা

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ‘লিফট অপারেটর’ পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা ১৭ চাকরিপ্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৫-৬ জনকে অজ্ঞাতনামা করে যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) এ মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী মো. আরাফাত হোসেন ইমন।

মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক বেলাল হোসেনকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাফি হাসান (২৪), গণিত বিভাগের রেদোয়ান হাসান রাফি (২০), পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের রায়হান রাব্বি (২৪), সিএসই বিভাগের মোহাম্মদ সোয়েব (২৪) ও পিইএসএস বিভাগের শিক্ষার্থী  মো. শাহিনুর (২৪)। তবে যবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও এজাহারে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে অপহরণের আলামত ঢাকতে সংশ্লিষ্ট শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের সিসি টিভি ফুটেজের হার্ডডিস্ক ছিনিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। এছাড়া অপহৃতরা হলে থাকলেও তাদের খুঁজে না পাওয়া ও সিসি টিভি ফুটেজের হার্ডডিস্ক ছিনতাই হওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ।

জানা যায়, সম্প্রতি লিফট অপারেটরের ১২টি পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আবেদনপত্র যাচাই–বাছাই শেষে ৩৮ প্রার্থীকে পরীক্ষার জন্যে গত বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ক্যাম্পাসে ডাকা হয়। সকাল ১০টা থেকে চাকরিপ্রার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত তাঁদের ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে খবর আসে প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ১৭ জনকে ক্যাম্পাসের শ.ম.র আবাসিক হলে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। পরে পুলিশ ক্যাম্পাসে পৌঁছালে বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি তদন্তের স্বার্থে সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক সংগ্রহ করতে গেলে সেটিও ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর সন্ধ্যায় আটকে রাখা প্রার্থীদের মধ্যে আরও পাঁচজনের পরীক্ষা নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৩৮ প্রার্থীর মধ্যে ২৬ জন শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে পেরেছিলেন।

এদিকে অপহরনের খবর পেয়ে বেলা ১২টার দিকে তল্লাশি চালিয়ে শ.ম.র হলের প্রাধ্যক্ষ অপহৃতদের উদ্ধার করতে না পারা, বিকাল সাড়ে ৩টায় ওই হল থেকেই অপহৃতদের মুক্তি এবং সিসি টিভির ফুটেজ ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সচেতন মহলে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।

মামলায় বাদী অভিযোগ করে বলেন, যবিপ্রবিতে লিফট অপারেটর পদে চাকরি পরীক্ষা দিতে শহীদ মসিয়ূর রহমান ছাত্র হলে বেলাল হোসেন, রাফি হাসান, রেদোয়ান হাসান রাফি,  রায়হান রাব্বি, মোহাম্মদ সোয়েব, মো. শাহিনুর ও অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জন সহযোগী চাকরিপ্রার্থীদের ধরে হলের ভিতরে নিয়ে আটকে রাখে। এ সময় হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড, এসএস পাইপ, হকিস্টিক ও লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরে চোখ বেঁধে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে নিয়ে ছেড়ে দেয় আসামীরা।

সিসি টিভি ফুটেজ ছিনতাইয়ের বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অপহৃতরা মুক্তি পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শ.ম.র হলের সিসি টিভির হার্ডডিস্ক ছিনতাই করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নেতাকর্মীরা এ ঘটনা ঘটে।

যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. মেহেদী হাসান বলেন,  একজন দুজন পরীক্ষার্থী হতো আলাদা বিষয় সেখানে একটি ছোট হল এ ১৭ জন পরীক্ষার্থী ছিলো। কিন্তু হল প্রভোস্ট সেখানে তাদের খুঁজে পাবেন না এটি হতেই পারে না।

হার্ডডিস্ক ছিনতাই এর বিষয়ে তিনি বলেন, অফিস টাইমে কেউ এতোজন কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সামনে হল প্রাধ্যক্ষের রুমে ঢুকে হার্ডডিস্ক চুরি করলো। কিন্তু কেউ কিছু জানলো না, এটি খুবই হাস্যকর। শুধু এই ঘটনা নয় হলের অগণিত অপকর্মের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ হল প্রাধ্যক্ষ দেননি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান হল প্রাধ্যক্ষ শ.ম.র হলকে একটি ক্যান্টনমেন্টে পরিণত করেছেন। যা ইচ্ছে করছেন। ওপেন দূর্নীতি করছেন, কথায় কথায় নিজেকে বড় মাস্তান, বড় ছাত্রলীগার পরিচয় দিয়ে শিক্ষার্থীদের হুমকী-ধামকী দেওয়াসহ খারাপ আচরণ করছেন। উনার অসংখ্য অপকর্মের প্রমাণ রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমি এ দুর্নীতিবাজ হল প্রাধ্যক্ষের অপসারণের আবেদন জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে শ.ম.র হল প্রাধ্যক্ষ ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সোহেল রানা এসব অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, এ ঘটনার সময় আমি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী ও শ.ম.র হলের প্রাধ্যক্ষ স্যার দাড়িয়ে কথা বলছিলাম। এর মধ্যে কেউ একজন কিছু একটা নিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। হল অফিসের কর্মচারিরা তাকে ধরতে পারেনি। এর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

এদিকে মামলার বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, যবিপ্রবিতে চাকরিপ্রার্থীদের অপহরণের ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার আসামীদের গ্রেফতার করতে ঘটনার দিন রাতেই অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু কাউকে আমরা গ্রেফতার করতে পারিনি। আসামীদের ধরতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

/সজিবুর/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়