ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের ভাবনায় বিজয় দিবস

হাসান মাহমুদ শুভ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৭, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩  
শিক্ষার্থীদের ভাবনায় বিজয় দিবস

দীর্ঘ এক পথ অতিক্রম করে আমরা পেয়েছি লাল সবুজে খচিত স্বাধীনতা। আমাদের বিজয় দিবস। বিশ্বের বুকে এনে দিয়েছে এক অনন্য পরিচয়। যা আমাদের গৌরব ও অহংকারের সঙ্গে বাঁচতে শিখিয়েছে। শিখিয়েছে কিভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শুধু ডিসেম্বর মাস এলেই আমাদের বিজয় দিবস নিয়ে মাতামাতির শেষ থাকে না। বিভিন্ন ধরনের উৎসব ও প্রোগ্রামের মাধ্যমে উৎযাপন করা হয়।

নিদিষ্ট দিবস কেন্দ্রীক না হয়ে সারা বছর বিভিন্ন শিক্ষা ও সংস্কৃতি উৎসবের মধ্যে দিয়ে আমাদের এই অর্জনকে রাঙিয়ে রাখতে পারি। যা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে উৎসাহিত করবে। বিজয়ের ৫৩ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ভাবনা তুলে ধরেছেন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ফিচার লেখক হাসান মাহমুদ শুভ।

বিজয়ের স্বাদে মুক্তি খোঁজে তারুণ্য

দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জিত হয় এ দেশের মহান বিজয়। আত্মত্যাগ, নানা বিসর্জন আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে পেয়েছি হায়েনা মুক্ত স্বদেশ। শত বছরের শত সংগ্রামের একটি বড় পাওয়া প্রিয় স্বাধীনতা, লাল সবুজের পতাকা। ইতোমধ্যে বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পেঁরিয়েছি আমরা। মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের মহান বার্তা বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। এটা তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করবে। একইভাবে মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী কাজ যেন কেউ না করি।

সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণহীন জীবন যাপনের যে সাম্য অধিকারের প্রত্যয়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা আত্মোৎসর্গ করেছে, সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমাদের দৃঢ় হতে হবে। যদি তা করতে ব্যর্থ হই, তবে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চর্চা থেকে দূরে সরে যাবে। তরুণ প্রজন্ম গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রয়োগে মুখিয়ে আছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, বৈষম্য আর বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি না দিতে পারলে বিজয়ের আনন্দ ফিকে হয়ে যাবে সম্ভাবনাময় এই প্রজন্মের কাছে। যা জাতির এগিয়ে যাওয়ার সামগ্রিক যাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে‌। বিজয়ের স্বাদ উপভোগ করার জন্য উন্মুখ তরণসহ সর্বস্থারের জনগণ।
(লেখক: শিক্ষার্থী, অনিল মো.মোমিন, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।)

বিজয় : এক পথিকের অর্জিত লক্ষ্য

প্রভাতের রক্তিম সূর্যের ন্যায় লাখো শহিদের রক্তের প্রতিদান স্বরূপ পেয়েছিলাম আমাদের বিজয়। আজও বিজয় দিবসের কথা উঠতেই সেই রক্তিম বসনের কথাই মনে পড়ে। বলা হয়ে থাকে, কোনো কিছু পেতে হলে, কোনো কিছু দিতে হয়। আমরাও দিয়েছি তবে একবার দুবার নয়, বারবার। আর যে কাজে ধারাবাহিকতা থাকে সেই কাজ সফল না হওয়ার সুযোগ নেই। শুরুটা ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর থেকে। পথিক তার যাত্রা শুরু করেছে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণের পথে, তা শেষ হয়েছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ে।

১৬ ডিসেম্বর দিনটিকে বাংলাদেশিরা বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে। বলা হয়, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা কঠিন। বিজয় অর্জনের পর অর্ধ শতাব্দী হয়ে গেল। এর মধ্য অনেক চড়াই উৎরাই গেছে।  সংকীর্ণ এই সময়ে সৃষ্টি হয়েছে পাওয়া না পাওয়ার অনেক গড়মিল। তবুও পথিকের এই অর্জিত বিজয়ে ধারা আমাদের বহমান রাখতে হবে। নতুন পথিক হয়ে দেশের কল্যাণে ঐক্যজোট হয়ে কাজ করতে হবে। দূর করতে হবে সব অপশক্তি আর অনিয়মের বেড়াজাল। উপড়ে ফেলতে হবে গণতন্ত্রের পথে আসা সব আগাছাকে। তবেই তো পথিকের যোগ্য উত্তরসুরি হওয়া যাবে।
(লেখক: হামিদা রহমান, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।)

বিজয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক

লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির নিকট এক মহামূল্যবান সম্পদ৷ বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি এদেশের সেই সূর্যসন্তানদের যারা নিজেদের প্রাণ ও সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা নামক স্বপ্ন ছিনিয়ে এনেছেন৷ 
শুধুমাত্র তাদের জন্যই আজ বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা গর্ববোধ করতে পারি। বিজয়ের আনন্দের সাথে মিশে আছে স্বজন হারানোর বেদনা৷ আমদের চোখে সামনে আজও ভেসে ওঠে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেই নৃশংসতার চিত্র৷ যারা নির্বিচারে এদেশের নিষ্পাপ মানুষকে হত্যা করেছে৷ আজও শুনতে পাই নির্যাতিত মা-বোনদের আত্মচিৎকার৷

তবুও দিন শেষে স্বান্ত্বনা পাই— আমরা স্বাধীন৷ আজ জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত।  এ বিজয় বারবার ফিরে আসুক বাংলাদেশের বুকে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক বাংলাদেশ৷ বিশ্ববাসী জেনে রাখুক, মা ও মাতৃভূমির স্বার্থে বাঙালি জাতি হাসিমুখে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে জানে।
(লেখক: ইমরান হোসাইন ইমন, শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।)

আসুন সাদা কে সাদা, কালোকে কালো বলি

২৫ মার্চের সেই ভয়াবহ কালো রাতের পর দীর্ঘ নয় মাস রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল বা ফসলের মাঠ তথা সবস্তরে ভীতিকর ও মৃত্যুময় মুহূর্ত ধরে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল বাঙালির কোমল হৃদয়কে। তখনই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯৩ হাজার রক্তচোষক পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ শহিদ এবং দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের কাঙ্ক্ষিত এই মহান স্বাধীনতা। এই মহান দিনটি সবার জন্য সমান গুরুত্ব নিয়ে আসলেও সেই কাঙ্খিত সমান সুযোগ-সুবিধা আজও নিশ্চিত হয়নি। কারণ আমরা এখনো ‘সাদা কে সাদা এবং কালোকে কালো’ বলতে শিখিনি । আমাদের উচিত এই  স্বাধীনতা দিবসের চেতনায়  উজ্জীবিত হয়ে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক বৈষম্য দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা এবং অন্যের অধিকারকে হরণ না করে নিজেদের স্বাধীনতা ভোগ করা।
(লেখক: ইউসুফ শরীফ, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।)

বাঙালির বিজয় দিবস যেন বিজয়ের চেতনায় অম্লান

মহান বিজয় দিবস বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, যে ডাকে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ শুরু করে, সেই ডাকের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে নিয়ে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পতাকা, গাইছে বিজয়ের গৌরবগাঁথা।  আমরা অনুপ্রাণিত হই আমাদের দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা স্মরণ করে। আজ আমরা এমন একটি দেশের নাগরিক, যে দেশের মানুষ ভাষার জন্য ও নিজের জন্মভূমির মুক্তির জন্য তারা প্রাণ দিতে পিছপা হয়নি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেশে জন্ম নিতে পেরে আমরা গর্বিত।

১৬ ডিসেম্বরের শিক্ষা হলো বিজয়কে ধরে রাখা। যে বিজয় লাখো জীবনের বিনিময়ে অর্জিত, সেটা ধরে রাখার কর্তব্য সবার। আমাদের সবার উচিত আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এবারের মহান বিজয় দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
(লেখক: পূজা পাল, শিক্ষার্থী, এমবিবিএস, চতুর্থ বর্ষ, চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ।)

গৌরবের হোক পথচলা

বন্দী দরজার শিকল ভেঙ্গে একটু স্বাধীনতার স্বাদ পেতে কে না চায়। সেদিন বাতাসে মানুষের হাহাকার, শ্বাস-প্রশ্বাসে রক্তের গন্ধ আর বাঙালীর আত্মত্যাগের ভাগ্যযুদ্ধ যেন আজ বিজয়ের সাক্ষী। সময়ের পরিক্রমায় বিষাদের হাওয়া হারিয়ে অনুভূতি ফিকে হয়ে যাচ্ছে আমাদের। রক্তের দামে শোষণ বঞ্ছনা থেকে মুক্তি পাওয়া দেশে স্বাধীনতার ৫৩ বছরে দাড়িয়েও প্রত্যাশার জায়গা আজ নড়বড়ে। উন্নয়নের জোয়ারে দেশের মানুষের শান্তি বিপরীত তালে কমছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ মুখ থুবড়ে পড়ছে। দূর্নীতির করাল গ্রাসে জাতির জীবন আজ দূর্বিষহ। তবুও হাজার বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ভবিষ্যতে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ পেতে আশাবাদী সবাই। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সৃজনশীলতার ছোঁয়ার সৃষ্টি হোক এক নন্দিত সমাজ, গৌরবের হোক পথচলা।
(লেখক: মিজবাহুল জান্নাত তারিন, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।)

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়