ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

অপরিকল্পিত উন্নয়ন বন্ধের দাবি জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের

জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৪, ৭ এপ্রিল ২০২৪  
অপরিকল্পিত উন্নয়ন বন্ধের দাবি জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের

এখানে নির্মিত হবে চারুকলা অনুষদ ভবন

মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ছাড়া অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট। শনিবার (৬ এপ্রিল) জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের দপ্তর সম্পাদক আহসান লাবিব স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ শিরোনামে ১৪৪৫ কোটি টাকার একটি বিশাল বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাবিধ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব ছিল। সেক্ষেত্রে, এই বরাদ্দকৃত অর্থ বিনিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যতখানি সদিচ্ছা ও সতর্কতার প্রয়োজন ছিল, বিগত দিনগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে আমরা তার সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি অবলোকন করি।

২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের অন্যতম দাবি ছিল অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের 'মাস্টারপ্ল্যান' তথা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা। যার মাধ্যমে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজন, প্রাণ প্রকৃতি, জীববৈচিত্রের সার্বিক উন্নতি সাধিত হতে পারে। পরবর্তীতে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপেক্ষা করে প্রায় গায়ের জোরেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করে। দুইটি ধাপের কাজ শেষ হওয়ার পর, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি ও পরিবেশ থেকে এটি খুব নিদারুণভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া অপরিকল্পিত ভবন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি কংক্রিটের নগরীতে পরিণত করা ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য সাধন করতে পারেনি।

অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা দেখেছি মহাসড়কের পাশে ছাত্রীদের তিনটি হল নির্মাণ করায় তাদেরকে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে নিয়মিত। যানবাহনের শব্দে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। নবনির্মিত শেখ রাসেল হল ও শহিদ তাজউদ্দিন হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শহিদ রফিক জব্বার হলের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটেছে। এটি মূলত মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণেরই কুফল।

উন্নয়ন প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের কাজের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, দেরিতে হলেও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট ও অন্যান্য অংশীজনদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাস্টারপ্ল্যানের গুরুত্ব অনুধাবন করেছে এবং টিএমইসি (টেকনিক্যাল মনিটরিং অ্যান্ড ইভাল্যুশন কমিটি) গঠন করেছে। কিন্তু সম্প্রতি প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে আবারো ক্যাম্পাস ছুটির সুবিধা নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই ভবন নির্মাণে উদ্যোগ নিয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নয়নের বদলে অবনতির দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

বিবৃতিতে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরণ এহসান এবং সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া জাহানের যৌথ উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনের মতামতকে উপেক্ষা করে বারবার অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হীনমন্যতা ও অনৈতিক আকাঙ্ক্ষাকেই নগ্নভাবে সবার সামনে তুলে ধরে। জ্ঞান উৎপাদন কারখানা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের যে অবস্থান- তাকে নষ্ট করে, শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিবেশকে ধ্বংস করে, এই অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন আমরা চাই না। সব বিভাগ এবং অনুষদের শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম ও ল্যাব সংকট নিরসনের মাধ্যমে পড়াশোনার পরিবেশ আরও উন্নত হোক তা আমাদেরও চাওয়া। তবে যত্রতত্র অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ কোন সুফল বয়ে আনতে পারে না বলেই এতদিনে প্রতীয়মান হয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট মাস্টারপ্ল্যান তথা মহাপরিকল্পনা ব্যতীত যত্রতত্র ভবন নির্মাণের তীব্র বিরোধিতা করছে। পাশাপাশি, দ্রুত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব এবং বারবার নানা অজুহাত দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা নিয়ে তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

/আহসান/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়