ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

বজ্রপাতে যেসব সর্তকতা অবলম্বন জরুরি

মোহাম্মাদ আশিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ১৮ মে ২০২৪   আপডেট: ১৫:৫৬, ১৮ মে ২০২৪
বজ্রপাতে যেসব সর্তকতা অবলম্বন জরুরি

বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশেই অন্যতম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের একটি হলো বজ্রপাত। বজ্রপাত কেন হয়? আবহাওয়াবিদের মতে, যখন কিউমুলোনিম্বাস মেঘ তৈরি হয়, তখনই বজ্রঝড় হয়ে থাকে। কিউমুলোনিম্বাস মেঘ হচ্ছে খাড়াভাবে সৃষ্টি হওয়া বিশাল আকৃতির পরিচালন মেঘ; যা থেকে শুধু বিদ্যুৎ চমকানো নয়, বজ্রপাত, ভারি বর্ষণ, শিলাবৃষ্টি, দমকা-ঝড়ো হাওয়া এমনকি টর্নেডোও সৃষ্টি হতে পারে।

বায়ুমণ্ডলে বাতাসের তাপমাত্রা ভূ-ভাগের উপরিভাগের তুলনায় কম থাকে। এ অবস্থায় বেশ গরম আবহাওয়া দ্রুত উপরে উঠে গেলে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শ পায়। তখন গরম আবহাওয়া দ্রুত ঠাণ্ডা হওয়ার সময় আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত ঘটে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে। তবে এখন সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেও দেখা যায়। বজ্রপাতের কোন পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। তাই এর সর্তকতা অবলম্বন করা অনেকটা কঠিন। তবে বজ্রপাত সাধারণত ঝড় বৃষ্টির সময়ই হয়ে থাকে। এসময় নিদিষ্ট নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার চেষ্টা করা উচিৎ। বজ্রপাতের সর্বোচ্চ মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রুযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রিক্যাল কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম খান বলেছেন বজ্রপাতের সময় ৬০০ মেগা ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। যেখানে একজন মানুষের ১০০ মেগা ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণেই মৃত্যু হতে পারে।

বিশ্বে বর্তমানে এর প্রকোপ বেড়েই চলছে। প্রায় সময়ই বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর শোনা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিশ্বে বজ্রপাতের কারণে যত মানুষ মারা যান, তাদের এক-চতুর্থাংশ বাংলাদেশের। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, প্রতি বছর ২৬৫ জন মানুষ মারা যান বজ্রপাতের কারণে। বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে বজ্রপাত বেড়ে চলেছে।

বিজ্ঞানীরা অনেকে মনে করেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এটা বেশি হচ্ছে। তবে অনেক বিজ্ঞানীই আবার এর সঙ্গে একমত নন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রুদ্র রুষ্ট প্রকৃতি, উষ্ণতা বৃদ্ধি, উঁচু গাছপালা নিধন ও বিবিধ কারণে এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে উল্লেখ করা যায়।

যেভাবে বজ্রপাতের সময় সতর্কতা অবলম্বন করবেন
যুক্তরাষ্ট্রে বজ্রপাতে বিপদাপন্ন পরিমাপের একটা জনপ্রিয় পদ্ধতির নাম ৩০-৩০ বা ৩০ সেকেন্ড, ৩০ মিনিট। বিদ্যুৎ চমকানোর পর ৩০ সেকেন্ড গুণতে হবে যদি ৩০ সেকেন্ড এর কম সময়ের মধ্য বজ্রপাতের শব্দ শোনা যায়, তবে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে হবে। আবার বজ্রপাতের শেষ শব্দ শোনার পর থেকে ৩০ মিনিট নিরাপদ স্থানে থাকা উচিৎ নয়তো বজ্রঝড়ের কারণে মৃত্যু বা জখমের ঝুঁকি অত্যান্ত বেশি।

বজ্রঝড়ের সময় খোলা মাঠে অনেক মানুষ অবস্থান করলে দ্রুত ১০০-২০০ মিটার দুরত্বে অবস্থান করবেন। কৃষি জমিতে অবস্থানকালে যদি বজ্রঝড় হয় তাহলে রাবারের জুতা বা বিদ্যুৎ অপরিবাহী জুতা ব্যবহার করুণ অথবা পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলের উপরে ভর করে বসে পড়ুন। এ সময় খোলা মাঠের টিনের ছাউনি, বড় গাছ যেমন তাল গাছ, খেজুর গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটির কাছ থেকে দূরে থাকুন। বাসাবাড়ির সব ইলেকট্রনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখুন। যেমন- টিভি, ফ্রিজ, ডিস লাইন ইত্যাদির বিদ্যুৎ সংযোগ একদম বিচ্ছিন্ন রাখুন এবং এগুলা থেকে দূরে থাকুন।

এ সময় জানালা স্পর্শ করা থেলে দূরে অবস্থান করুন। আপনার বাসা বা ভবনে যদি বজ্রপাত নিধোরক ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সবাই আলাদা কক্ষে অবস্থান করুন। বজ্রপাতের সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু ঘটে, এমন টাও না। তাই বজ্রপাতে আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

এসময় সর্বোচ্চ নিরাপদে অবস্থান করার চেষ্টা করুণ। বজ্রপাতের বিপর্যয় সম্পর্কে নিজে সতর্ক হোন, অন্যকে সতর্ক করুণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়