ঢাকা     শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

‘শুধু ইকুইটি দিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেট বড় হবে না’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ৪ মে ২০২৪  
‘শুধু ইকুইটি দিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেট বড় হবে না’

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. আব্দুল হালিম বলেছেন, শুধু ইকুইটি দিয়ে ক্যপিটাল মার্কেট বড় হবে না। মার্কেট বড় করতে আরও বিভিন্ন ধরনের পণ্য দরকার। ইতোমধ্যে ডেরিভেটিভস নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম স্টক ক্সচেঞ্জ (সিএসই) কমোডিটিজ নিয়ে কাজ করছে৷ ২০২৪ সালের অক্টোবরের মধ্যে সিএসই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করা হবে।

গাজীপুরের ব্র্যাক সিডিএমে দুই দিনব্যাপী (মে ২-৩) ফাইন্যান্সিয়াল ডেরিভেটিভস অন এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড প্ল্যাটফর্ম শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিবিএর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম৷

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিএসইসি, সিডিবিএল, সিসিবিএল, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানির নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে আব্দুল হালিম বলেন, ডেরিভেটিভস নিয়ে আজকের ওয়ার্কশপই শেষ নয়। এটা নিয়ে আরো অনেক প্রোগ্রাম করতে হবে৷ অনেকে দেশে এ বিষয় অনেক আগে থেকে চালু আছে। তাই, যারা এ বিষয় নিয়ে কাজ করবেন, তাদেরকে প্রয়োজনে সেসব দেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে আসতে হবে। আজকে যারা এখানে এসেছেন, শুধু ওয়ার্কশপে আসলাম আর বিভিন্ন বিষয় আলোচনা শুনলাম, তা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। এটা কীভাবে অতি দ্রুত চালু করা যায়, সে বিষয়ে সব পর্যায়ে কাজ করতে হবে। কোনো বিষয় নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা করলে তা বাস্তবায়ন সম্ভব।

বিএসইসি কমিশনার বলেন, পুঁজিবাজারে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে বাজার এ অবস্থায় থাকবে না। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে অনেক ভালো হবে। বাহির থেকে কেউ এসে বাজার ভালো করে দেবে না। এখানে যারা আছে, তাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে, এখানে কী সমস্যা আছে, আর কী কাজ করা যায়? তাহলেই বাজার ভালো হবে। অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন হয়েছে, সে অনুযায়ী আমাদের রোল পরিবর্তন হওয়া উচিত। ২৫ সালের মধ্যে এই ডেরিভেটিভস পণ্য চালু হবে বলে আমি আশাবাদী। এর মধ্যে সিসিবিএলও তার কার্যক্রম শুরু করে দেবে৷ গতানুগতিক চিন্তা করলে হবে না। একটু ভিন্নভাবে ভাবতে হবে। বাজারে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। শুধু করার জন্য ওয়ার্কশপ করলে হবে না। আপনাদের ভাবতে হবে, আমরা এটা করব। সেক্ষেত্রে সিসিবিএলের সমস্যা দেখব না, সিসিবিএলের বড় শেয়ারহোল্ডার ডিএসই। প্রয়োজনে তাদের সমস্যার কথা জানান। দরকার হলে সেগুলো নিয়ে আলাদা ওয়ার্কশপ করেন।

ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ডিএসই তার পণ্যে বৈচিত্র্যণ আনতে আগ্রহী। আমরা নিয়ম/বিধি প্রণয়নের জন্য বিএসইসির সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। খুব শিগগিরই ডেরিভেটিভ মার্কেট শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর্থিক খাতের ডেরিভেটিভ পণ্য বাংলাদেশের জন্য খুবই সময়োপযোগী। ডেরিভেটিভ পণ্যগুলো অত্যন্ত পরিশীলিত পণ্য এবং ঝুঁকি হ্রাসের জন্য একটি কার্যকর হাতিয়ার, যা পুঁজিবাজারের তারল্য প্রবাহ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অধিকতর দক্ষতা প্রদান করে অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নত স্টক এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন ধরনের ডেরিভেটিভ পণ্য রয়েছে। ডেরিভেটিভ মার্কেটের আকার ইকুইটি বাজারের তুলনায় বহুগুণ বেশি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য পণ্যের বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে তার পার্শ্ববতী এক্সচেঞ্জের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য কাজ করছে৷ এছাড়া আরো কিছু আইন, টেকনিক্যাল এবং অবকাঠামো বিষয়সহ বেশকিছু কাজ করতে হবে। এই ধরনের ট্রেনিং প্রোগ্রাম অব্যাহত থাকবে, যাতে করে আমরা ডেরিভেটিভ পণ্য খুব দ্রুত বাজারে চালু করতে পারি। 

ফাইন্যান্সিয়াল ডেরিভেটিভস অন এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড প্ল্যাটফর্ম শীর্ষক কর্মশালার বিশেষ অতিথি ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে পণ্যে ভিন্নতা আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো পিছিয়ে রয়েছে। তবে, আজকের এ আয়োজনের জন্য বিএসইসি এবং ডিএসইকে ধন্যবাদ জানাই। এ বিষয়ে ডিএসইকেই এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, যদি ডিএসই কাজ না করে, তাহলে বিএসইসি কিছুই করতে পারবে না। ডিএসইর বর্তমানে যে এমডি রয়েছেন, তার নেতৃত্বে কর্মকর্তাদের কাজ করার সুযোগ তৈরী করতে হবে। তিনি এর আগে বিএসইসিতে ছিলেন। এ বাজার সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা ও কাজের দক্ষতা আছে। তিনি এখানে কী সমস্যা আছে, সেগুলো জানেন। সেক্ষেত্রে তার এই বিষয়গুলো কাজে লাগাতে পারলে আমরা একটি নতুন স্টক এক্সচেঞ্জ দেখব। পণ্যে ভিন্নতা আনতে অনেক আগে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু, কোনো কাজ হয়নি। সেজন্য এ বাজারে কোনো মেধাবী থাকে না। কারণ, যারা আসে, তারা এখানে কাজ করার মতো কোনো নতুন পণ্য পায় না। আমাদের বাজার মূলত ইকুইটিকেন্দ্রিক। বর্তমানে বাজারে মাত্র ৪০০ কোম্পানি আছে, যেখানে বাংলাদেশে কোম্পানির সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি। ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা মাত্র ১৭ লাখ। তাই, এ জিনিসগুলো বিএসইসি ও ডিএসইর লক্ষ করা উচিত, আসলে সমস্যা কোথায় আছে? বাজার ভালো করতে হলে পণ্যে ভিন্নতা আনতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম ফিউচারস ও অপশনস বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় অপশনসের ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি, রিটার্ন বৃদ্ধির কৌশল, কভার্ড কল, ভ্যালু প্রটেকশন স্ট্র্যাটেজি, বুল, বিয়ার ও বাটারফ্লাই ট্রেড, লং ও সর্ট স্ট্রাংগেল, অপশন প্রাইসিং মেথডস, ব্লাক-সোলস মডেল, বায়নোমিয়াল ট্রি মডেল, কন্ট্রোল ভ্যারিয়েট টেকনিক, ফিউচার প্রাইসিং, ফিউচার কন্ট্রাকটস, প্রাইসিং ফরোয়ার্ড, স্টক ইনডেক্স, ইনডেক্স আরবিট্রেজ, প্রাইসিং ফরোয়ার্ড বনাম ফিউচারস, লং অ্যান্ড সর্ট পজিশনস, হেজিং প্রিন্সিপাল, শর্ট অ্যান্ড লং হেজ, পারফেক্ট হেজ, বেসিস অ্যান্ড বেসিস রিস্ক, হেজ ফরোয়ার্ড বনাম ফিউচারস ও অপটিমাল হেজ রেশিওর ওপর আলোকপাত করেন৷

পরে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম৷ ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাফিজ আল তারিক, সিএফএ ও ডিএসই’র উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া৷

এনটি/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়