নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরার সুযোগ দিয়ে ৪০ লাখ টাকা চাঁদা তোলেন নৌপুলিশের জাহাঙ্গীর!
চাঁদপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

চাঁদপুরে ইলিশ অভয়াশ্রমের দুমাসের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে অর্থের বিনিময়ে নদীতে জেলেদের নৌকা নামিয়ে অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরাসহ একাধিক সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার শর্তে মোটা অংকের চাঁদার টাকা গ্রহণ করেছেন হাইমচরের নীলকমল নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন। এ সময়কালে তিনি চাঁদা তোলেন অন্তত ৪০ লাখ টাকা।
সঙ্গীয় সোর্সদের টাকার ভাগ দিতে টালবাহানা করার একটি ভিডিও ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার (১৮ মে) এই প্রতিবেদকের হাতে ৩ মিনিটের বেশি সময়ের সেই ভিডিও ক্লিপটি আসে।
সেই ভিডিওতে দেখা যায়, নিজ কার্যালয়ের চেয়ারে বসে সোর্সদের সঙ্গে রফাদফার দরবার শুরু করেন জাহাঙ্গীর হোসেন। তর্কের এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর তার সোর্সদের বলেন, ‘এখানে তো কোটি কোটি টাকা না। মাত্র ৩০/৪০ লাখ টাকা।’
সোর্সরা বলেন, ‘দুই মাসের চাঁদার টাকা যদি এক মাসেই নিয়ে নেন? তাহলে কেমনে কী?’
উত্তরে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা না। সুলতান মেম্বারের সেখানে ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও, ওই টাকাটা আমাকে দেয় নাই। হয়তো দেবে।’
সামনে থাকা সোর্সরা তখন বলেন, ‘টাকা তো সিওর না। সিওর করে দিলে হতো।’ উত্তরে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সোর্সদের টাকা আমি দিতে পারবো না এবং আমি দেবও না।’
সোর্সরা বলেন, ‘দুই মাসের প্যাকেজে নৌকা প্রতি ৩০/৪০ হাজার করে টাকা যারা অগ্রিম দিয়েছে, তাদের কি পুনরায় ধরতে পারবো? এখন যদি পুরোটাই আপনি নিয়া যান, আমরা কী করে ধরবো?’
উত্তরে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আচ্ছা শোনেন, আপনারা সব টাকা নিয়ে নেন। আর আমি যে কয় টাকা নিছি, সব টাকা প্রয়োজনে সমান ভাগ করে নেন। বাকি এক মাসের যে টাকা আছে তা আপনারা নিয়ে নেন। আমার কোনও কন্ট্রাক্ট নাই। আপনারা যা পাবেন নিয়ে নেন। ১ লাখ ৩০ হাজার উচ্চারণ করে, আমার কোনও কন্ট্রাক্ট নাই, আপনারা যা পাবেন নিয়ে যান। আমি ঐ ৪৫ হাজার টাকা আমার থেকে দিয়ে দেব ঠিক আছে? আর আপনারা যেভাবে পারেন, টাকা আদায় করে নিয়ে নেন। এ বিষয়ে আমার কোনও কন্ট্রাক্ট নাই।’
এদিকে ভাইরাল ভিডিও’র বিষয়ে নীলকমল নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন কোনও বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
খবর নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৪ জুন নীলকমল নৌপুলিশ ফাঁড়িতে ইনচার্জ হিসেবে যোগ দেন জাহাঙ্গীর। এরপরই তিনি নৌ পুলিশের ভাবমূর্তির দিক বিবেচনায় না নিয়ে নানা অপতৎপরতায় টাকা কামানোর চেষ্টা চালাতে থাকেন। এর মধ্যে এই ভিডিও সামনে চলে আসায় তার অবৈধ পন্থায় টাকা আয়ের বিষয়টি সবার নজরে চলে আসে।
প্রসঙ্গত, ইলিশ অভয়াশ্রমে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে হাইমচরের চরভৈরবীর পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশসহ সব প্রকার মাছ ধরা মার্চ এপ্রিল দুমাস পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকে।
অমরেশ/এনএইচ