বিবাহিত ছাত্রীদের হলে না থাকার বিধি বাতিল, খুশি শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবাহিত ছাত্রীরা আবাসিক হলে থাকতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি। বুধবার সন্ধ্যায় কমিটির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এখন থেকে বিবাহিত এবং অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীরা হলে থাকতে পারবেন। কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে অন্ত:সত্ত্বা ছাত্রীর ক্ষেত্রে তার শারীরিক সুস্থতার জন্য পারিবারিক পরিবেশে থাকা জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে খুশি শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এটা আরও অনেক আগেই বাতিল হওয়া দরকার ছিল। অবশেষে প্রভোস্ট কমিটি এটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা আমাদের স্বস্তির খবর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাবরিন তোহা বলেন, আমাদের ছাত্রীদের হলে উঠার সময় এ বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হতো। এতে অনেক ছাত্রীর সমস্যা থাকলেও হলে থাকতে পারতো না। বর্তমান সময়ে এসে এমন একটি নিয়মের সংশোধন হবে এটাই স্বাভাবিক।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাহেলা জামান বলেন, নিয়ম থাকলেও কিছু শিক্ষার্থী বিবাহিত হয়েও হলে থাকে বলে আমরা জানি। লুকোচুরি করে তারা হলে থাকে। অথচ সিট তার প্রাপ্য অধিকার। সেটা কেন তারা লুকোচুরি করে নিজের আয়ত্বে রাখতে হবে সেটা বোধগম্য নয়। যাক নিয়মটি বাতিল হয়েছে, এতেই আমরা খুশি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, মেয়েদের হলে উঠার সময় যে এমন একটি নিয়ম আছে সেটাইতো জানতাম। আমার জানামতে অধিকাংশ ছেলে শিক্ষার্থীই এটি অবগত না। কারণ ছেলেদের তো কেউ বিবাহিত হলে কোন নিয়ম নেই। এ নিয়মটি নিয়ম বাতিল হওয়া দরকার ছিল এবং সেটিই হয়েছে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ সর্দার বলেন, এটা একটা বৈষম্যমূলক পদ্ধতি ছিল। এমন পদ্ধতি কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট কমিটি এটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি।
ছাত্রী হলের সিট বণ্টনের নিয়ম বাতিলের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শামসুন নাহার হলের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি বলেন, আমাদের দাবি মেনে নেওয়ায় প্রশাসনকে ধন্যবাদ। এতে আমাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান ঘটল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ধারাবাহিকভাবে বাকি দাবিগুলোও মেনে নেবেন বলে আমরা আশা করছি।
ছাত্রীদের হলে আসন বণ্টন সম্পর্কিত নীতিমালায় বলা ছিল, কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তার সিট বাতিল হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে চলতি সেশনে হলে থেকে অধ্যায়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।
পড়ুন: বিবাহিত-অন্তঃসত্ত্বা হলে থাকতে পারবেন: ঢাবি প্রভোস্ট কমিটি
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শামসুন নাহার হল ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে বিবাহিত দুই ছাত্রীর সিট নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এরপর পাঁচটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় এই নিয়ম বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের বাকি দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মর্যাদা রক্ষার্থে সকল ছাত্রী হলে লোকাল অভিভাবক বা স্থানীয় অভিভাবকের পরিবর্তে ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট বা জরুরি যোগাযোগ শব্দটি রাখতে হবে।
আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্বারা যেকোনও ধরনের হয়রানি এবং অসহযোগিতামূলক আচরণ বন্ধ করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা সাপেক্ষে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের অধিকার পুনর্বহাল করতে হবে এবং জরুরি প্রয়োজনে তাদেরকে হলে অবস্থান করতে দিতে হবে।
ইয়ামিন/এসবি
আরো পড়ুন