বাবাকে ছাড়া ওয়াসিম পুত্রের প্রথম ঈদ
বরেণ্য চিত্রনায়ক ওয়াসিম। ফোক ফ্যান্টাসি আর অ্যাকশন ঘরানার সিনেমায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তার ছিল একচেটিয়া রাজত্ব। অভিনয় ক্যারিয়ারে ১৫০ টি সিনেমায় অভিনয় করেন এই ড্যাশিং হিরো, যার প্রায় সবগুলোই ব্যাবসা সফল ছিল। দিন যতই যেতে থাকে ওয়াসিমের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়। বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমার অপরিহার্য নায়ক হয়ে ওঠেন তিনি। শাবানা, ববিতা, কবরী, অলিভিয়া, সুচরিতা, অঞ্জু ঘোষ, অঞ্জনা, নূতনসহ সেই সময়ের প্রথম সারির প্রায় সব অভিনেত্রীর সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা।
চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের চিত্রনায়ক ওয়াসিম গত ১৭ এপ্রিল মারা যান। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নামে চলচ্চিত্র অঙ্গনে। তাকে ছাড়া তার সন্তান ব্যারিস্টার দেওয়ান ফারদুন প্রথমবার ঈদ করছেন। রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ বিনোদন প্রতিবেদক রাহাত সাইফুলের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় জানান বাবাহীন জীবনের প্রথম ঈদের শূন্যতার কথা। ফারদুন বলেন ‘আব্বুর সঙ্গে প্রতি ঈদ একসঙ্গে করেছি। শুধু মাত্র ইউকেতে থাকার সময় করতে পারিনি। দু’টা ঈদই আমাদের ঢাকার বাসায় করা হতো। ঢাকার বাহিরে করা হতো না।’
ঈদের দিন বরেণ্য এই অভিনেতা কি করতেন জানতে চাইলে ফারদুন বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ঈদের নামাজ আদায় করতেন। প্রথমেই বনানী কবরস্থানে যেতেন ওখানে আমার আম্মা ও আমার বোন সমাহিত আছেন। এছাড়া আমার দাদা-দাদি, নানা- নানিসহ সবার কবর জিয়ারত করতেন। এরপরে বাসায় এসে খাবার দাবার খেতেন, ইবাদত করতেন। বিশ্রাম করতেন। এর পরে আত্মীয় স্বজনদের বাসায় যেতেন। এভাবেই কাটিয়েছেন তিনি।’
ঈদের সালামি ও বাবাকে ঈদ উপহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,'আব্বার কাছ থেকে সালামি চাইতে হতো না৷ উনি সবসময়ই আমাদের দিয়েছেন। ঈদের সময় আব্বুকে পাঞ্জাবি কিনে দিতাম। কিন্তু উনি সবসময় না করতেন। উনি কিছু না নেওয়াটাই পছন্দ করতেন। আমাকে সবসময় বলতো- নিজের টাকা নিজে কাজে খরচ করো। সারাজীবন কোনো কিছু নিত না, দিত।’
সারা জীবন বাবাকে কম কাছে পাওয়া নিয়ে বেদনায় ভারাক্রান্ত ওয়াসিম পুত্র। তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় আমরা ঘুরতে বের হতাম। কিন্তু আব্বু কখনই মার্কেটে যেত না। আমি যখন ছোট তখন আব্বু সিনেমা নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলেন। অনেক সময় ঈদেও আব্বু শুটিংয়ে ছিল। ছোটবেলা আব্বুকে কম সময়ে পেয়েছি। সকালে যেত ভোর রাতে বাসায় ফিরতেন। মার্কেটে আব্বু গেলে পাবলিক ঘিরে ধরতো এটায় আব্বু বিব্রত হতেন। শপিংয়ের বিষয়টি আম্মুর ওপর ছেড়ে দিতেন।’
বাবার সঙ্গে খেলনা কিনতে যাওয়ার স্মৃতিগুলো এখনো তাড়া করে ওয়াসিম পুত্র ফারদুনকে। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন,'গুলশানে আব্বুর একটা পছন্দের খেলনার স্টোর ছিল। ওখানে আব্বু মাঝে মাঝে বসতো। এই একটা মাত্র স্টোরেই তিনি যেতেন। এর কারণ ছিলে ওটার পিছনে ইকবাল হায়দার আঙ্কেলের অফিস ছিল। ওটার নাম ছিল ইকবাল জেনারেল স্টোর। অফিসে আব্বু বসতো। ওখানে আমি আব্বুর সঙ্গে যেতাম৷ আমি গেলে ইকবাল আঙ্কেল খেলনা দিত এবং আব্বুও কিনে দিতেন।’
ঈদের প্রায় একমাস আগে বাবাকে হারিয়েছেন। এদিকে মা ও বোনকে হারিয়েছেন আগেই। স্বাভাবিক কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যারিস্টার দেওয়ান ফারদুন। এবারের ঈদ নিয়ে তিনি বলেন, ‘মানসিকভাবে আমি বিপর্যস্ত। তাই এবার আনন্দটা আর ওভাবে হবে না। নামাজ পড়ে আব্বু, আম্মু ও আমার বোনের কবর জিয়ারত করব। আমার দাদা, দাদি,নানা, নানি সবাইকে বনানী কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে। তাদের জন্য দোয়া করব।'
দীর্ঘদিন ধরে ব্রেন, নার্ভ ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন বরেণ্য অভিনেতা ওয়াসিম। অসুস্থ হওয়ার পর তাকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। কারণ, দেশে করোনার যে পরিস্থিতি তাতে হাসপাতালে রাখা নিরাপদ নয়। এরপরে আবার অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ঢাকা/রাহাত সাইফুল/মারুফ