ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

পদ্মা-মহানন্দার চরে সবুজের ঝিলিক

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২১, ২১ এপ্রিল ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পদ্মা-মহানন্দার চরে সবুজের ঝিলিক

শ্যালোইঞ্জিন বসিয়ে ভূগর্ভস্থ থেকে পানি তুলে সেচ দেওয়া হচ্ছে ধান গাছে (ছবি : তানজিমুল হক)

তানজিমুল হক, রাজশাহী : পদ্মা ও মহানন্দা নদীর নাব্যতা কমে গেছে। জেগে উঠেছে চর। নদীর পানি তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে নদী দুটির অধিকাংশ এলাকা শুকিয়ে গেছে। শুকিয়ে যাওয়া এসব এলাকায় চলতি মৌসুমে চাষ হচ্ছে বোরো ধান।

 

পদ্মা ও মহানন্দার মাঝ পথ দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় দুই ধারে সবুজের সমাহারের এখন অপূর্ব দৃশ্য।

 

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, পদ্মার রাজশাহী অঞ্চল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদী পর্যন্ত অন্তত ১৫ হাজার চাষি শ্যালোইঞ্জিন বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে সেচ দিয়ে ধানসহ নানা ফসলের চাষ করছেন। এর ফলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

 

পদ্মা ও মহানন্দা পাড়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এক সময় নদীর পানি দিয়ে দুই পাড়ের জমিতে ফসলের চাষ করা হতো। কিন্তু পদ্মা-মহানন্দার উজানে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে এখন নদীতে পানিই নেই।

 

তাই পরিবর্তন এসেছে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের জীবন ও জীবিকায়। নদীতে পানি না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের হাজার হাজার জেলে ও মাঝি। বাধ্য হয়ে তারা এখন নদীগর্ভে শ্যালোইঞ্জিন বাসিয়ে ধান চাষ করছেন।

 

তবে পদ্মা-মহানন্দায় শুধু জেলে ও মাঝিরাই ধানচাষ করেন নি, কোমর বেঁধে চাষাবাদে নেমেছেন কয়েক  হাজার ভূমিহীন পরিবারও। কোথাও কোথাও আবার গড়ে তোলা হয়েছে কৃষক সমবায়। সমবায় সমিতির মাধ্যমে চাঁদা তুলে একশ থেকে দেড়শ জন পর্যন্ত কৃষক একযোগে চাষ করেছেন বোরো ধান।

 

বর্তমানে রোপণ পরবর্তী পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নদীর বুকের চাষিরা। আর কয়েকদিনের মধ্যেই ধান গাছে দেখা দেবে শীষ। তখন সোনালী ঝিলিকে ভরে উঠবে পদ্মা-মহান্দার বুক। এখন নদীর বুকে দোল খাচ্ছে সবুজ ধানের গাছ। পদ্মা মহানন্দার বেশিরভাগ এলাকায় যতদূর চোখ যায়, চোখে পড়ে শুধু সবুজের সমারোহ।

 

ধান চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলের জমিতে ধান চাষে খরচ বেশি, কিন্তু উৎপাদন কম।

 

অন্যদিকে নদীতে ধান চাষে খরচ কম, কিন্তু উৎপাদন বেশি। বরেন্দ্র অঞ্চলে বিঘা প্রতি ধানের উৎপাদন হয় ১৫ থেকে ১৭ মণ। অথচ তুলনামূলক কম সার ও কীটনাশক প্রয়োগেও নদীর বুকে বিঘা প্রতি ধানের উৎপাদন ২০ থেকে ২২ মণ।

 

কৃষকেরা জানিয়েছেন, নদীতে এক বিঘা ধান চাষে খরচ হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। গোদাগাড়ীর গাঙোবাড়ি এলাকাটি ভারতের গঙ্গা ও বাংলাদেশের পদ্মা এবং মহানন্দা নদীর মোহনা। এখানে তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন সুলতানগঞ্জ গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম।

 

তিনি জানান, তাদের এলাকার অধিকাংশ চাষিই পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে মহানন্দায় ধান চাষ করছেন। নভেম্বর থেকে নদীতে পানি কমতে শুরু করলে তারা নদীর বালু ও কাঁদা টেনে জমি প্রস্তুতের কাজে নেমে পড়েন। মাস দুয়েক পরিশ্রমের পর প্রস্তুত হয় জমি। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে চরের জমিতে রোপণ করা হয় বোরো ধানের চারা।
কৃষক রফিকুল ইসলাম আরো জানালেন, ভারতে হঠাৎ বন্যা দেখা দিলে ফারাক্কার দরজা খুলে দেওয়া হয়। এমনটি হলে তাদের কষ্টের ফসল নদীর পানিতে ডুবে মরবে। তাই কিছুটা আগাম আগাম তারা ধান চাষে নেমে পড়েন। এ কারণে জৈষ্ঠ্য মাসের প্রথম সপ্তায় তারা ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন।

 

ভূমিহীন দিনমজুর আবদুস সামাদ চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন উপজেলার খারিজাগাতি মোল্লাপাড়া গ্রামে। নিজের কোন জমি নেই, তাই গ্রামের পাশের পদ্মা নদীতে আবদুস সামাদ চার বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করে আসছেন কয়েক বছর ধরে। এই নদীর জমি থেকে পাওয়া ধান থেকেই তার পরিবারের সারা বছরের খাবার জোগাড় হয়।

 

তিনি জানান, ভরা মৌসুমে পানির সঙ্গে নদীতে যে পলি পড়ে, তা ধান খেতে সারের মতো কাজ করে। বাড়তি তেমন সার প্রয়োগ করতে হয় না। এরপরেও জমির ধান দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে পদ্মা ও মহানন্দা নদীর বুকে ব্রি-২৮ ও ব্রি-৩২ সহ স্থানীয় কয়েকটি জাতের ধান চাষ হয়েছে। প্রায় ১৫ হাজার চাষি নদীর প্রায় দুই হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে এসব ধান চাষ করেছেন।

 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হযরত আলী বলেন, প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিতেও পরিবর্তন এসেছে। আগে পদ্মায় মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন পানি নেই, তাই চলছে ধান চাষ। এতে নদী তীরবর্তী দরিদ্র জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা পাচ্ছেন।

 

 

রাইজিংবিডি/রাজশাহী/২১ এপ্রিল ২০১৫/রণজিৎ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়