‘শুধু প্রাণটা নিয়ে বের হয়েছি’
শিহাবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম
'শুধু প্রাণটা নিয়ে বের হয়েছি। ঘরে ট্রাঙ্কের মধ্যে নগদ সাত হাজার টাকা, এসএসসি ও এইচএসসি'র সার্টিফিকেট ছিল তাও সাথে নিতে পারি নাই। আগুন লাগার পর আমার ছেলেকে নিয়ে দৌড়ে বের হয়েছি।'
বলছিলেন পুজা রায় নামের ৩০ বছর বয়সী এক নারী।
রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তিতে গত রাতের আগুনে পুড়ে যাওয়া প্রায় ১৫০টি ঘরের মধ্যে তার ঘরটিও ছিল।
দিনাজপুর থেকে আসা পুজা রায় জানান, তাদের দুই তলা ভবনের নিচে থাকা একটি মুদি দোকান থেকেই আগুনের সূত্রপাত।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ঘরগুলোর ওপরে বসে আছেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। কেউ কেউ খুঁজে দেখছেন প্রয়োজনীয় কিছু পাওয়া যায় কিনা। কেউ কেউ চিন্তামগ্ন হয়ে বসে ভাবছেন, সামনে রাতে ঘুমাবেন কোথায়। কারণ এই বস্তিই তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল।
এদের মধ্যে একজন আবদুল করিম। সামান্য জমি কিনে দুই তলা বাড়ি বানিয়ে নিজে থাকতেন এবং ১৩টি রুম বানিয়ে ভাড়া দিয়েছিলেন।
তিনি জানান, গত ৩০ বছর ধরে এই বস্তিতে থাকেন। নরসিংদী তার গ্রামের বাড়ি, কিন্তু সেখানে কোনো বাড়ি বা জমি নেই। মূলত তার বাড়ির নিচ তলা উজ্জল নামের এক ব্যক্তিকে দোকান ভাড়া দিয়েছিলেন। সেই মুদি দোকানের বিদ্যুৎ লাইন থেকেই আগুনের সূত্রপাত।
আবদুল করিম বলেন, 'আমার মেয়ের জামাইয়ের বাসা থেকে বিদ্যুতের লাইন নিয়েছিলাম। বিল দিতাম তাকেই। মিটারও ছিল জামাইয়ের বাসায়। '
স্থানীয়রা জানান, উজ্জলের দোকান থেকে আগুন লাগে রাত পৌনে ১২ টার দিকে, প্রায় এক ঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। উজ্জলের দোকানের পাশে ছিল একটি টেলিকমের দোকান। আর এর পাশেই দু'টি জুতার দোকান। পাশাপাশি দোকান হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া ওই একই সারিতে ছিল লেপ-তোশক ও ছোট তুলার গুদাম ঘর।
প্রত্যক্ষদর্শী, জামাল খান মুরাদ নামে এক মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট বলেন, ঘটনার সময় উজ্জলের দোকান বন্ধ ছিল। সে কিছুদিন আগে তার গ্রামের বাড়ি ঢাকার অদূরে দোহার উপজেলায় গিয়েছে। যখন আগুন লাগে তখন ছিল স্লিপিং টাইম, সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। আমি আগুন লাগার সাথে সাথেই দেখতে পাই। এবং ট্রিপল নাইন (৯৯৯) এ কল দেই। কল দেওয়ার ৪-৫ মিনিটের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উপস্থিত হয়। তাদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু রাস্তা চিপা হওয়ায় তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে।
তিনি বলেন, 'প্রথমে আগুন ঘরের ভিতরে ছিল বাইরে থেকে বুঝা যাচ্ছিল আগুন লেগেছে। এর দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই ৫-৬ টা দোকানে ও উপরের বাসাগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।'
আগুনে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া লেপ-তোশক ব্যবসায়ী ফেরদৌস শেখ বলেন, 'আমার দোকানে প্রায় ৪-৫ লাখ টাকার মাল ছিল, সব পুড়ে গেছে। কিছুই অবশিষ্ট নেই। এক সিজনের সব মালামাল ছিল।'
এদিকে আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থানে সকাল থেকেই শত-শত মানুষের ভিড় দেখা যায়। এদের মধ্যে অনেকেই আশপাশ থেকে দেখতে এসেছেন। এ অবস্থায় বস্তির আশেপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনাস্থালে থাকা বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিৎ রায় বলেন, 'এখানে যেনো কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকা/শিহাবুল/টিপু
আরো পড়ুন