যাদের জাত-ধর্ম নেই, তারাই শ্রমিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহমান পঞ্চপল্লীর মন্দিরে আগুন দেওয়ার অভিযোগে দুই শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘যাদের কোনো জাত নেই, যাদের কোনো ধর্ম নেই, তারাই দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তারা খুনি। এ ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা মুসলিমও না, হিন্দুও না। তাদের কোনো ধর্ম নেই।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত সামাজিক সম্প্রীতি কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

এর আগের দিন বুধবার রাতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নিহত দুই ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানান ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, অপরাধীরা মনে করেছে, এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পার পেয়ে যাবে। তার কোনো সুযোগ নেই। হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে আইনের ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিন্ত করা হবে। ইতোমধ্যেই এ ঘটনায় ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের সমাজে কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে কোন জাতি, এটা বড় বিষয় নয়; আমরা সকলেই মানুষ। কোনো মানুষই এ ঘটনাকে মেনে নিতে পারছে না। সকলেই শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনারা অনেক কষ্ট করছেন হত্যাকাণ্ডের তথ্য উদঘাটন করার জন্য। কেউ কেউ ঘটনাকে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেদিকে আপনারা সতর্ক থাকুন। কোনোভাবেই শান্তিপ্রিয় এ এলাকাকে অশান্ত করতে দেওয়া হবে না। যে ঘটনা ঘটেছে, তার সঠিক বিচার শিগগির হবে। 

এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে যার যার এলাকায় নেতৃত্বস্থানীয় লোকজন নিয়ে সভা করেন। লোকজনকে বুঝিয়ে বলুন যে, দুই শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার শিগগিরই হবে। ঘটনাটি নিয়ে আবেগী হয়ে আপনারা কোনো বিষয়ে উস্কানি দেবেন না। এলাকায় পাহারা দিন। প্রয়োজনে আপনারা প্রশাসনকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। 

তিনি বলেন, কোনো দল বা সংগঠন, যারাই এই পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে আসবেন, তাদেরকে আমি ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিবো। তবে, এ ঘটনাকে ইস্যু করে কোনো ধরনের অশান্তি সৃষ্টিকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনুন আহমেদ অনীকের সভাপতিত্বে সম্প্রীতি কমিটির সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিহত দুই শ্রমিকের বাবা শাহাজাহান শেখ, মধুখালী সার্কেলের এএসপি মিজানুর রহমান, ফরিদপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক শাহাবুদ্দিন আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বকু, পৌরসভার মেয়র মোর্শেদ রহমান লিমন, উজানদিয়া মডেল মসজিদের ইমাম হাফেজ আলম হোসেন, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুবাস রায় প্রমুখ। সভায় বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর বদরুল হুদা আকরাম, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সকল ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ১৮ এপ্রিল ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীর মন্দিরে আগুন দেওয়ার অভিযোগে দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। ঘটনার এক দিন পর থানায় মামলা তিনটি নথিভুক্ত করা হয়। এ ঘটনায় মোট ১৫জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।