বিজয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুত হচ্ছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ
আরিফুল ইসলাম সাব্বির, সাভার || রাইজিংবিডি.কম
জাতীয় স্মৃতিসৌধ
আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এদিন দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে জাতি। এ জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ। রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসহ দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন নির্বিঘ্ন রাখতে নেওয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রাঙ্গণে সৌন্দর্য বধর্নের জন্য পরিচ্ছন্নকর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। গণকবর ও শহীদ বেদী ধুয়ে মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। লেক সংস্কার ও আলোকসজ্জাসহ বিভিন্ন কাজ করতে দেখা যায় প্রায় শতাধিক শ্রমিককে।
সৌধ স্তম্ভের চূড়া থেকে শুরু করে শহীদ বেদী, পায়ে চলার সড়ক সবস্থান ধুয়ে মুছে চকচকে করা হচ্ছে। স্মৃতিসৌধের মূল ফটক থেকে বেদী পর্যন্ত হাঁটা পথে রং-তুলির আঁচড়ে লাল ইটের মধ্যে সাদা রঙের ছোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। চত্বরজুড়ে শোভা পাচ্ছে লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ, সাদাসহ বিভিন্ন রং ও বর্ণের ফুলের গাছ। এসব গাছে ফুটে আছে রঙিন ফুল। সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে এসব গাছেরও। নির্দেশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একেকটি ঝাউগাছ।
স্মৃতিসৌধের বেদীর সামনের অংশে গাছ দিয়ে বানানো হয়েছে জাতীয় পতাকা। লেকের পানিতে নতুন করে রোপণ করা হয়েছে লাল শাপলা।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রায় এক মাস সময় ধরে বিভিন্ন কাজ করছি। এখানে কেউ ঝাড়ু দিচ্ছেন আবার কেউ গাছের আগাছা ছাঁটাই করছেন। রং-তুলির কাজসহ আলোকসজ্জার কাজও করা হচ্ছে।”
জিএম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “আমি জাতীয় স্মৃতিসৌধে ৪৩ বছর ধরে মুছে যাওয়া লেখাগুলো নতুন করে লেখি। এখানে বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এসে গাছ রোপণ করেন। সেই গাছের পাশে তাদের পরিচয় এবং দেশসহ ভ্রমণের বিস্তারিত আমি প্রতি বছর এসে লেখি। এখানে বীর শহীদদের জন্য কাজ করতে পেরে আমার অনেক ভালো লাগে।”
জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঝাড়ু দিচ্ছিলেন শেফালী বেগম। তিনি বলেন, “আমি জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ পরিষ্কার রাখার জন্য প্রতিদিন এসে ঝাড়ু দেই। এতে আমার অনেক ভালো লাগে। যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে নির্মিত সৌধ পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে পারছি। দেশের লোক স্মৃতিসৌধ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখে ভালো বললে আমারও ভালো লাগবে।”
এর আগে সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়েকের বিভিন্ন স্থানে চলছে সংস্কারসহ সৌন্দর্যবর্ধণের কাজ। সড়ক ডিভাইডারে নতুন করে রং করা হচ্ছে। কিছু অংশে দুটি লেনের মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় রোপণ করা হচ্ছে, ফুলসমেত বিভিন্ন ধরণের ফুলের গাছ। স্থানটি পরিষ্কারও করা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুসারের সড়কের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে পিচের আস্তরণ দেওয়া হচ্ছে।
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার খান আনু বলেন, “মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজ করা হচ্ছে। প্রায় এক মাস ধরে শতাধিক শ্রমিক জাতীয় স্মৃতিসৌধকে বিজয় দিবসের জন্য প্রস্তুতের কাজ করছেন তারা। এখন শেষের দিককার কাজ করা হচ্ছে।”
জনগণের জান-মালের নিরাপত্তাসহ জাতীয় স্মৃতিসৌধের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক। গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঘুরে দেখেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এ উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাভারের আমিনবাজার থেকে শুরু করে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি পোশাকে এবং সাদা পোশাকে চার হাজারের বেশি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। তারা জনগণের জান-মাল রক্ষাসহ সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।”
রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, “জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের যা যা করণীয়, আমরা সব ব্যবস্থা করেছি। প্রায় ২৩ কিলোমিটার মহাসড়কে ১৩টি সেক্টরের মাধ্যমে ৪ হাজার পুলিশের চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে সাদা পোশাকে এবং পোশাকে ফোর্স মোতায়েন থাকবে, যা ১৬ ডিসেম্বর শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ জনগণ যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ থাকবে।”
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নে প্রথম বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে পাথালিয়া, টাটীবাড়ী, কুরগাঁওসহ তিনটি মৌজার ৮৪ একর জায়গা নিয়ে শুরু হয় স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ।
ঢাকা/মাসুদ