ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বাবাদের ফিরে আসার অপেক্ষায় তারা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২১, ২৮ মে ২০২১   আপডেট: ১৮:২৫, ২৮ মে ২০২১

বহুদিন ধরে নিখোঁজ বাবা। বেঁচে আছেন, না কি মারা গেছেন, জানা নেই। তবু মনে আশা, বাবা ফিরে আসবেন শিগগির।

শুক্রবার (২৮ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে মানববন্ধন করে ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সংগঠন। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সন্তানদের মুখে ছিল বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি।

সন্তানদের পাশাপাশি মানববন্ধনে অংশ নেন গুম হওয়া ব‌্যক্তিদের বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন। তাদের কারও হাতে, কারও গলায় ঝোলানো ছিল গুম হওয়া স্বজনের ছবি। মানববন্ধনের ব্যানারে লেখা ছিল ‘গুম বন্ধ কর, গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দাও।’

গুম হওয়া কাউসারের মেয়ে লামিয়া ইসলাম মীম বলেন, ‘১০ রোজার দিন আমার হাত কেটে গেছে। অনেকখানি কেটে গেছে। ৮টা সেলাই লেগেছে হাতে। আমার বাবা আমার কাছে একটু আসেনি। আমি আমার বাবাকে খুব মিস করেছি। বাবা এসে আমার হাতটা একটু দেখেনি। বাবাকে আমার কাছে ফেরত চাই। আপনারা আমার বাবাকে ফেরত দিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই দাবি, আমার বাবাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। আমি আর কিচ্ছু চাই না। শুধু বাবাকে ফেরত চাই।’

গুম হওয়া আরেক ব্যক্তির ছেলে আহাদ বলেন, ‘সবার পাপা আছে, শুধু আমার পাপা নেই। আমি আমার পাপাকে চাই। আমি আমার পাপার সাথে ঈদ করতে পারলাম না। নামাজ পড়তে যেতে পারলাম না। প্রতি ঈদে পাপাকে দেখতে পাই, কিন্তু এবার পেলাম না।’

খালেদ হাসান সোহেলের ছেলে আরিয়ান বলেন, ‘বাবার সাথে ঈদ করতে চাই। সবাই বলে, বাবা আসবে। কিন্তু এখনও দেখিনি। বাবার সাথে ঘুরতে যেতে চাই। কিন্তু বাবা আর আসছে না। বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’

বিএনপির ‘নিখোঁজ’ নেতা এম ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াসও অংশ নেন মানববন্ধনে। তিনি বলেন, ‘২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল আমার বাবাকে তুলে নেওয়া হয়। সে সময় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সিলেট থেকে বিএনপির চার নেতা একইভাবে নিখোঁজ হন। ওই সময় সিলেটে টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। দেশের স্বার্থে আমার বাবা ওই আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন। আন্দোলনের কিছু অংশ সরকারের বিরুদ্ধে যায়। এ কারণেই আমার বাবাকে গুম করা হয়েছে।’

আবরার ইলিয়াস বলেন, ‘আমরা এখনও বাবার অপেক্ষার আছি। কারণ, আমরা দেখছি, বহু বছর পর অনেকে গুম নামের কারাগার থেকে ফিরে এসেছেন।’

কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আনিশা বলে, ‘২০১৯ সালের ১৯ জুন বাবা গুম হন। র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও সরকার আমাদের সাহায্য করেনি। আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি না। প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে মনে হয়, এই বুঝি বাবা ফিরে এলো। প্রতিদিন বাবার অপেক্ষায় থাকি। প্রধানমন্ত্রীও বাবাহারা। তিনি বোঝেন বাবা না থাকার কষ্ট। বাবার জন্য সন্তান কতটা কষ্ট পায়। আমরা বাবার সন্ধান চাই।’

ঢাকা/মামুন/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়