ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

অমর একুশে: এখনও সর্বস্তরে প্রচলন হয়নি বাংলার 

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২  
অমর একুশে: এখনও সর্বস্তরে প্রচলন হয়নি বাংলার 

দেখতে দেখতে কয়েক দশক পার করেছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন (১৯৫২-২০২১)। কিন্তু এখনো প্রত্যাশা পূরণ হয়নি ভাষা আন্দোলনের। এছাড়া যথাযথ প্রয়োগে বাংলা ভাষার মজবুত ভিত্তিও গড়ে উঠেনি। অথচ ‘মোদের গরব মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা’ স্লোগানে অনুপ্রাণিত হয়ে মায়ের ভাষায় কথা বলার দাবিতে বুকের রক্ত ঢেলে রাজপথ লাল করেছিল  সালাম, বরকত, রফিক, জব্বাররা। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও আজও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হয়নি। বিশিষ্ট ভাষাবিদরা বার বার ভাষানীতি প্রণয়নের দাবি জানালেও আজ তা দাবিতেই বন্দি  আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম ইংরেজি কিংবা বাংলার দিয়ে রয়েছে। যেমন- পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), সিনিয়র অর্থ নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ভাগ্যকুল সুইট, মুসলিম সুইটস, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোদ রাজধানীতে রয়েছে। এছাড়াও সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড এখন ইংরেজিতে লিখছে। কেউ কেউ ইংরেজি শব্দ বাংলায় লিখছেন। বাংলা বানান  চালিয়ে যাচ্ছেন ইংরেজি শব্দের মাধ্যমে। কোথাও কোথাও বাংলা পুরোপুরি উধাও।

ভাষাবিদরা বলছেন, ২০১৪ সালে উচ্চ আদালতের রায় এবং সরকারি আদেশ, পরিপত্র বা বিধিতে বাংলা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবুও সরকারি কাজের সবক্ষেত্রে আজও নিশ্চিত করা যায়নি রাষ্ট্রভাষা বাংলার ব্যবহার।

এদিকে আধুনিকতার নামে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, কলেজ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ভাষা চরমভাবে উপেক্ষিত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের তালিকায় বাংলা নামে নেই বললেই চলে। দেশের ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮৭টিতেই নেই বাংলা বিভাগ। বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার প্রধান মাধ্যম ইংলিশ। 

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার হোসেন বলেছেন, ‘কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখেছিলেন- ভাষাদূষণ নদীদূষণের মতোই বিধ্বংসী। প্রতিনিয়ত দূষণ হচ্ছে ভাষা। যা খুবই দুঃখজনক। ইংরেজি জানতে হবে, তবে বাংলাকে বাদ দিয়ে নয়। বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে কথা বললে ভাষাকে অবমাননা করা হয়। দ্রুতই এই ভাষাদূষণ বন্ধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে বাংলা হারাবে তার নিজস্ব সত্ত্বা। বাংলা ভাষার জন্য রক্ত ঝরেছে। সেই ভাষা নিয়ে এখন উদাসীন। 

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট (নিমকো) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর কাঁটাবন থেকে কলাবাগান এলাকায় ৫০০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৫১টির নামফলক লেখা হয়েছে বাংলা হরফে। ইংরেজিতে লেখা নামফলকের সংখ্যা ২৮০টি। বাংলা ও ইংরেজি মিশিয়ে বিভিন্ন ধরণের নামফলক রয়েছে ১৬৯টি।

‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে। এ আইনের ৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, এ আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস-আদালত, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশিদের সাথে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন আদালতের ছওয়াল জওয়াব এবং অন্যান্য আইনানুগত কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে। কোনো কর্মস্থলে যদি কোনো ব্যক্তি বাংলা ভাষা ব্যতীত অন্য কোনো ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন, তাহলে উহা বে-আইনি ও অকার্যকর বলে গণ্য হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুদ্ধ বাংলা ভাষা শিক্ষা লাভ করলেও কোথাও নেই শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষার ব্যবহার। এছাড়া সিনেমা, নাটক, বিজ্ঞাপন, টকশো ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে আঞ্চলিক ভাষায়। অনেক বিদেশি বাংলা ভাষা শিখতে চাইলেও বাংলা বইয়ের শব্দের সাথে চলমান ও প্রচলিত নাটক-সিনেমার মিল না পাওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছেন।

এ বিষয়ে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরীন বলেছেন, বাংলা ভাষায় সাইনবোর্ড নিশ্চিতে অভিযান চালানোসহ জরিমানা করা হয়।   

ভাষা সৈনিক আবদুল গফুর বলেছেন, ষাট থেকে আশির দশক পর্যন্ত দেশের প্রায় সব সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা হতো।    ইংরেজি বানানে বাংলাও খুব একটা চোখে পড়তো না। এখন বাংলা বানানে সাইনবোর্ড চোখে পড়ে না। বর্তমানে বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলে বাংলা ভাষাকে অবমাননা করা হয়। দ্রুতই এই দূষণ বন্ধ করতে হবে।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়