ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কলেজ সরকারিকরণের নামে উৎকোচ, জানাজানিতে ফেরত!

জাহিদুল হক চন্দন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ২৩ নভেম্বর ২০২২  
কলেজ সরকারিকরণের নামে উৎকোচ, জানাজানিতে ফেরত!

মানিকগঞ্জের সিংগাইর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. নূরুদ্দিনের বিরুদ্ধে কলেজ সরকারিকরণের নামে শিক্ষকদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সেই টাকা শিক্ষকদের ফেরত দিয়েছেন তিনি। 

তবে অধ্যক্ষের দাবি, সরকারিকরণের নামে টাকা উৎকোচ নেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তার কাছ থেকে জানার পর সেই টাকা ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক শফিকুল ইসলাম খানকে ফেরত দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। 

এদিকে কলেজের শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যক্ষের সম্মতিতে শফিকুল ইসলাম খান বিশ জন শিক্ষকের কাছ থেকে সরকারিকরণের কথা বলে দশ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। তবে প্রভাষক শফিকুল ইসলাম দুই লাখ টাকা উৎকোচ নেওয়ার বিষয় স্বীকার করলেও সেই টাকা একদিন পরেই ফেরত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি মাসের ৭ নভেম্বর সিংগাইর সরকারি ডিগ্রি কলেজে চলতি মাসে ‘সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্নীকরণ বিধিমালা, ২০১৮’ বিধি মোতাবেক পত্র জারি করা হয়। এ উপলক্ষে ৮ নভেম্বর অধ্যক্ষ নূর উদ্দিন শিক্ষকদের নিয়ে জরুরি সভা ডাকেন। সভায় তার একক প্রচেষ্টায় কলেজটি সরকারিকরণ হয়েছে বলে দাবি করেন। 

এছাড়া কলেজের হর্তাকর্তা একমাত্র তিনিই। তার সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে ‘ভালো হবে না’ বলে হুশিয়ারি দেন। সভার পর অধ্যক্ষের আস্থাভাজন শফিকুল ইসলাম খান সরকারিকরণের খরচ ও এজি অফিসে খরচের জন্য টাকা দাবি করেন। পরে আরেক দফায় সকল শিক্ষকদের নিয়ে শফিকুল ইসলাম সভা করে দশ হাজার করে টাকা তোলেন।

উৎকোচ দেওয়ার সিদ্ধান্তে একাধিক শিক্ষকের সমর্থন না থাকলেও ঝামেলা এড়াতে তারাও সমপরিমাণ টাকা দেন। যদিও বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ জেনে যাওয়ায় পরের দিন টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘শফিকুল ইসলাম খান অধ্যক্ষ মহোদয়ের কাছের মানুষ। সরকারিকরণ ও এজি অফিসের জন্য অধ্যক্ষ মহোদয় টাকা চেয়েছেন বলে তিনি আমাদের জানান। না হলে বেতন তোলা থেকে শুরু নানা বিষয়ে ঝামেলা হওয়ার কথা বলেন। ঝামেলা এড়াতে সবাই দশ হাজার করে টাকা দিয়েছি। পরে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় ফেরত পেয়েছি। এর আগেও গণমাধ্যমে অধ্যক্ষের অনিয়মের বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়েছিলো। তবে তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এখন আর কেউ তার ব্যাপারে কথা বলার সাহস পান না।’

এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘শিক্ষকদের সম্মতিতে বেতনের ঝামেলা এড়াতে অফিস খরচের বিষয়ে টাকা তোলা হয়েছিল। তবে সেই টাকা প্রয়োজন না হওয়ায় ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মহোদয় কিছু জানেন না।’ 
তবে উৎকোচ গ্রহণ করা কি ঠিক হয়েছিলো কি না এমন প্রশ্নে উত্তর দেননি তিনি।

সিংগাইর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. নূরুদ্দিন বলেন, ‘সরকারিকরণ বা এজি অফিসের খরচ বাবদ উৎকোচ নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমাকে জানানোর পর আমি টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। কোন শিক্ষক বা ব্যক্তি যদি আমার অগোচরে কোন অন্যায় করে তার দায়ভার তো আমি নিতে পারি না।’

এ বিষয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি মানিকগঞ্জ জেলা ইউনিটের সভাপতি সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘অফিস খরচের নামে শিক্ষকের টাকা লেনদেনের বিষয়টি দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে প্রভাব ফেলে। দুয়েকটি এ ধরনের ঘটনায় শিক্ষক সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।’

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্তে প্রমাণিত হলে দোষীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।’

মানিকগঞ্জ/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়