ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

পুরান ঢাকায় হালখাতা উৎসবের প্রস্তুতি

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪২, ১৩ এপ্রিল ২০২৩   আপডেট: ১৩:৫৪, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
পুরান ঢাকায় হালখাতা উৎসবের প্রস্তুতি

ছবি: রাইজিংবিডি

শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) শুরু হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। নতুন বছরের শুরুতেই নতুন খাতা খোলার উৎসব হালখাতা। গত এক বছরের ক্রেতা-বিক্রেতার পুরোনো সব পাওনা চুকিয়ে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন মিষ্টিমুখ করানো হবে। নতুন বর্ষকে স্বাগত জানিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা সম্পর্কে যাত্রা শুরু হবে।

ব্যবসায়ীরা তাদের নিয়মিত ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পুরান ঢাকার একাধিক ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে বলেন, কালের বিবর্তনে হালখাতার উৎসাহ-উদ্দীপনা অনেকটাই কমে গেছে। এছাড়া কম্পিউটারের মাধ্যমে হিসাব করার ফলে লালসালুতে বাঁধাই করা হিসাব খাতার চল অনেক কমে গেছে। এখন অনেকটা নিয়ম রক্ষার জন্যই হালখাতার আয়োজন করা হচ্ছে। আগের মতো হালখাতায় এসে বাকি টাকা ফেরত দেওয়ার প্রবণতাটা কমায় উৎসাহে কিছুটা ভাটার টান পড়েছে।

পড়ুন: চারুকলায় চলছে বর্ষবরণ প্রস্তুতি

বুধবার (১২ এপ্রিল) পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, শ্যামবাজার, ইসলামপুর, বাবুবাজার, চকবাজার ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ধোঁয়ামোছার কাজ করতে দেখা গেছে। সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সরঞ্জাম। অনেকে আবার মিষ্টির দোকানে পয়লা বৈশাখের দিনের জন্য মিষ্টির অর্ডার দিয়েছেন।

তাঁতীবাজারের সাথী জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী হাজী নুর আলম বলেন, প্রতি বছরই আমরা হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। পয়লা বৈশাখের দিনে দোকানে আগরবাতি জ্বালিয়ে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। নিয়মিত ক্রেতা ও আমন্ত্রিত অতিথিদের মিষ্টি ও নিমকি দিয়ে আপ্যায়ন করি। নতুনভাবে বছর শুরু করার চেষ্টা করি। তবে আগের মতো হালখাতায় এসে মহাজনদের বাকি টাকা ফেরত দেওয়ার প্রবণতাটা নেই। ফলে উৎসাহে কিছুটা ভাটার টান পড়েছে।

হালখাতা উপলক্ষে ধোঁয়ামোছা করছিলেন তাঁতীবাজার স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ী সবুজ রায়।  তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে বাবা-জ্যাঠাদের হালখাতার আয়োজন করতে দেখে এসেছি। ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো আমাদের অনেকেই হালখাতার আয়োজন করে। যদিও এখন ডিজিটাল যুগ। কম্পিউটারে সব হিসাব করা হয়। বাকিও তেমন থাকে না। ফলে তেমন একটা বকেয়া আদায় হয় না।  তারপরও ঐতিহ্য রক্ষায় হালখাতা করব।

পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের একাধিক জুয়েলারি দোকানে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে তারা দোকান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ শেষ করেছেন। বৈশাখের প্রথমদিনে দোকান সাজানো হবে ফুল দিয়ে। পুরনো খাতার বদলে দোকানে উঠবে নতুন খাতা। নতুন করে হিসাব সাজানো হবে নতুন বছরের। প্রথম দিনে নিয়মিত ক্রেতাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে। সঙ্গে থাকবে ছোটখাটো উপহারসামগ্রীও। তবে রোজার দিনে এবার বৈশাখ হওয়ায় হালখাতা আর আগের মতো জমজমাট হবে না।

তাঁতীবাজারে ৩০ বছর ধরে ফেরি করে টালিখাতা বিক্রি করেন করিম মিয়া। কয়েকটি জুয়েলারি দোকানের সামনে পাওয়া যায় তাকে। তিনি বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে ফেরি করে এখানে টালিখাতা বিক্রি করি। অনেকেই আমার কাছ থেকে টালিখাতা কেনেন। টালিখাতার বিক্রি গত কয়েক বছরে অনেক বেশি কমেছে।

তাঁতীবাজারে সি ঘোষ জুয়েলার্সের কর্মচারী হরলা ঘোষ বলেন, এখন ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। আবার নানা জায়গায় নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বর্ণের দামও অনেক বেশি। দাম বেশি থাকায় স্বর্ণ এখন মানুষের নাগালের বাইরে।

তিনি বলেন, পয়লা বৈশাখ এবার রমজানে। দোকানে আসা রোজাদার ক্রেতাদের প্যাকেট দিয়ে অ্যাপায়ন করা হবে। দোকান এরই মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। নতুন বছরে নতুন খাতা খোলা হবে। পঞ্জিকা অনুযায়ী শনিবার এখানে হালখাতা অনুষ্ঠিত হবে। হালখাতার দিন দোকানের কাস্টমারদের মিষ্টমুখ করানো হবে। গত কয়েক বছর ধরে হালখাতা আর জমজমাট হচ্ছে না। হালখাতা উপলক্ষে নিয়মিত ক্রেতাদের আমরা চাবির রিং, ঘড়ি, পার্স, ক্যালেন্ডার দিয়ে থাকি।

জুয়েল জুয়েলার্সের কর্মচারী রনি সাহা বলেন, হালখাতা এবার বেশি ভালো হবে না। এবার বেচাকেনা কম। বঙ্গবাজার পুড়ে গেছে। সে কারণেও ক্রেতা কম। গত কয়েক বছর ধরে হালখাতায় এখন আর জৌলুস নেই। দাম বাড়াতে আরও বেচাকেনা কম। দোকান ফুল দিয়ে সাজানো হবে। এরই মধ্যে দোকান পরিষ্কার করা হয়েছে। সেদিনই নতুন খাতা খোলা হবে।

/এএএম/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ