ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

নারী দিবস

অটোরিকশার চাকা ঘুরলেই সংসার চলে সুমির

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫২, ৮ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১০:৫৬, ৮ মার্চ ২০২৪
অটোরিকশার চাকা ঘুরলেই সংসার চলে সুমির

অটোরিকশা চালাচ্ছেন সুমি। ছবি: মামুন খান

মা-বাবার কথা ঠিক তেমন মনে নেই সুমির। মায়ের স্নেহ, বাবার ভালোবাসা ভাগ্যে জোটেনি। ছোটবেলা থেকেই ফুফুর কাছে থেকে অভার-অনটনের সাথে লড়াই করে বেড়ে ওঠেন। বাসা বাড়িতে কাজ করতে করতেই তার বয়স বাড়ে। বয়স যখন ১৫/১৬, তখনই বিয়ে হয় ফরহাদ নামে এক রিকশাচালকের সঙ্গে।

কোনোরকমে চলছিল সংসার। একে একে জন্ম নেয় এক ছেলে ও তিন মেয়ে। সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন রিকশাচালক স্বামী। অসুস্থতা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় কোনো কাজই করতে পারছিলেন না তিনি। অভাব-অনটনে সংসার আর চলছিলো না। ছেলে-মেয়েদের খাওয়া-দাওয়া, স্বামীর চিকিৎসা দুশ্চিন্তায় স্থবির হয়ে পড়ে সুমির জীবন। তখন তার মাথায় ঢুকলো সন্তানদের জন্য তাকে লড়াই করতে হবে।  বাসা বাড়ির কাজে এত বড় সংসার টানা সম্ভব না। তাই অটোরিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন সুমি। সন্তানদের জন্য সুমির হাতে আজ অটোরিকশা। চাকা ঘুরলেই পরিবারে জোটে অন্ন, সবার মুখে ফোটে হাসি। প্রথম প্রথম ভয়ে হাত কাঁপলেও সময়ের ব্যবসানে সব সামলে নিয়েছেন তিনি।

রাস্তায় চলতে গিয়ে রিকশাচালকদের কটু কথা আর মানুষের অবহেলা সবকিছুকে হজম করেছেন সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। হয়তো থমকে গেলে সংসারের চাকায় বন্ধ হয়ে যেতে। রোদ, বৃষ্টি সব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে সুমির ইচ্ছা শক্তির যেন জয় হলো। তার রোজগারে স্বামীর চিকিৎসা, সন্তানদের লেখাপড়া চলছে কোনো রকমে। স্বপ্ন দেখেন অনেক কিছু। তবে সমাজের বিত্তবানদের কাছে আকুতি নিজের একটা অটোরিকশা হলে হয়তো আরও ভালোভাবে চলতে পারবেন তিনি। বর্তমানে যা রোজগার করেন তার একটি বড় অংশই দিয়ে দিতে হয় অটোরিকশার মালিককে।

স্বামী-সন্তান আর শ্বাশুড়িকে নিয়ে ছোট্ট একটি ঘর ভাড়া নিয়ে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া এলাকায় বসবাস করছেন সুমি। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠে ঘরের কিছু কাজকর্ম সেরে বেরিয়ে পড়েন। ফেরেন রাতে। খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকার বড় রাস্তা থেকে শুরু করে অলিগলিতে ছুটে চলছেন সুমি। স্বামী অসুস্থ। সাত জনের দায়িত্ব যে তার ওপর।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সংগ্রামী এই নারীর। সুমি বলেন, স্বামী অসুস্থ, কাজ করতে পারেন না। তারপরও চেষ্টা করেন। কাজ করলে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এজন্য তো রাস্তায় নামতে হয়েছে। কাজ না করলে তো খাবার জোটে না। আগে বাসায় বাসায় কাজ করতাম। বাস এক্সিডেন্টে আহত হয়েছিলাম। সেই ব্যথা এখনো শরীরে রয়ে গেছে। কাজ করতে পারি না। ব্যথা আরও বেড়ে যায়।

অটোরিকশা চালাতে গিয়ে কটাক্ষের শিকার হয়েছেন কি? জানতে চাইলে বলেন, ‘তেমন কোনো সমস্যায় পড়িনি। তবে রিকশাওয়ালারা অনেক সময় অনেক ভাষায় কথা বলে। মাঝে মধ্যে রাগ হয়। তারপরও কিছু বলি না। কাজ তো করতে হবে। না হলে তো সংসারের মানুষগুলো না খেয়ে থাকবে। অটোরিকশার চাকা ঘুরলে সংসার চলবে।’

সুমি বলেন, সাত জনের সংসার। আগে তো সংসারে অভাব অনটন লেগেই ছিলো। বাচ্চাদের তো মানুষ করতে হবে। ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করছে। তাদের স্কুলের বেতন, প্রাইভেটের বেতন দিতে হয়।

তিনি বলেন, একজন মেয়ে মানুষ শুধু শুধু কি অটো চালাতে রাস্তায় নামে। ঘর-সংসার ছেড়ে কেউ কি রাস্তায় আসতে চায়। বাধ্য হয়েছি। নিজের অটো নাই। ভাড়ায় চালাই। প্রতিদিন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা জমা দিতে হয়। নিজের একটা অটো থাকলে হয়তো আরও ভালো থাকতে পারতাম।

সুমির স্বামী ফরহাদ বলেন, আমার মাথায় সমস্যা আছে। রোদে কাজ করলে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। ডাক্তার দেখিয়েছি, বলছে ভালো হবে না। ঠিকমত কাজ করতে পারি না। কাজ না করলে সংসারও চলে না। আমি যতটুকু পারি তাকে (বউকে) সাহায্য করি। তবে  এখন সেই সংসার চালায়। আমি বাসায় থাকি। বাচ্চাদের দেখাশোনা করি। আমার স্ত্রী অটো চালানো শুরু করার পর সংসারে অভাব কমেছে।

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়