ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৭০ ভাগ ব‌্যবসায়ী 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫০, ৬ মে ২০২৪  
উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৭০ ভাগ ব‌্যবসায়ী 

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৬৯ দশমিক ৮৬ শতাংশই ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন কৃষিকাজকে। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন আইনজীবী (৬.৩২ শতাংশ) ও শিক্ষক (৪.১৫ শতাংশ)।

দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সোমবার (৬ মে) রাজধানীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২৪-এর প্রথম ধাপের প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণের তথ্য তুলে ধরতে টিআইবি এ সংবাদ সম্মেলরে আয়োজন করে। 

টিআইবির বিশ্লেষণে বলা হয়, উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৭০ শতাংশই ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে কোটিপতি ৯৪ জন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোটিপতি ছিলেন ৩৭ জন। গত নির্বাচনের তুলনায় এ সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।

টিআইবি জানিয়েছে, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের মধ্যে ১৭ জন কোটিপতি এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে কোটিপতি ৬ জন। গত নির্বাচনের তুলনায় এই দুই পদের ক্ষেত্রেও কোটিপতির সংখ্যা তিন গুণের কাছাকাছি।

অস্থাবর সম্পদের ভিত্তিতে এই কোটিপতির হিসাব করা হয়েছে। ভূমির মতো স্থাবর সম্পদের মূল্য নির্ধারণ কঠিন হওয়ায় কোটিপতির হিসাবে তা আনা হয়নি বলে জানিয়েছে টিআইবি।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫৬০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬১১ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৩৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রথম ধাপের ভোট হবে ৮ মে।

ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদেরও প্রায় ৬৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৫২ শতাংশই গৃহিণী—গৃহস্থালির কাজকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ ব্যবসায়ী। পরের অবস্থানে আছেন সমাজকর্মী/সংগঠক। এর হার ৫ শতাংশ। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছেন শিক্ষক (৪.৮৭ শতাংশ) ও কৃষিজীবী (৩.৪৮ শতাংশ)।

টিআইবি বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট ক্রমেই বাড়ছে। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের সংখ্যা ২০১৪ সালের চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে, গৃহিণী/গৃহস্থালি, কৃষিজীবী ও শিক্ষক প্রার্থীদের পরিমাণ দিন দিন কমছে।

আইনি সীমার বেশি জমি ৮ প্রার্থীর
টিআইবির বিশ্লেষণে জমির মালিকানার দিক দিয়ে আইনি সীমা অতিক্রম করেছেন ৮ জন প্রার্থী। আইন অনুযায়ী, একজন নাগরিক সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা বা ৩৩ একর জমির মালিক হতে পারেন। আইনি সীমার বাইরে ৮ জন প্রার্থীর মোট অতিরিক্ত জমি রয়েছে ১৪৪ দশমিক ৩৮ একর। এ তালিকার শীর্ষে আছেন বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এ কে এম জাহাঙ্গীর। তার মোট জমির পরিমাণ ৭৪ দশমিক ২৭ একর। আট নম্বরে থাকা সীতাকুণ্ডের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আরিফুল আলম চৌধুরীর রয়েছে ৪০ দশমিক ১ একর জমি।

অস্থাবর সম্পদে শীর্ষে কামরুজ্জামান ভূঁইয়া

প্রার্থীদের মধ্যে অস্থাবর সম্পদের তালিকার শীর্ষে আছেন গোপালগঞ্জ সদরের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী কামরুজ্জামান ভূঁইয়া। তার মোট অস্থাবর সম্পদ ২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকার। তালিকার দুই নম্বরে আছেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার আনোয়ারুল ইসলাম। তার সম্পদ ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকার। তৃতীয় অবস্থানে আছেন আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী। তার অস্থাবর সম্পদমূল্য প্রায় ১৯ কোটি টাকা। আতাহারের বাবা একরামুল করিম চৌধুরী নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য। আতাহারের মতো আরও দুজন প্রার্থী এই তালিকায় রয়েছেন, যারা সংসদ সদস্যদের স্বজন।

সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে রামগড়ের প্রদীপ কারবারীর
২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় আয় বৃদ্ধির দিক দিয়ে সবার ওপরে খাগড়াছড়ির রামগড়ের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী। তার সম্পদ বেড়েছে ৩ হাজার শতাংশের বেশি। ১ হাজার শতাংশের বেশি আয় বেড়েছে আরও চার প্রার্থীর। তাদের দুজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও দুজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী।

সবচেয়ে বেশি অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ফুলছড়ির পারভেজের
২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে গাইবান্ধার ফুলছড়ির চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জি এম সেলিম পারভেজের। তার সম্পদ বেড়েছে ৪ হাজার ২৫১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ১ হাজার শতাংশের বেশি অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে আরও পাঁচ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর।

পাংশার ফরিদের নির্ভরশীলদের সম্পদ বেশি বেড়েছে
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. ফরিদ হাসানের (ওদুদ) স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বেড়েছে ১২ হাজার ৫০০ শতাংশের কাছাকাছি।

১০ বছরে আয় বৃদ্ধিতে শীর্ষ নির্ভরশীলরা
১০ বছর আগের চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বা ২০১৪ সালের তুলনায় সর্বোচ্চ আয় বেড়েছে যে প্রার্থীর, তিনি হলেন গাজীপুরের কাপাসিয়ার নারী ভাইস চেয়ারম্যান রওশন আরা সরকার। ১০ বছরে তার আয় বেড়েছে ১৮ হাজার শতাংশের বেশি। পরের অবস্থানে গাজীপুর সদরের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রীনা পারভীন। তার আয় বেড়েছে ১ হাজার ৭৪ শতাংশ। তিন নম্বরে আছেন কুমিল্লার লাকসামের ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মহব্বত আলী। তার আয় বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ শতাংশ। এক দশকে আয় বৃদ্ধিতে উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা পাল্লা দিয়েছেন সংসদ সদস্যদের সঙ্গে। ১৫ বছরে সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে আয় বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ২০ হাজার ১৯২, সেখানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থীর সম্পদ ১০ বছরে বেড়েছে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার শতাংশের বেশি।

নঈমুদ্দীন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়