ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

স্ট্রোকের লক্ষণ চেনার উপায় ‘ফাস্ট’

দেহঘড়ি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ১৬ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১২:০০, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
স্ট্রোকের লক্ষণ চেনার উপায় ‘ফাস্ট’

স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এতে মস্তিষ্কের রক্তনালিতে জটিলতা দেখা দেয়। হঠাৎই কার্যকারিতা হারায় মস্তিষ্কের একাংশ। দ্রুত এর চিকিৎসা শুরু করা না গেলে রোগী পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যু পর্যন্ত পর্যন্ত হতে পারে।

স্ট্রোকের লক্ষণ ও উপসর্গ সহজে চেনার জন্য বিশ্বব্যাপী ‘ফাস্ট’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এটি একটি অ্যাক্রোনিম শব্দ। অর্থাৎ কিছু শব্দের প্রথম অক্ষর নিয়ে গঠিত শব্দ। আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন এর আবিষ্কার।

স্টোকের লক্ষণ ও পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে ‘ফাস্ট’ (ইংরেজি অক্ষর এফ, এ, এস, টি) শব্দটি মনে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। শব্দটির প্রথম তিন অক্ষরে স্ট্রোকের উপসর্গ রয়েছে, শেষ অক্ষরটি এসব উপসর্গ লক্ষ্য করলে কি করতে হবে তা নির্দেশ করে।

*এফ: এই অক্ষর দিয়ে ফেইস ড্রুপিং বোঝায়, যার মানে হলো মুখ বাঁকা হয়ে যাওয়া। যদি কারো মুখের একপাশ বেঁকে যায় অথবা ঝুলে পড়ে অথবা অবশ হয়ে যায়, তাহলে এটি হচ্ছে স্ট্রোকের একটি অতি পরিচিত লক্ষণ। কারো মুখে এ লক্ষণটি দেখলে তাকে হাসতে বলুন- তার হাসি একপেশে বা ভারসাম্যহীন হলে তা স্ট্রোকের উপসর্গ হিসেবে ধরে নিতে হবে।

* এ: এই অক্ষর দিয়ে আর্মস উইকনেস বোঝায়, অর্থাৎ বাহুতে দুর্বলতা। স্ট্রোকের ফলে একটি বাহু অসাড় বা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কেউ তার এক হাত ওপরে ওঠাতে পারলেও অপর হাতটি ওপরে তুলতে ব্যর্থ হলে অথবা হাতটি নিচের দিকে ঝুলে পড়লে এটিকে বড় ধরনের সতর্ককারী লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

* এস: এই অক্ষর দিয়ে স্পিচ ডিফিকাল্টি বোঝায়, অর্থাৎ কথা বলতে সমস্যা। স্ট্রোকের আরেকটি সর্বাধিক পরিচিত লক্ষণ হচ্ছে অস্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলা অথবা কথা জড়িয়ে যাওয়া। কারো মধ্যে এ লক্ষণ লক্ষ্য করলে তাকে একটি সাধারণ বাক্য একাধিকবার বলতে বলুন- তার কথা বলতে সমস্যা হলে অথবা তার কথা বোঝা না গেলে তাকে জরুরি মেডিক্যাল সেবার আওতায় আনতে হবে।

* টি: এই অক্ষর দিয়ে টাইম টু কল ইমার্জেন্সি নম্বর বোঝায়, অর্থাৎ যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

আচমকা মুখ বেঁকে যাওয়া, শরীরের কোনো একটা দিক অবশ হয়ে যাওয়া, হাত ওপরে তুলতে না পারা, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া, শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে পড়ে যাওয়া/জ্ঞান হারানো- এসব লক্ষণের প্রেক্ষিতে রোগীকে বিছানায় বা মেঝেতে কাত করে শুইয়ে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে বা দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

রোগীকে বাতাস করতে হবে, অথবা আলো বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে। গায়ে থাকা কাপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে যেমন: টাই, বেল্ট, স্কার্ফ, অন্তর্বাসের বাঁধন খুলে দিতে হবে যেন রোগী শ্বাস নিতে পারেন। রোগী জ্ঞান হারালে তার মুখ খুলে দেখতে হবে কিছু আটকে আছে কিনা। ভেজা কাপড় দিয়ে মুখে জমে থাকা লালা, খাবারের অংশ বা বমি পরিষ্কার করে দিতে হবে। এ সময় রোগীকে পানি, খাবার বা কোনো ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। কারণ একেক ধরনের স্ট্রোকের ওষুধ একেকরকম। 

স্ট্রোকের প্রধান কারণ

স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ উচ্চ রক্তচাপ। তবে আরও কয়েকটি কারণে স্ট্রোক হতে পারে, সেগুলো হল:

রক্তে কোলেস্টোরেলের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলে।

উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে। হৃদরোগ থাকলে।

মানসিক চাপ, অতিরিক্ত টেনশন, অবসাদের মতো মানসিক সমস্যা থাকলে।

সারাদিন শুয়ে বসে থাকলে, কায়িক পরিশ্রম না করলে, ওজন অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে।

অস্বাস্থ্যকর অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস। বিশেষত অতিরিক্ত তেল ও চিনিযুক্ত, ভাজাপোড়া খাবার ও পানীয় খেলে।

ধূমপান, তামাক-জর্দা বা অন্যান্য মাদক সেবন, মদপান।

প্রতিরোধের উপায়

স্ট্রোক অনেকাংশেই প্রতিরোধযোগ্য। এ জন্য স্ট্রোকের ঝুঁকি সম্পর্কে জানা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চলা উচিত। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি হলো নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা, নিয়ন্ত্রণে রাখা। অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার না খাওয়া, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা। সঠিক নিয়মে সময়মতো খাবার খাওয়া। নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে সতর্কভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা। প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম করা বা সময় করে হাঁটা, সম্ভব হলে হালকা দৌড়ানো। শরীর যেন মুটিয়ে না যায়, অর্থাৎ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। শাকসবজি, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, শুঁটকি, দুধ, আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।

তথ্যসূত্র: দ্য হেলদি

/ফিরোজ/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়