ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

ঢাকা উত্তরে বাড়লো বিদ্যুৎ সক্ষমতা, নিশ্চিত হবে উন্নত সেবা

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২০, ২৮ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২২:২১, ২৮ নভেম্বর ২০২৩
ঢাকা উত্তরে বাড়লো বিদ্যুৎ সক্ষমতা, নিশ্চিত হবে উন্নত সেবা

অত্যাধুনিক ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিতে ধারাবাহিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এবার রাজধানীর উত্তর অংশে সক্ষমতা বাড়িয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। সংশ্লিষ্ট এলাকার আগামী ২৫ বছরের লোড চাহিদা ও গ্রাহক সংখ্যা বিবেচনায় রেখে রাজধানীর আদাবর ও মান্ডায় দুটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র  করেছে ডিপিডিসি।

শহরের ভূমির দুস্প্রাপ্যতা বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হয়েছে। এই ধরনের ট্রান্সফর্মার এর আগে কখনও বাংলাদেশে স্থাপন করা হয়নি। নব্যনির্মিত সাবস্টেশন দুটি চালু করার মাধ্যমে ডিপিডিসির নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ বিতরণের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান রাইজিংবিডিকে জানান, বর্তমান সরকার প্রথম থেকেই বিদ্যুৎ খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। সরকারের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুতের কোনো বিকল্প নাই। উপকেন্দ্রসমূহে দুটি ভিন্ন গ্রিড হতে তেত্রিশ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড ডাবল সার্কিট স্থাপনের মাধ্যমে ডুয়েল সোর্স নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া, এগারো কেভি ফিডারসমূহের মধ্যে আন্তঃসংযোগ করা হয়েছে।

‘ফলে, আদাবর তেত্রিশ/এগারো কেভি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে চন্দ্রিমা মডেল টাউনসহ পার্শ্ববর্তী আদাবর ও মোহাম্মদপুর এলাকার গ্রাহকরা এবং মান্ডা তেত্রিশ/এগারো কেভি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রীন মডেল টাউনসহ পার্শ্ববর্তী মান্ডা ও মুগদাপাড়া এলাকার গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ উপভোগ করবেন।’

তিনি বলেন, উপকেন্দ্রসমূহে আধুনিক জিআইএস প্রযুক্তির সুইচ গিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে, ফলে স্বল্প স্থানে উপকেন্দ্র নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রুভমেন্ট-এর জন্য এখানে রয়েছে ক্যাপাসিটর ব্যাংক। উপকেন্দ্রসমূহে সাবস্টেশন অটোমেশন সিস্টেম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, ফলে নির্দিষ্ট স্থান হতে নিখুঁতভাবে উপকেন্দ্র পরিচালনা সম্ভব হবে।

মঙ্গলবার ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এর নব্য নির্মিত আদাবর ও মান্ডা জিআইএস সাবস্টেশন চালু করা হয়েছে। ‘ডিপিডিসি’র আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত এই দুটি সাবস্টেশন চালুকরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো.  হাবিবুর রহমান (বিপিএএ, সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগ ও চেয়ারম্যান, ডিপিডিসি পরিচালনা পর্ষদ)।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টিবিইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যাকি চেং ডন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি এন্ড প্রকিউরমেন্ট) ও প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহ নোমান, প্রধান প্রকৌশলী মর্তুজা কামরুল আলম প্রমুখ।

এছাড়া অনুষ্ঠানে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক, প্রধান প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

ডিপিডিসি সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং এর উপস্থিতিতে প্রকল্পটির চুক্তি সম্পাদিত হয়। যার ধারাবাহিকতায় হাতে নেওয়া হয় ‘ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প। চীনের টিবিইএ কোম্পানি লিমিটেড ঠিকাদার হিসেবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এই প্রকল্পের আওতায় নতুন ১৪টি ১৩২/৩৩ কেভি ও ২০টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ এবং বিদ্যমান ০৬টি ১৩২/৩৩ কেভি ও ০৩টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র সংস্কার এর মাধ্যমে ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া, প্রকল্পের আওতায় মোট ৬৫৩ কিমি ১৩২ কেভি, ৭০০ কিমি ৩৩ কেভি এবং ৫৬৭ কিমি ১১ কেভি, আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপন করা হবে। অপটিক্যাল ফাইবারসহ ভূ-গর্ভস্থ ক্যাবল নেটওয়ার্ক নির্মাণ করা হবে। এতে ডিপিডিসি এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা বাড়বে। ধানমন্ডি এলাকার ২০ কিলোমিটার ওভারহেড বৈদ্যুতিক লাইন ভূগর্ভস্থ বিতরণ ব্যবস্থায় রূপান্তর করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে আদাবর (চন্দ্রিমা মডেল টাউন) ও মান্ডা উপকেন্দ্র নির্মাণকাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) ও প্রকল্প পরিচালক আবদুল্লাহ নোমান রাইজিংবিডিকে বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিপুলসংখ্যক কনস্ট্রাকশন হচ্ছে। বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে অনেক। আগামী ২৫ বছরের লোড চাহিদা ও গ্রাহক সংখ্যা বিবেচনা নিয়ে উপকেন্দ্রের যন্ত্রপাতিসমূহের ডিজাইন এবং স্পেসিফিকেশন প্রস্তুত করা হয়েছে। ঢাকা শহরে ভূমির দুষ্প্রাপ্যতা বিবেচনায় উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন (৩৫/৫০ এমভিএ) পাওয়ার ট্রান্সফর্মার ডিপিডিসি কর্তৃক স্থাপন করা হয়েছে। এ ধরনের উচ্চক্ষমতার পাওয়ার ট্রান্সফর্মার এর আগে কখনও বাংলাদেশে স্থাপন করা হয়নি। প্রতিটি উপকেন্দ্র থেকে ১০০ এমভিএ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এতে কোয়ালিটি ও অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ডিপিডিসি একটি অত্যাধুনিক স্ক্যাডা সেন্টার স্থাপন করবে, যা জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের সাথে সংযুক্ত থাকবে। অন্যদিকে, উপকেন্দ্রসমূহে রয়েছে অত্যাধুনিক সাবস্টেশন অটোমেশন ও কমিউনিকেশন সিষ্টেম, যা অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে সেন্ট্রাল স্ক্যাডা সিষ্টেমের সাথে সংযুক্ত থাকবে। এতে করে স্বল্প সময়ের মধ্যে স্বয়ংক্রিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ফল্ট সনাক্তকরণ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রি-ষ্টোর করা সম্ভব হবে। ফলে, উন্নত বিশ্বের অনুরূপ ডিপিডিসি এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আটোমেশন এর আওতায় আসবে। এছাড়া, সেন্ট্রাল স্ক্যাডা সিষ্টেমের মাধ্যমে উপকেন্দ্রের ইক্যুইপমেন্টসমূহ কন্ট্রোলের পাশাপাশি সিকিউরিটি সিস্টেম এবং অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিংসহ আইপি ফোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

ডিপিডিসি সূত্রে জানা গেছে, উপকেন্দ্র ভবনগুলোকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় করে তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া ট্রান্সফর্মারের অগ্নি নির্বাপনের জন্য আধুনিক এবং স্বয়ংক্রিং ওয়াটার স্প্রিংকলার এর পাশাপাশি ভূ-গর্ভস্থ বিশাল ওয়াটার রিজার্ভার রাখা হয়েছে, ফলে যদি কখনও আগুন লাগে তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রান্সফরমারগুলিতে ৭০ মিনিট ওয়াটার স্প্রে করা সম্ভব হবে। অন্যান্য ফ্লোরে সেনসেটিভ যন্ত্রাদি থাকায়, গ্যাস ফায়ার ফাইটিং এর সাথে ওয়াটার ফায়ার ফাইটিং এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিটি ভবনে ফায়ার এক্সজিটসহ দুই দিকে দুইটি সিড়ি রাখা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী উপকেন্দ্র ভবনের দেয়ালগুলো হোলো ব্রিক দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে, ফলে ভবনের অভ্যন্তরে ঠান্ডা রাখার জন্য এয়ারকুলারের ব্যবহার কমে যাবে। এছাড়া এইচভিএসি সিষ্টেম ব্যবহার করার ফলে এয়ারকুলারের ব্যবহার কমিয়ে ন্যাচারাল বাতাস ব্যবহার করে ভবনের অভ্যন্তরে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সর্বোপরি বাহ্যিক আর্কিটেকচার ভিউ এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে ভবনগুলি আইকনিক হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ডিপিডিসির কর্মকাণ্ডের প্রসংসা করেন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গুণগত মান বজায় রেখে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার জন্য সবাইকে সচেষ্ট থাকার জন্য আহ্বান জানান।

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়