ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের ‘পদক্ষেপের’ আশায় বিএনপি

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৭:১৫, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের ‘পদক্ষেপের’ আশায় বিএনপি

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসা শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। প্রধান ফটকের ভেতরে চলছে ধোয়ামোছার কাজ

বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোটের দাবি উপেক্ষা করেই গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ ২৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না থাকলেও উল্লেখযোগ্য কোনও সহিংসতা ছাড়াই ভোট গ্রহণ শেষ হয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানালেও, তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটির দাবি, জনগণ এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ভোটদানে বিরত ছিলেন। ফলে, নির্বাচন-পরবর্তীতে এখন সাধারণ জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লিফলেট বিতরণ করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। অপরদিকে, নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবারও সরকার গঠন করেছে আ.লীগ। 

নির্বাচনের পরও আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে, নির্বাচনের পর দলীয় কর্মসূচি নিয়ে প্রতিনিয়ত নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে দলটি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৌশল নির্ধারণের জন্য সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পদক্ষেপ’ আশা করছেন দলটির নেতারা। বিএনপির অভ্যন্তরে যুক্তরাষ্ট্রের সেই ‘পদক্ষেপের’ আগ পর্যন্ত হালকা ধরনের রুটিন কর্মসূচির মাধ্যমে সময় পার করার পরিকল্পনা থাকলেও দলটির শীর্ষ নেতাদের দাবি, কর্মসূচি নিয়ে কোনও সংকট নেই দলে। চলমান কর্মসূচির মাধ্যমেই তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত দাবি পূরণ করতে পারবেন।

এর আগে, গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মহাসমাবেশ পুলিশের ‘অভিযানে’ পণ্ড হয়ে যায়। ওইদিন পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষও হয় দলটির নেতাকর্মীদের। জ্বালাও-পোড়াওসহ সহিংসতার অভিযোগে কয়েক শ’ মামলা হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। বাকিদের প্রায় সবাই চলে যান আত্মগোপনে।

নির্বাচনের আগে থেকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল বিএনপি। তাদের সেই আন্দোলনে যোগ দেয় সমমনা দলগুলো। তাদের দাবি আদায়ে বেশ কয়েক দফা হরতাল-অবরোধ পালন করে দলগুলো। 

নির্বাচন বর্জনে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ১২ ধাপে ২৪ দিনের অবরোধ এবং পাঁচ ধাপে ছয় দিনের হরতালসহ ধারাবাহিক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া যেমন ছিল না, তেমনি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল খুব নগণ্য। এর মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ও নেতৃত্বের দুর্বলতাও প্রকাশ পায়।

ফলে, প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিরোধের কথা ভাবলেও পরে তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। গত ২০ ডিসেম্বর নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি জনসাধারণের প্রতি সরকারকে অসহযোগিতার এবং তাদের আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ‘অসহযোগ আন্দোলন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে জনসাধারণের মাঝে লিফলেট বিতরণ করে দলটির নেতাকর্মীরা। 

সম্প্রতি বিএনপির হাইকমান্ড সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে এই বৈঠক। এসব বৈঠকে গত কয়েক মাসে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া সকল নেতাকর্মীদের জামিন নিশ্চিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গণসংযোগ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর সূত্রমতে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং জাতিসংঘসহ পশ্চিমাবিশ্ব সাম্প্রতিক নির্বাচনের ধরন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে জোরালো প্রতিক্রিয়া এলে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী সব দল ও জোটের তরফ থেকে আন্দোলনে জোরালো কর্মসূচি দেওয়া হবে। তার আগ পর্যন্ত নমনীয় কর্মসূচিতে থাকার কথাই ভাবছে। 

এদিকে, বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও সরকার নির্বিঘ্নে নির্বাচন করা, সরকার গঠন করা, দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন-পরবর্তী কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়ন না করা- এসব ক্ষেত্রে বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তহীনতার অভাবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কর্মসূচি নিয়ে ধোঁয়াশা কাজ করছে তাদের মধ্যে।

এ বিষয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৭ জানুয়ারির প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেশে বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা তামাশার নির্বাচন বাতিল করে নতুনভাবে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। আশা করছি, বিশ্বের এসব দেশের চাপের পাশাপাশি আমাদের আন্দোলনে সরকার এই নির্বাচন বাতিল করতে বাধ্য হবে।

আওয়ামী লীগ ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, সহিংসতা ও বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনের মধ্য দিয়ে একতরফা নির্বাচন করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলছে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।

আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংশয় রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, দলের যেসব কর্মসূচি চলছে, সেটা সময়োপযোগী। দলীয় সিদ্ধান্তে যেসব কর্মসূচি প্রণয়ন করা হচ্ছে, কাতে সারাদেশের লাখো নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনও সংশয় বা সংকট নেই। ভবিষ্যতে আরও কী কী কর্মসূচি দেওয়া যায়, সেটা নিয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়