আত্মবিশ্বাসী বিএনপি
দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে বিভিন্ন রকম কর্মসূচি দিয়েও ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। উপরন্তু, সারা দেশে হাজারো নেতাকর্মী মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। অনেকে যেমন কারাগারে গেছেন, তেমনই হাজারো নেতাকর্মী বাড়িছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
তবে, নির্বাচনের পর শুক্র ও শনিবার বিএনপির কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের যথেষ্ট পরিমাণ উপস্থিতি দেখা গেছে। এতে সারা দেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। বর্তমানে বিএনপির কর্মসূচি পালনকালে মঞ্চ থেকে শুরু করে রাজপথ সর্বত্র শৃঙ্খলা, নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে দলের হাইকমান্ডও সন্তুষ্ট বলে জানা গেছে।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের আগে ও পরে নেতাকর্মীরা গণগ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। সেসব নেতাকর্মী এখন প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন। সে কারণে রাজপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলন কর্মসূচিতে হাজির হচ্ছেন অনেকে। আবার অনেকে মিছিল-সমাবেশের আয়োজন করছেন নিজ উদ্যোগে। এছাড়াও আছে কেন্দ্রীয় কমিটির কঠোর বার্তা। পদ-পদবি হারানোর ভয় এবং নতুন দিনের প্রত্যাশায় ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামছেন কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা মেনে নিয়েছেন যে, রাজপথ আর কারাগারই তাদের ঠিকানা হবে। তাই, দাবি আদায়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে। যদিও নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার ও সাজার হার স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে।
নির্বাচন শেষ হওয়ার পরও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা মহানগরের নেতা আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জহির উদ্দিন স্বপনসহ বেশকিছু শীর্ষ নেতা কারাগারে থাকলেও মধ্যম সারির অনেক নেতা কারামুক্ত হয়েছেন। এছাড়া, আন্দোলনে সক্রিয়তার পাশাপাশি নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এরই মধ্যে দলের মহাসচিব কারাবন্দি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির প্রথম বড় ধরনের কর্মসূচি ছিল রাজধানীসহ দেশের সব মহানগরে কালো পতাকা মিছিল। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অবৈধ সংসদ বাতিলের দাবিতে ওই কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। একই কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপির সমমনা বিভিন্ন দল ও জোট।
কালো পতাকা মিছিলে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে বিএনপির হাইকমান্ড সন্তুষ্ট বলে দলের একাধিক সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। গত শনিবার আত্মগোপনে থাকা নেতাদের অনেককে কালো পতাকা হাতে নিয়ে মিছিলে অংশ নিতে দেখা গেছে।
দলীয় কর্মসূচিতে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেসব দেখভালে এবার মাঠে দেখা গেছে বিএনপির তৈরি ১০০ সদস্যের নিরাপত্তা টিম। গত শনিবার রাজধানীর নয়া পল্টনে কালো পতাকা মিছিলের সার্বিক নিরাপত্তায় ছিল একই রঙের ক্যাপ পরা এই নিরাপত্তা দল। তারা দলের কর্মসূচিতে রাজপথে শৃঙ্খলার বিষয়টি তদারকি করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আবারও প্রমাণ করেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গণতন্ত্রকামী বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর যতই হামলা চালাক, গায়েবি মামলা দিক, গ্রেপ্তার করুক, সাজাসহ ভয়ঙ্কর নির্যাতন করুক, এতে কোনো লাভ হবে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে সোচ্ছার ছিলেন এবং থাকবেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগণের ভোটাধিকারসহ মতামতের তোয়াক্কা না করে সরকার ৭ জানুয়ারি গায়ের জোরে একতরফা ডামি নির্বাচনে করেছে। তড়িঘড়ি করে সরকার গঠন করেছে। জনগণ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণে অবৈধ সরকার জনগণের ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছে। যার ফলে জনগণকে আরও ভোগান্তি দিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানোর কোনো চেষ্টাই তারা করছে না। এ কারণে জনগণ আজ দিশেহারা। তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেও পারছে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানিয়েছেন, দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সারা দেশে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তদারকি করছেন। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা বছরের পর বছর ঘরছাড়া। হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার উপেক্ষা করেও নির্বাচন-পরবর্তী কালো পতাকা মিছিলের মাধ্যমে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আবারও চাঙ্গা ও সক্রিয় হয়ে উঠছেন। এটা দলের জন্য বিরাট পাওনা। এতে সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব ও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।
মেয়া/রফিক