ঢাকা     মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

বর্জনেও নির্বাচন করবেন বিএনপির অন্তত ৪০ প্রার্থী

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৭, ১৭ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৮:১৩, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
বর্জনেও নির্বাচন করবেন বিএনপির অন্তত ৪০ প্রার্থী

গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নেবে না বিএনপি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এই সরকারের অধীনে আসন্ন চার ধাপের উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন সরকার ও সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং প্রশাসন ও পুলিশের প্রকাশ্য একপেশে ভূমিকার জন্য এর আগেও জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন তারা বর্জন করেছে। দলটি বলছে, দেশে এখনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। এজন্য আগামী ৮ মে থেকে শুরু হওয়া সব ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

বৈঠকে স্থানীয় নির্বাচনে দলের নেতাদের পরোক্ষভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কোনও গ্রিন সিগন্যাল না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এরপরও কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে বহিষ্কারের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়।

নির্বাচন নিয়ে দলের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হয় ১৬ এপ্রিল। তার আগেই গত সোমবার প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে সারাদেশে বিএনপির প্রায় ৪০ জন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব নেতাদের মধ্যে অনেকে দল থেকে আগেই বহিষ্কৃত। কারও আবার দলে কোনও পদ নেই। তবে, স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, এমন নেতাও আছেন। এদের কেউ কেউ দলের সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা বললেও অনেকেই নির্বাচন করার ব্যাপারে এখনও অনড় অবস্থানে রয়েছেন।

নির্বাচনে আগ্রহী নেতারা বলছেন, স্থানীয় কর্মী ও জনগণের চাওয়ার কারণে তারা প্রার্থী হয়েছেন। এখন আর নির্বাচন থেকে তাদের সরে আসা সম্ভব নয়। আবার অনেক প্রার্থী আছেন দোদুল্যমান অবস্থায়। নির্বাচন করবেন কী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন, সেটা নিয়ে রয়েছে সিদ্ধান্তহীনতা। 

যারা নির্বাচন করতে চান, তাদের ভাষ্য হচ্ছে- ঈদের আগে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে বিএনপির দুটি বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। ফলে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না নেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দলটি।

বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বর্তমানে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের করুণ অবস্থা। বিগত দিনের আন্দোলনে মামলা-হামলায় প্রত্যেকে বিপর্যস্ত। অনেকে নেতাকর্মী এখনও কারাগারে, অনেকে নিজের বাড়িতে থাকতে পারছেন না। এমন অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে তাদের তেমন কোনও আগ্রহ নেই বলে দলের হাইকমান্ডকে জানিয়েছেন জেলা পর্যায়ের নেতারা।

তৃণমূল নেতারা বলেছেন, দলের অনেক নেতাকর্মীর ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থকষ্টে আছেন নেতাকর্মীরা, এমন অবস্থায় নির্বাচন করার মতো পরিস্থিতি তাদের নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে তৃণমূল নেতারা তাদের এসব মতামত তুলে ধরেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে এই সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। 

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলের আগের সিদ্ধান্তই বহাল আছে। এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি কোনও নির্বাচনে যাবে না। দলের এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির কোনও নেতা প্রার্থী হলে আগের মতোই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

সব কিছুর বাইরে গিয়েও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে চান কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আলম। তিনি বলেন, দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিলেও তার ওপর এলাকার সর্বস্তরের মানুষের যে চাপ, সেখান থেকে তার সরে আসার সুযোগ নেই।

অপরদিকে, পাকুন্দিয়ার চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন বলেন, শেষ পর্যন্ত দল যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্মতি না দেয়, তাহলে তিনি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন।

পঞ্চগড় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু দাউদ প্রধান বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য তাকে আশ্বস্ত করেছেন, এবারের নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। আর নিরপেক্ষ ভোট হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। তাই তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় প্রার্থী হওয়া বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদুল আলম দোহা বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আমরা সব জায়গায় নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাচ্ছি। স্থানীয়ভাবে কিছু চেয়ারম্যান ও মেম্বর না থাকলে কর্মীদের যাওয়ার আর কোনও জায়গা থাকবে না। 

বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, নেতাকর্মীদের দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তাদের সেটা প্রত্যাহারের সময় এখনও আছে। তারা যদি প্রত্যাহার করেন ভালো, আর দলের সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচন করলে স্বাভাবিক নিয়মেই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের নেতাদের অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, নির্বাচন নিয়ে দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগেই দেশের বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির অনেক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অনেকে প্রত্যাশা করছেন, দল শেষ পর্যন্ত তাদের নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেবে বা নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় হবে। সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গত সোমবার দল তার আগের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে, নির্বাচনে যাবে না বলে চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় আশা করছি, দলের সিদ্ধান্ত মেনে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তারা শেষ পর্যন্ত তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন।

/এনএইচ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়