ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সংকটে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল

তানভীর হাসান তানু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৯ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সংকটে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল

তানভীর হাসান তানু, ঠাকুরগাঁও : সীমান্তবর্তী ঠাকুরগাঁও জেলার হতদরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র নির্ভরস্থল আধুনিক সদর হাসপাতাল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অসহায় দুস্থ  রোগীরা।

তবুও জীবন বাঁচানোর তাগিদে বাধ্য হয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে সেবা নিতে হয় তাদের। কিন্তু রাতের বেলা হাসপাতালে চিকিৎসকদের তেমন একটা দেখা পাওয়া যায় না।

অনেক ভূক্তভোগীর অভিযোগ, সদর হাসপাতালে শুধু মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, দুর্ঘটনায় সেলাই ছাড়া কোনো চিকিৎসায় পাওয়া যায় না। একটু জটিল সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক রংপুর রেফার্ড করা হয়। যা গ্রামাঞ্চলের একজন অসহায় মানুষের পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয় উঠে না। জীবন বাঁচানোর জন্যই মানুষের কাছে ধার দেনা করে সুস্থ হওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে। তাই ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে সব চিকিৎসা সেবা পাওয়ার দাবি জানিয়েছে অসহায় রোগী ও স্বজনরা।

বুধবার রাত ২.৪০ মিনিট সরেজমিনে শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ৩০ শয্যা শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা প্রায় শতাধিকের বেশি। একটি বেডে তিন থেকে চারজন চিকিৎসা নিচ্ছে কষ্ট করে। বড়গাঁও ইউনিয়ন থেকে আসা সিজার করা এক মা ও শিশুকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু শিশু ওয়ার্ডে কোনো কর্তব্যরত চিকিৎসক নেই। একজন নার্স ওই শিশুটির চিকিৎসা দিতে প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অপর দিকে শিশুর অভিভাবক সিরাজুল দুঃচিন্তায় সময় পার করছেন।

নার্সকে ডাক্তারের কথা জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে বলেন, ডাক্তারদের কি বিশ্রাম নেই? সারা দিন শুধু মানুষের সেবাই দিয়ে যাবে। তা ছাড়া হাসপাতালে ডাক্তার ও জনবল তীব্র সংকট। আমাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

হরিপুর থেকে আসা ইসরাফুল হোসেন বলেন, দুদিন আগে জ্বরের কারণে মেয়েকে ভর্তি করেছি। কিন্তু এখনো সুস্থ হয়নি। ডাক্তাররা শুধু চেম্বারে আসতে বলছেন। টাকার অভাবে বাচ্চাটার সঠিক সেবা দিতে পারছি না।


গড়েয়া এলাকার কামরুল হোসেন জানান, গত চারদিন ধরে ডায়রিয়ার রোগর কারণে ছেলের চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছেন। দিনে হঠাৎ ডাক্তার থাকলেও রাতে হাসপাতাল হয় অভিভাবকহীন কাউকেই পাওয়া যায় না।

বালিয়াডাঙ্গী থেকে আসা আশামনি জানান, শিশু ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে এক বেডে ৩/৪ জন শিশুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া অতিরিক্ত গরমে রাতে বেলায় বাইরেই থাকতে হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে বেড ও সেবার মান বাড়ালে তাদের মতো দুস্থ রোগীরা একটু ভালো সেবা পাবেন। কারণ ক্লিনিকে সেবা নেওয়ার সামর্থ্য এখানকার কারো নেই।

সার্জারি বিভাগের রোগী হাসনাত বলেন, ‘গতরাতে মোটরসাইকেল দুঘর্টনায় আহত হয়ে পড়ে আছি। হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন নাকি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। তাই টাকা যোগাড় করে বাইরের প্যাথলজিতে এক্স-রে করাতে হবে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, আধুনিক সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যার হলেও এখানে ৫০ শয্যার ডাক্তার ও জনবল নেই। একটি ৫০ শয্যার হাসপাতালেই ২২জন চিকিৎসক থাকার নিয়ম রয়েছে সেখানে ১০০ শয্যার হাসপাতালে মাত্র ১৫ জন চিকিসক রযেছে। যা প্রতিদিন ইনডোর ও আউটডোরে ৩ থেকে ৪ শতাধিক রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। হাসপাতালে নতুন ভবনের কাজ চলছে সেটি পূর্ণাঙ্গ চালু হলে ডাক্তার, জনবলসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বাড়বে।

ঠাকুরগাঁও জরুরি বিভাগের ডাক্তার মো. রাব্বী বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে আমাদের প্রচুর বেগ পেতে হচ্ছে। অনেক সময় সারা দিন ডিউটি করে রাতেও করতে হচ্ছে  তবুও সাধ্য মতো সেবা দিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালে চিকিৎসকসহ জনবল বাড়ালে সাধারণ মানুষ নানা রকম হয়রানি থেকে মুক্ত পাবে বলে মনে করছি।

তাই হাসপাতালের রোগী ও স্বজনদের প্রাণের দাবি দ্রুত হাসপাতালে সকল রোগের চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে অবহেলিত ঠাকুরগাঁওয়ে চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন সম্ভব হবে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঠাকুরগাঁও/৯ মে ২০১৭/তানভীর হাসান তানু/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়