তাইওয়ানের কাছে ১১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
তাইওয়ান-চীন চলমান উত্তেজনার মধ্যেই তাইওয়ানের কাছে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিপুল পরিমাণ অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাইওয়ানের ইতিহাসে এটিই মার্কিন অস্ত্র বিক্রির সবচেয়ে বড় চুক্তি। গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ওয়াশিংটনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
আজ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের অনুমোদিত নতুন এই অস্ত্র প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে উন্নত রকেট লঞ্চার, স্ব-চালিত হাউইটজার এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র।
তবে প্যাকেজটি চূড়ান্ত করতে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিরে আসার পর থেকে তাইওয়ানের কাছে এটি দ্বিতীয় দফা অস্ত্র বিক্রি হতে যাচ্ছে।
চীন তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করে এবং সামরিক মহড়া, আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের মাধ্যমে প্রায় চাপ বাড়িয়ে থাকে, বিশেষত তাইওয়ানের গণতান্ত্রিক সরকারের স্বাধীনতার দাবির প্রতিক্রিয়ায়, যা চীন বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ হিসেবে দেখে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছে, এই চুক্তি দ্বীপটিকে ‘দ্রুত শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে’ সহায়তা করবে।
তাইওয়ানের পরিবর্তে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং কয়েক দশক ধরে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে শক্তিশালী একটি মিত্র হিসেবেও পরিচিত।
চীন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ঘোষণার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে গত মাসে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছিল যে, নভেম্বরে ৩৩০ মিলিয়ন ডলারের যুদ্ধবিমান ও বিমানের যন্ত্রাংশ বিক্রির পূর্ববর্তী চুক্তিটি চীনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ‘গুরুতর লঙ্ঘন’ করেছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা বুধবার গভীর এক ঘোষণায় জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্যাকেজটিতে ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (হিমার) এবং ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের স্ব-চালিত হাউইটজার রয়েছে।
এই চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে পূর্ববর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সময়কার মোট ৮.৩৮ বিলিয়ন ডলারের ১৯ দফা অস্ত্র বিক্রিকে ছাপিয়ে যাবে।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে তাইওয়ানের কাছে ১৮.৩ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন করেছিলেন, সবচেয়ে বড় প্যাকেজটির মূল্য ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, এই চুক্তি ওয়াশিংটনের স্বার্থে ‘তার সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকীকরণ ও একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরক্ষামূলক সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য (তাইওয়ানের) অব্যাহত প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।
চীন দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ানকে নিজের অংশ বলে দাবি করে আসছে এবং ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতিতে শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের কথা বললেও, প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের সম্ভাবনাও খোলা রেখেছে।
এটি এমন একটি হুমকি, যা তাইওয়ান ক্রমশ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। দেশটি আগামী বছর তার মোট জিডিপির ৩ শতাংশেরও বেশি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে।
চীন এই অঞ্চলে ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক সামরিক মহড়ার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোকে প্রায়ই অস্বস্তিতে ফেলছে, যেমন জুনে প্রশান্ত মহাসাগরে চীনা বিমানবাহী রণতরীর মহড়ার পর জাপান প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি বলেন যে, চীন তাইওয়ান আক্রমণ করলে জাপান তাদের আত্মরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করতে পারে। জাপানের এমন মন্তব্য ঘিরে দেশটির সঙ্গে নতুন করে চীনের তীব্র বিবাদ শুরু হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ