ঢাকা     বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ২ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ঘিরে কঠিন পরীক্ষার মুখে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৩:২৮, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ঘিরে কঠিন পরীক্ষার মুখে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান

পাকিস্তানের কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির কঠিন এক পরীক্ষার মুখে পড়েছেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনের গাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গঠিত হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীতে সেনা পাঠানোর জন্য পাকিস্তানকে চাপ দিচ্ছে। 

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ওয়াশিংটনের এই চাপে সাড়া দিলে নিজের দেশেই বড় ধরনের জনরোষের মুখে পড়তে পারেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান।

আরো পড়ুন:

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রয়টার্সকে দুটি সূত্র জানিয়েছে, ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। গত ছয় মাসে এটি হবে তাদের তৃতীয় বৈঠক, যেখানে গাজা বাহিনীই প্রধান আলোচ্য বিষয় হতে পারে।

ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য মুসলিম দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠন করা হবে।

তবে অনেক দেশই এই মিশন নিয়ে শঙ্কিত। কারণ এতে গাজার ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের চেষ্টা করতে হবে, যা তাদের সংঘাতে জড়িয়ে ফেলতে পারে এবং নিজ নিজ দেশে ফিলিস্তিনিপন্থি ও ইসরায়েলবিরোধী জনমতকে ক্ষুব্ধ করতে পারে।

কিন্তু ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা অবিশ্বাস দূর করতে ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন মুনির। জুন মাসে তার পুরস্কার হিসেবে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ পান তিনি। মার্কিন কোনো প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের বেসামরিক কোনো কর্মকর্তার উপস্থিতি ছাড়া কেবল সেনাপ্রধানকে আপ্যায়নের এমন ঘটনা নজিরবিহীন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক আটলান্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, “গাজায় সেনা না পাঠালে ট্রাম্প বিরক্ত হতে পারেন। আর পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এটি কোনো ছোট বিষয় নয়। কারণ পাকিস্তান স্পষ্টতই মার্কিন বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা সহায়তা নিশ্চিত করতে আগ্রহী। তাই ট্রাম্পকে অখুশি করা পাকিস্তানের জন্য মোটেও সহজ সিদ্ধান্ত হবে না।”

সেনা পাঠানোর জন্য চাপ

পাকিস্তান বিশ্বের একমাত্র মুসলিম দেশ যার পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনী যুদ্ধকুশলী- এরা চিরশত্রু ভারতের সঙ্গে তিনবার যুদ্ধ করেছে এবং সাম্প্রতিক গ্রীষ্মেও স্বল্পমেয়াদি সংঘাতে জড়িয়েছে। এছাড়া পাকিস্তান দূরবর্তী অঞ্চলে বিদ্রোহ দমন করেছে এবং আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত ইসলামপন্থি জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে রয়েছে।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, “পাকিস্তানের সামরিক শক্তির কারণে মুনিরের ওপর তার সক্ষমতা প্রমাণের চাপ অনেক বেশি।”

রয়টার্সের প্রশ্নে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী, পররাষ্ট্র দপ্তর এবং তথ্য মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেননি। হোয়াইট হাউজও অনুরোধের প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার গত মাসে বলেছেন, “শান্তিরক্ষায় সেনা পাঠানোর কথা ইসলামাবাদ বিবেচনা করতে পারে, কিন্তু হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করা আমাদের কাজ নয়।”

মুনিরের অভূতপূর্ব ক্ষমতা

মুনিরকে চলতি মাসে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে তিনি বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীরও নেতৃত্ব দেবেন। একই সঙ্গে তার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আজীবনের জন্য ফিল্ড মার্শাল উপাধি বজায় রাখবেন এবং গত মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানের  বেসামরিক সরকার যে সাংবিধানিক সংশোধনী পার্লামেন্টে পাস করিয়েছে, তার ফলে যেকোনো ফৌজদারি মামলায় তিনি আজীবন দায়মুক্তি পাবেন।

কুগেলম্যান বলেন, “পাকিস্তানে খুব কম মানুষই মুনিরের মতো ঝুঁকি নেওয়ার বিলাসিতা উপভোগ করেন। তার হাতে এখন লাগামহীন ক্ষমতা- যা সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত।”

তিনি আরো বলেন, “শেষ পর্যন্ত নিয়ম হবে মুনিরের, কেবল মুনিরেরই।”

দেশের ঝুঁকি

গত কয়েক সপ্তাহে সামরিক বিবৃতির তথ্য অনুযায়ী, মুনির ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, জর্ডান, মিসর ও কাতারের সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সিদ্দিকার মতে, এগুলো গাজা বাহিনী নিয়ে পরামর্শের অংশ বলেই মনে হচ্ছে।

তবে মুনিরের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হলো দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত পরিকল্পনায় গাজায় পাকিস্তানি সেনা মোতায়েন হলে কট্টর ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো বিক্ষোভ শুরু করতে পারে। এই দলগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কঠোর বিরোধী এবং বড় জনসমর্থন নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষমতা রাখে।

পাকিস্তানে অতি-কঠোর ধর্ম অবমাননা আইন বজায় রাখার দাবিতে সহিংস আন্দোলনে জড়িত একটি শক্তিশালী ইসরায়েলবিরোধী ইসলামপন্থি দলকে অক্টোবরে নিষিদ্ধ করেছে দেশটির সরকার। চলমান অভিযানে তাদের নেতাসহ দেড় হাজারেরও বেশি সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারিভাবে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হলেও তাদের মতাদর্শ এখনও টিকে আছে।

২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে সর্বাধিক আসন জয়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল- যাদের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে- তারাও মুনিরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ পোষণ করে।

সিঙ্গাপুরের এস. রাজরত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ফেলো আবদুল বাসিত বলেন, গাজায় বাহিনী মোতায়েনের পর পরিস্থিতি অবনতি হলে দ্রুতই সমস্যা তৈরি হবে।

তিনি বলেন, “তখন মানুষ বলা শুরু করবে, আসিম মুনির ইসরায়েলের হয়ে কাজ করছেন। আর ভবিষ্যতে এমনটা যে হতে পারে, তা না বোঝা হবে বোকামি।”

ঢাকা/ফিরোজ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়