ঢাকা     শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

সাইমন্ডসের ফতুল্লার সেঞ্চুরির কথা মনে আছে?

ক্রীড়া প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫০, ১৫ মে ২০২২   আপডেট: ১৩:১৭, ১৫ মে ২০২২
সাইমন্ডসের ফতুল্লার সেঞ্চুরির কথা মনে আছে?

খবরের আড়ালে থাকতেন তিনি। নিজ দেশের খেলা না হলে তার খোঁজ মিলতোই না। স্ত্রী লরা ও দুই সন্তান বিলি ও ক্লো সাইমন্ডসকে নিয়ে কুইসল্যান্ড ছিল তার স্বর্গ। অথচ রোববার ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় খবর হয়ে গেলেন তিনি! পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস শিরোনামে। এদিন নিজ শহরে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

তার আকস্মিক মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ গোটা দুনিয়া। অস্ট্রেলিয়ার স্বর্ণ সময়ের সেরা একাদশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ছিলেন সাইমন্ডস। যিনি আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পাল্টে দিতেন দলের ব্যাটিং চিত্র। বল হাতে কখনো পেস, কখনো স্পিনে দলকে সাফল্যে ভাসাতেন। আর বৃত্তের ভেতরে তার ফিল্ডিং দেখা ছিল চোখের জন্য তৃপ্তিদায়ক। সরাসরি থ্রোতে কতবার কত ব্যাটসম্যানকে হতাশায় ডুবিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই।

টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি সাইমন্ডস। ওয়ানডে ক্রিকেটই ছিল তার স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা। যেখানে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সফল। ১৯৮ ওয়ানডেতে ৫০৮৮ রান ও ১৩৩ উইকেট পেয়েছেন। ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি আছে ৬টি। যেখানে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নামও।

বাংলাদেশে একবার এসেছিলেন সাইমন্ডস। ২০০৬ সালে তিন ওয়ানডে খেলতে এসেছিলেন রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বে। ২৩ এপ্রিল এই চট্টগ্রামেই নেমেছিলেন প্রথম ওয়ানডেতে। যেখানে বল হাতে ২ উইকেট নিলেও ব্যাটিংয়ে খুলতে পারেননি খাতা। বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের বলে হয়েছিলেন এলবিডব্লিউ।

তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তার ব্যাটে ‘রক্ষা’ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে সেদিন সবকিছু বাংলাদেশের পক্ষে গিয়েছিল। মাশরাফি বিন মুর্তজার আক্রমণে শুরুতেই ব্যাকফুটে অস্ট্রেলিয়া। একে একে তার শিকার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (৩২), রিকি পন্টিং (৫) ও সাইমন ক্যাটিচ (২৬)। আগের বছর ইংল্যান্ডের কার্ডিফে মাশরাফির এমন ‘মরণকামড়েই’ বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে উড়ন্ত শুরু পেয়েছিল। এরপর আশরাফুলের মহাকাব্যিক ইনিংসে মহাপরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারায় বাংলাদেশ।

ফতুল্লায় এমন মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। মাশরাফির শুরুর ধাক্কার পর অস্ট্রেলিয়া দ্রুত রান তুলতে পারেননি। চতুর্থ উইকেটে মাইকেল ক্লার্ক ও সাইমন্ডস দলকে বাঁচান। যেখানে সাইমন্ডস ছিলেন ত্রাণকর্তা। ক্লার্ক ৯০ বলে ৫৪ রান করেন। সাইমন্ডস শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে করেন ১০৩ রান। নব্বইয়ের ওপর স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করা সাইমন্ডস সেদিন ১২৫ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় এই রান করেন। তার ওই ইনিংসেই অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে ২৫০ রান করেছিল। লক্ষ্য তাড়ায় হাবিবুল বাশারের ৭০, খালেদ মাসুদের ৩৬ ও জাভেদ ওমরের ৩৪ রানে বাংলাদেশ জবাব দিলেও ১৮৩ রানের বেশি করতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ার ৬৭ রানের জয়ের ম্যাচে সাইমন্ডস ছিলেন নায়ক।  

সাইমন্ডসের সেঞ্চুরির ইনিংসটি এখনও মনে আছে হাবিবুলের। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার খেলার ফাঁকে স্মৃতিচারণ করলেন, ‘হ্যাঁ, ওই ইনিংসটি এখনও মনে আছে। আমার অনেক পছন্দের একজন ক্রিকেট চরিত্র সাইমন্ডস। মাঠে তার এক চরিত্র, মাঠের বাইরে আরেক। দুর্দান্ত একজন ক্রিকেটার ছিলেন।’

বাংলাদেশের বিপক্ষে সাদা পোশাকে তার কখনো খেলা হয়নি। ৯ ওয়ানডে এবং ১ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। সব মিলিয়ে ১০ ম্যাচে মাত্র ৫ ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান। রান করেছেন ১৫২। যেখানে শূন্য রানে আউট হয়েছেন দুইবার।

২০০৮ সালে বাংলাদেশ যেবার অস্ট্রেলিয়া সফর করেছিল সেবার তার খেলার কথা ছিল। তাকে দলেও রাখা হয়েছিল। কিন্তু সিরিজ শুরুর আগের দিন দলের বাধ্যতামূলক বৈঠকে উপস্থিত না থেকে ডারউইনে মাছ ধরতে চলে যান। সেদিন ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকলেও বৈঠকে উপস্থিত হওয়া ছিল জরুরি। কিন্তু দলের নিয়ম ভেঙে ছিটকে যান এই অলরাউন্ডার।

২০০৫ সালে করেছিলেন আরেক কাণ্ড। বাংলাদেশ যেবার কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারাল, তার আগের রাতে পার্টি করেছিলেন সাইমন্ডস। শেন ওয়াটসনের ২৪তম জন্মদিন উপলক্ষে সারারাত পার্টি করে মদ পান করায় পরদিন মাঠে নামার মতো অবস্থায় ছিলেন না তিনি। এছাড়াও ক্যারিয়ারে নানা বিতর্কে জড়িয়েছিলেন সাইমন্ডস। এজন্য দল থেকে অহরহ বাদ পড়তেন। আবার দলে ঢুকতেন। 

তবুও খেলোয়াড় হিসেবে এই অজি ছিলেন অন্য সবার থেকে আলাদা, যিনি ছিলেন বাক্সের বাইরের ইট, যিনি কোনো দেয়ালে ফিট হতে চাননি।

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়