ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

তাবিথের ১২ দফা ইশতেহার

রেজা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৬ এপ্রিল ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তাবিথের ১২ দফা ইশতেহার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘অবহেলিত জনগণের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাসযোগ্য আদর্শ ঢাকা গড়ার প্রত্যয়ে’ ১২টি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

৮৩টি প্রতিশ্রুতি আর পরিকল্পনায় সাজানো এই ১২ দফা ইশতেহারে খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার ছাড়াও নাগরিক সমস্যা সমাধানে যানজট নিরসন ও যানবাহন সুবিধা, নগর পরিবেশ ব্যস্থাপনা ও টেকসই উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ণ ও ব্যবস্থাপনা, নাগরিকদের আমোদ-প্রমোদ, চিত্ত বিনোদন ও জনস্বাস্থ্য, ডিজিটাল সেবা, জননিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, নগর প্রশাসনকে কার্যকর করার ওপরে ফোকাস দেওয়া হয়েছে।  

নির্বাচনের ঠিক ১২ দিন আগে তার এই ইশতেহার ভোটের প্রচারে আলাদা মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করে তাকে সমর্থন করে ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলনে’র নেতারা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে তেজগাঁও গুলশাল লিংক রোডের রেগনাম টাওয়ারে তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী কার্যালয়ে এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।

তাবিথের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণায় ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলনে’র স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

উত্তরে তাবিথের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক। তিনি ইতিমধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। এই সিটিতে তার বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থী হওয়ার কথা থাকলেও নিজের ‘ভুলের’ কারণে তা হয়নি। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে চেষ্টা করেও বিফল হন তিনি। তার স্থলে ভোটের লড়াইয়ে নামছেন তারই ছেলে তাবিথ আউয়াল। ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলনে’র ব্যানারে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। ঢাকা দক্ষিণে সংগঠনটির অন্য প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে আছেন মির্জা আব্বাস। হাইকোর্টে জামিন চাওয়া এই নেতা এখানো তার ইশতেহার প্রকাশ করেনি।

৫ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যের শুরুতে তাবিথ আউয়াল মুক্তিযুদ্ধের সেইসব বীর শহীদদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন, যাদের জীবন আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে জড়িত সব জাতীয় নেতা বীরাঙ্গনা, সেক্টর কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানান তিনি।

নির্বাচিত হলে তাবিথ আউয়াল ভেজাল খাদ্য বিক্রয় রোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে খাদ্য নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, কৃষক ও ভোক্তাদের সুবিধার্থে নগরীর বিভিন্ন প্রবেশ পথ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘নাইট মার্কেট বা ফার্মার্স  মার্কেট স্থাপন করা হবে।’ জাপানের মত করে আরবান এগ্রিকালচার বা নগর কৃষি চালু, সুলভে নিরাপদ পানি সরবরাহ, ফুড কোর্ট তৈরি করে যত্রতত্র গড়ে ওঠা খাবারের দোকানগুলোতে সেখানে স্থানান্তর করার পরিকল্পনার কথা জানান।

শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য মানসম্মত ও স্বল্প ভাড়ার আবাসন প্রকল্প হাতে নেওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে উত্তরের এই মেয়র প্রার্থী বলেন, সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স সংক্রান্ত জটিলতা, দুর্নীতি ও নাগরিক হয়রানি বন্ধে মোবাইল বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ট্যাক্স আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং বায়ু, শব্দ ও পরিবেশ দুষণমুক্ত করতে ‘সোর্স কন্ট্রোল বা উৎস নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়ার কথা জানান তিনি।

স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও মোবাইল চিকিৎসা সার্ভিস গড়ে তোলা পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রাজধানীর প্রতিটি পার্কে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ অত্যাধুনিক হেলথ চেকআপ বুথ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ঢাকা মাতৃসনদগুলোতে আরো যুগোপযোগী এবং কমিউনিটি হাসপাতালগুলোতে মহিলাদের মাতৃত্বকালীন ও পাঁচ বছরের শিশুর বিনা খরচে চিকিৎসা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

রাজধানীতে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য ৭টি পরিকল্পনার কথা জানান বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টুর জায়গায় ভোটের লড়াইয়ে নামা তাবিথ আউয়াল।

“স্কুল শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও যানজটমুক্ত পরিবহণের জন্য বিশেষ রুটে আধুনিক স্কুল বাস সার্ভিস চালু, সিটি করপোরেশনের অধীনে বয়স্ক, দরিদ্র নাগরিকদের জন্যে বিনামূল্যে কম্পিউটার ও ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা, উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চার জন্য নলেজ সেন্টার প্রতিষ্ঠা, কৃতী শিক্ষার্থীদের ‘সিটি স্কলারশিপ’, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসংখ্যার অনুপাতে প্রাথমিক স্কুল করা এবং ডে কেয়ার সেন্টার করা হবে।”

রাজধানীর প্রধান সমস্যা যানজট নিরসনে আলাদা গুরুত্ব দিতে চান বিএনপি সমর্থিত উত্তর সিটি করপোরেশনের এই প্রার্থী। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাস্তাঘাটের শোচনীয় অবস্থার জরুরি সংস্কার, পরিচ্ছন্ন ফুটপাত, অধিক সংখ্যক ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস নির্মাণ এবং সেগুলোতে এলিবেটর/এসলেটর স্থাপন, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পার্কিং লট, রাস্তার পাশে অত্যাধুনিক যাত্রী ছাউনী, যততত্র যাত্রী ওঠানামা রোধ, গণপরিবহণগুলোকে আরো মানসম্মত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।

এ ছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে টঙ্গী থেতে কমলাপুর পর্যন্ত অত্যাধুনিক কম্যুটার ট্রেন সার্ভিস চালু, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথোরিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, রাজধানীর চারপাশে নদীপথগুলোকে কার্যকর করা এবং পথচারীদের সহজে চলাচলের জন্য মুম্বাইয়ের মতো স্কাই ওয়াক চালু করার ওপর জোর দেন তাবিথ আউয়াল।

নগর পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ও টেকসই উন্নয়নে পয়ঃনিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতা নিরসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বের জনপ্রিয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি থ্রি আর কনসেপ্ট ব্যাপকভাবে চালু, বনায়নের মাধ্যমে ঢাকাকে পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন ও সবুজ ঢাকায় রূপান্তর, নগর উন্নয়নে প্রবীণ-নবীন বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের কথা জানান তিনি।

নগরবাসীর চিত্ত বিনোদন ও আমোদ-প্রমোদের জন্য বিস্তারিত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তাবিথ। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে ওয়াইফাই সুবিধার ব্যবস্থা নেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জায়ান্ট স্ত্রিনে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করা এবং শেয়ার বাজার দর সম্বলিত ওভারহেড ডিজিটাল ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করার কথা জানান।

জননিরাপত্তায় তার আলাদা পরিকল্পনা জানিয়ে তাবিথ বলেন, প্রতিটি সড়ক, লেন ও বাইলেনে পর্যায়ক্রমে সিসি টিভি স্থাপন করা হবে; রেল, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে গভীর রাতে পৌঁছানো যাত্রীদের রাত্রিকালীন নিরাপদ বাস সার্ভিস চালু করা, নগরীকে আধুনিকায়ন করতে এলইডি লাইট স্থাপন এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের সহযোগিতায় এলাকাভিত্তিক ‘ক্রাইম ম্যাপিং’ প্রনয়ণ করা হবে।

এ ছাড়া রাজধানীর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও নগর প্রশাসনকে আরো কার্যকর করার কথা জানান তিনি।  

ইশতেহার প্রকাশের আগে তাবিথের নির্বাচনী পরিচালনাকারী প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজধানীবাসী নীরব বিপ্লব ঘটাবে। এর মাধ্যমে মানুষের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।

তাবিথের পক্ষে তরুণ ভোটারদের রায় দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সে (তাবিথ আউয়াল) তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। এ সময় তাবিথ আউয়ালকে তরুণ উদীয়মান রাজনীতিবিদ হিসেবে অভিহিত করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।  

ইশতেহার ঘোষণার সময় তাবিথ আউয়ালের মা নাসরিন আউয়াল, স্ত্রী সাওসান তাবিথ ও তার ছোট ভাই উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলনে’র সদস্য ড. মাহবুবউল্লাহ, কবি আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ।

 

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ এপ্রিল ২০১৫/রেজা/দিলারা 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ