ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

বাগেরহাটে ট্রলারডুবি: আরও ৯ মরদেহ উদ্ধার

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৯, ৩০ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাগেরহাটে ট্রলারডুবি: আরও ৯ মরদেহ উদ্ধার

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় পানগুছি নদীতে ট্রলার ডুবির তৃতীয় দিন মা-ছেলেসহ নয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার পানগুছি নদীর ১৫  কিলোমিটারের বিভিন্নস্থান থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার হয়। এখনো অন্তত ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন।

গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার ছোলমবাড়িয়া খেয়া ঘাট থেকে মোরেলগঞ্জ পুরাতন থানার ঘাটে যাওয়ার পথে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার ডুবে যায়। সে দিনই চার নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর প্রশাসনের কাছে নিখোঁজের অভিযোগ করেন ১৮ জনের স্বজনরা। দুর্ঘটনার পর থেকে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান সরদার জানান, বৃহস্পতিবার দিনভর উদ্ধার অভিযানে মা-ছেলেসহ নয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরআগে, গত বুধবার এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ থাকা দুইজনকে জীবিত অবস্থায় খুলনার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাওয়া গেছে। এরা হলেন- মোরেলগঞ্জ পৌর শহরের ভাই জোড়া গ্রামের আবুল কালামের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪০) ও তার ছেলে জুবায়ের (১৪)। ট্রলার ডুবির ঘটনায় অন্তত ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাগেরহাটের বৃহত্তম উপজেলার মোরেলগঞ্জের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে পানগুছি নদী। নদীর পশ্চিমে উপজেলা সদর, স্কুল-কলেজ, বাজার এবং পূর্বে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দুই পারের মানুষের যোগাযোগের জন্য একটি ফেরি থাকলেও তাতে কেবল গাড়ি পরিবহণ করা হয়। সাধারণ মানুষের পারাপারের একমাত্র বাহন ট্রলার। প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এ ঘাটটি দিয়ে পার হয়।

ট্রলার ডুবির পর থেকে এ ঘাট ব্যবহারকারীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে পাশে গাড়ি পারাপারের জন্য ফেরিটি ব্যবহার করছেন। পানগুছি নদীতে তীব্র স্রোত এবং নদী দিয়ে জাহাজসহ বিভিন্ন বড় বড় নৌযান চলায় ট্রলারে পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ। তাই স্থানীয়রা যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ফেরি করে যাত্রী পারাপারের দাবি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার উদ্ধার হওয়া নয়জন হলেন- মোরেলগঞ্জ উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আলম চাপরাশির স্ত্রী মোসাম্মৎ সালমা বেগম (৩০), তার আঠার মাস বয়সী ছেলে মো. সাজ্জাদ, একই উপজেলার কাছিকাটা গ্রামের প্রয়াত কাসেম শেখের ছেলে মো. আব্দুল মজিদ শেখ (৭৫), নাসির শেখের ছেলে মো. নাজমুল (৬), আলতি বুরুজবাড়িয়া গ্রামের প্রয়াত গফফার হওলাদারের ছেলে মো. সুলতান হাওলাদার (৫৫), হোগলাবুনিয়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম (৩৫), বুরুজবাড়িয়া গ্রামের গফফার হাওলাদারের ছেলে আনছার হাওলাদার (৫০), গোপালপুর গ্রামের তবিবুর রহমান তোতার স্ত্রী মুন্নি বেগম (৪০) এবং শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা বাজারের বাসিন্দা সামসুল হুদার ছেলে আবির আল শামস্ (১৫)।

এরআগে গত মঙ্গল ও বুধবার সুফিয়া বেগম (৬০), তার মেয়ে বিউটি বেগম (৩৮), নাদেরা বেগম (২০), চেহের বানু (৫০) এবং রিমা বেগম (২৩) নামের পাঁচ নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন- মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী গ্রামের মো. বশিরের স্ত্রী মোসাম্মাৎ লাবনী (২০), উত্তর সুতালড়ী গ্রামের আ. আজিজের স্ত্রী মোসাম্মৎ কামরুন্নেছা (৫৮), শরণখোলা উপজেলার পল্লীমঙ্গল এলাকার মো. বাচ্চু বাদশার ছেলে রাহাত বাদশা (১০ মাস), একই উপজেলার খজুরবাড়ীয়া গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল মো. শহীদের স্ত্রী মোসাম্মৎ নাছিমা, রায়েন্দা এলাকার মো. মহসীনের ছেলে মো. হাসিব (৬),  পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পশ্চিম বালিপাড়া গ্রামের খলিল তালুকদারের স্ত্রী মোসা নাসরিন (২৮)। তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ নিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪। উদ্ধারকৃত মৃতদেহগুলো শনাক্তের পর স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, তদন্ত কাজ শেষ করেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্তে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ এবং ঘাট ইজারাদারদের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তদন্তে উঠে এসেছে, বাগেরহাট-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা রুটে চলাচল করা বাসগুলোর সঙ্গে মোরেলগঞ্জ ঘাটের ইজারাদারদের আর্থিক লেনদেন রয়েছে। গাড়ির সব যাত্রী একটি ট্রলারে বোঝাই করতে ট্রলার মালিক ও চালকেরা তাড়াহুড়া করে। যার কারণে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যায়।

এ খেয়া ঘাটে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। যার মধ্যে অন্যতম- ঘাটের অব্যবস্থাপনা দূর করা, ট্রলারের ফিটনেস দেখে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা নির্ধারণ করে দেওয়া, পানগুছি নৌরুটি দিয়ে চলাচলা করা বৃহৎ আকৃতির নৌযানের ঘাট অতিক্রম করার সময় গতি কমানোর জন্য প্রচারণা চালানো।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ে তদন্ত কাজ শেষ করেছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/৩০ মার্চ ২০১৭/আলী আকবার টুটুল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়