‘প্যাটে ভাত নাই, ঈদ কিসের?’
রাজবাড়ী প্রতিনিধি : এক জরাজীর্ণ কুঁড়ে ঘরে বাস করছেন তিনি। চোখে চোখ পড়ার পর প্রশ্ন করলাম, ঈদ কেমন কাটছে?
উত্তরে ষাটোর্ধ্ব মালেকা বিবির মলিন মুখে উত্তর, ‘প্যাটে ভাত নাই, নাতি-পুতির খাওন নাই, ঈদ কিসের?’
মালেকা বিবি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের শাহাদৎ মন্ডল পাড়ার নদী ভাঙনের শিকার মানুষের একজন। শুধু মালেকা বিবি নয়, নদী ভাঙনের শিকার সহস্রাধিক পরিবারে ঈদের আনন্দ নেই। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এ মানুষগুলোর।
এ বছর অসময়ে পদ্মা নদীর পানি হঠাৎ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজবাড়ী সদরের বরাট, দাদশী ও মিজানপুর তিনটি ইউনিয়ন এবং কয়েক বছরে নদী ভাঙনের শিকার গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে দেবগ্রাম ইউনিয়নের চারটি ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের দুটি ওয়ার্ড।
সহায়-সম্বল হারিয়ে খেটে খাওয়া এ মানুষগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদের ভাগ্যে জুটছে না সরকারি-বেসরকারি সহায়তা।
নদী ভাঙনের শিকার নবিরন নেছা জানান, দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের কাজীর পাড়া এলাকায় তার সাজানো সংসার ছিল। গত বছর সর্বনাশা পদ্মা নদী তার সেই সংসার গিলে খেয়েছে। এখন তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন।
তিনি জানান, আজ ঈদ। বছরের বিশেষ দিনেও তারা কোনো সহযোগিতা পেলেন না। বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকালে কষ্ট হয়। একটি নতুন জামা পর্যন্ত তাদের কিনে দিতে পারেননি।
দেবগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আতর আলী সরদার জানান, তার ইউনিয়নে বহু পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ঈদ উপলক্ষে এদের জন্যে বিশেষ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম নুরুল ইসলাম জানান, ঈদে অতিদরিদ্রদের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত ভিজিএফের গম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নদী ভাঙন পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফকির আব্দুল জব্বার জানান, ঈদে নদী ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের সহযোগিতার জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকার কারণে তাদের সহযোগিতা করতে পারেননি।
রাইজিংবিডি/রাজবাড়ী/২৬ জুন-২০১৭/সোহেল মিয়া/বকুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন