ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ছেলে হত্যার বিচার চান মাহবুবের পিতা

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২১ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছেলে হত্যার বিচার চান মাহবুবের পিতা

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা : ১৪ বছর আগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত হন কুষ্টিয়ার মাহবুব রশিদ। এলাকার মানুষ তাকে মাসুদ নামে চেনেন।

মাহবুব রশিদ ছিলেন তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার দেহরক্ষী। অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন হামলার সময়। শেখ হাসিনাকে রক্ষায় নিজের জীবন বাজি রাখেন। পরিবারের সে সময়কার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মাহবুব। ছেলেকে হারিয়ে তখন অনেকটা অন্ধকারে পড়েন বৃদ্ধ পিতা হারুন-অর রশীদ ও মা হাসিনা বেগম।

তবে মাহবুবকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই পিতা হারুন-অর-রশিদ ও মা হাসিনা বেগমের।

বয়সের ভারে দুইজনই এখন নুয়ে পড়েছেন। অসুস্থ থাকেন প্রায়ই। তারপরও আগস্ট মাস আসলে ছেলের কথা ভাবেন সবসময়। সে সময়কার কথা ভেবে রোমাঞ্চিত হন এই মা-বাবা।

মাহবুবের পিতা হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘মাহবুব শেখ হাসিনার দেহরক্ষী হিসেবে চাকরি করতেন, এটা আমাদের পরিবারের জন্য গর্বের বিষয় ছিল। শেখ পরিবারের প্রতি আমাদের সবার আলাদা দুর্বলতা ছিল। ছেলে শেখ হাসিনার জন্য জীবন দিয়েছেন তাতে আমাদের কোনো আক্ষেপ নেই। আমরা এ জন্য গর্বিত। মাহবুব জীবন দিয়ে সবার মাঝে অমর হয়ে আছেন।’

তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই মাহবুব ছিলেন খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে। কোনোদিন কারো সাথে কোনো ধরনের কথা-কাটাকাটিও হয়নি। এলাকার সকলের প্রিয় পাত্র ছিলেন তিনি। অভাব আর অনটনের মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন। অনেক কষ্ট করেছেন জীবনে। পরিবারের সবার জন্য তিনি অনেক কিছু করতে চেয়েছিলেন। কষ্টের মাঝেও সবার দেখাশোনা করতেন। পরিবারের চাহিদা মেটাতেন। ঢাকায় থেকে সার্বক্ষণিক বাবা-মায়ের খোঁজ রাখতেন।

হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘মাহবুব আমার সন্তান ছিল, এ কথা ভাবতে আমার বুকটা গর্বে ভরে যায়। আমি এমন এক সন্তানের পিতা যে তার নিজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে।’

 



চাকরিকালীন কথা মনে করে এই বৃদ্ধ পিতা বলেন, ‘মাহবুবের আয়ে সংসার চলত। মাহবুব যখন মারা যায় তখন তার সন্তান ছোট ছিল। এ ছাড়াও তার অন্য ভাই-বোনেরাও তখন ছোট ছোট। পরিবারের সবার খোঁজ রাখতেন মাহবুব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাহবুবের স্ত্রী, দুই ছেলে ও আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সবার খোঁজখবর রাখেন। শুধু তিনি নন, স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ প্রশাসনের লোকজনও সহযোগিতা করেন।’

মাহবুবের পিতার আক্ষেপ অন্যখানে। ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের কঠিন বিচার দেখে যেতে চান তিনি।

হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘মাহবুবসহ যারা সেই দিন নিহত হয়েছেন তাদের হত্যাকারীদের কঠিন সাজা হওয়া দরকার। ছেলের ঘাতকদের ফাঁসি দেখে যেতে পারলে শান্তি পেতাম।’

শুধু মাহবুবের পরিবারই নয়, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামের সবাই গর্বিত। মাহবুবকে নিয়ে তারা গর্ব করেন।

এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট আকরাম হোসেন দুলাল বলেন, ‘মাহবুব জীবিত থাকতে শুধু পরিবারেরই নয়, এলাকার সবার খোঁজখবর রাখতেন। তিনি এলাকার মানুষের মাঝে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’

মাহবুবের পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘মাহবুবের বড় ছেলে প্রকৌশল ও ছোট ছেলে চিকিৎসা বিদ্যায় পড়ালেখা করছে। দুই ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী ঢাকায় থাকেন। ছেলেরা খুবই মেধাবী। তারা লেখাপড়া শিখে ভালো চাকরি পেলে মাহবুবের স্বপ্ন পূরণ হবে। মাহবুব চাইতেন তারা ছেলেরাও লেখাপড়া করে ভালো চাকরি করবে। দেশের জন্য কাজ করবে।’



রাইজিংবিডি/কুষ্টিয়া/২১ আগস্ট ২০১৮/কাঞ্চন কুমার/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়